শ্যামনগরে কৃষকলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা: স্ত্রীর দাবী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান গাজী ও তার দলবল তার স্বামীকে খুন করেছে

 শ্যামনগর প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে মোঃ আবুল কাশেম কাগুচী (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুবৃর্ত্তরা। বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের খোলপেটুয়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে শ্যামনগর থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে সাতক্ষীরা মর্গে পাঠিয়েছে।

আবুল কাশেম একই গ্রামের মৃত নেছার কাগুচীর ছেলে। তিনি গাবুরা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড কৃষকলীগের সভাপতি ছিলেন। পুর্ব বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা কাশেমকে হত্যা করেছে বলে দাবি নিহতের পরিবারের।

পুলিশ ও নিহতের পরিবার সুত্রে জানা যায় স্ত্রীকে নিয়ে আবুল কাশেম বৃহস্পতিবার রাতে ডিঙি নৌকা করে নিজস্ব চিংড়ি ঘের ঘুরে দেখছিলেন। একপর্যায়ে রাত একটার দিকে সাত/আট জন অপরিচিত ব্যক্তি আকস্মিক সেখানে উপস্থিত হয়ে ধারালো দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে আবুল কাশেমকে। এসময় তার স্ত্রী’কে পাশে নিয়ে হাত-পা ও মুখ বেঁধে আটকে রেখে ধারালো বল্লভ দিয়ে আঘাত করে শরীর থেকে আবুল কাশেমের একটি হাত বিচ্ছিন্ন করে ফেলে দুবৃর্ত্তরা। মাত্র ১০/১২ মিনিটের মধ্যে ‘কিলিং মিশন’ শেষ করে দুবৃর্ত্তরা ঘটনাস্থল ছেড়ে যাওয়ার নিহতের স্ত্রী’র ডাক-চিৎকারে স্থানীয় এগিয়ে এসে পুলিশকে খবর দেয়।

নিহত আবুল কাশেমের স্ত্রী ফিরোজা বেগম জানান, চিংড়ি ঘের নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে গাবুরা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান গাজী ও শফিকুল হত্যা মামলার আসামীরা তার স্বামী আবুল কাশেমকে গত কয়েক বছরে তিনবার হত্যার চেষ্টা করে। বৃহষ্পতিবার রাত ১১টার দিকে তিনি ও তার স্বামী আবুল কাশেম বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে ঘেরে পাতা আটল থেকে মাছ ঝাড়তে যান। তারা আটল ঝাড়ার জন্য নৌকায় উঠলে লোকমান, মুছা, ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি কয়েকটি হত্যা মামলার আসামি শোকর আলী, আবু সাঈদ, আনিসুর, সালাউদ্দিন, সেকেন্দার, সুমনসহ কয়েকজন তাকে (ফিরোজা) ঘেরের মধ্যে মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত ডিঙি নৌকায় হাত, পা, চোখ ও মুখ বেঁধে ফেলে রাখে। পরে তার স্বামীকে নৌকা থেকে নামিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে ঘেরের পানিতে পুঁতে ফেলে।

গাবুরা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য হাবিবুল্লাহ বাহার জানান, জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে তার চাচাত ভাই শফিকুলকে ২০১৫ সালে ঘেরের মধ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর থেকে তাদের ২৫ বিঘা জমি লীজ নিয়ে আবুল কাশেম ২০১৫ সাল থেকে মাছ চাষ করে আসছিল। ওই জমির একাংশ লোকমান গাজী, মুছা গাজীসহ কয়েকজন দাবি করে দখলের চেষ্টার করে আসছিল।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে আবুল কাশেমের মালিকানাধীন ঐ চিংড়িঘের নিয়ে স্থানীয় লোকমান গ্রুপের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এক বছর আগেও আবুল কাশেমকে রাস্তার মধ্যে ফেলে কুপিয়ে হ্যথার চেষ্টা করা হয়েছিল। এর প্রায় চার বছর আগে আবুল কাশেম গ্রুপের জনৈক সফিকুল ইসলাম প্রতিপক্ষ লোকমান গ্রপের হাতে নিহত হন। নিহত আবুল কাশেম চার ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, চিংড়ি ঘের নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে আবুল কাশেমকে প্রতিপক্ষরা হত্যা করেছে বলে নিহতের স্বজনদের অভিযোগ। শুক্রবার ভোরে লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য লাশ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

Check Also

আশাশুনি উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সভাপতি-অধ্যাপক শাহজাহান,সেক্রেটারী বোরহান উদ্দীন মনোনীত এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি প্রতিনিধি।।বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন আশাশুনি উপজেলার দ্বি-বার্ষিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।