মিজানুর রহমান মিজান : সাতক্ষীরার বিনেরপোতাএ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান কলেজের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আবুল হোসেন মো: মকছুদুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সরদার রমেশ চন্দ্রের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ ও অপসারণের দাবী জানিয়েছে লাবসা ইউনয়ন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দসহ অভিভাবকরা। শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের আব্দুল মোতালেব মিলনয়তনে এক জনার্কীন সংবদা সন্মেলনে লিখিত বক্তব্যে লাবসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান সজল ও ইউনিয়ন জাতীয়পার্টির সাধারন সম্পাদক মো:আব্দুর রউফ বাবু। লিখিত অভিযোগে জানাগেছে ২০১৯ খ্রিঃ থেকে ২০২৪ সালের অদ্যবধি পর্যন্ত একাধিক্রমে পরিচালনা পরিষদে এডহক কমিটির ভাপতি হিসেবে আবুল হোসেন মোঃ মকছুদুর রহমান ৪ বার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষাগত যোগ্যতা বিহীন জীববিজ্ঞান প্রভাষক পদে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে সরদার রমেশ চন্দ্রকে নিয়োগ প্রদান করেন। বর্তমানে ৫ বৎসর যাবত একাধিক্রমে ৪ বার সভাপতির দায়িত্বে থেকে জ্যেষ্ঠতা লংঘন করে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের সংবিধি পরিপন্থী ও বিষয় বহির্ভূত শিক্ষাগত যোগ্যতাবিহীন জীববিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপককে দীর্ঘ ৪ বছর ৪ মাস যাবত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে বসিয়ে যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতি অব্যাহতভাবে করে যাচ্ছেন তারা। যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিধি-বিধান ও সংবিধি উপেক্ষা করে দীর্ঘ ৫ বৎসর যাবৎ আর্থিক অনিয়ম, জালিয়াতি, নিয়োগ বাণিজ্য, ব্যাংক জালিয়াতি,
স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে কলেজ প্রতিষ্ঠাকালে কলেজ ব্যাক্তি নামে নামকরণের ১৫,০০,০০০/-(পনের লক্ষ) টাকা ব্যাক্তিগত আত্মসাৎ করেন প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আবুল হোসেন মোঃ মকছুদুর রহমান। নামকরণের শর্ত পূরণ না করে ব্যাক্তি নামে নামকরণ করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে কলেজ প্রতিষ্ঠাকালে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ৩৪ জন শিক্ষক কর্মচারীর নিকট থেকে ২৩,০০,০০০/- (তেইশ লক্ষ) টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আবুল হোসেন মোঃ মকছুদুর রহমান। কলেজটি প্রতিষ্ঠাকালিন ব্যাক্তি আবুল হোসেন মোঃ
মকছুদুর রহমান কলেজের জমি কবলা দলিল মূলে দাতা-গ্রহীতা হয়েছেন। সে সময় জমির মূল্য নগদ ১২,০০,০০০/-(বার লক্ষ) টাকা দেখানো হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুদানের টাকায় জমি ক্রয় করে একই ব্যাক্তি দাতা-গ্রহীতা নাটক সাজিয়ে কলেজের নামে জমি রেজিষ্ট্রি করা হলেও অদ্যবদি উক্ত দলিল অদ্যাবধি কলেজে হস্তান্তর করা হয় নি।
অভিযোগ উঠেছে ২০১৯ সালে গভর্নিং বডি গঠনকালে গভর্নিং বডির দাতা ও হিতৈষী প্রতিনিধি নির্বাচনের সময়ে ৩,৫০,০০০/-(তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার)টাকা বর্তমান সভাপতি আবুল হোসেন মোঃ মকছুদুর রহমান ও সদস্য সচিব সরদার রমেশ চন্দ্রের যোগসাজসে অনিয়ম ও লুটপাট করেছেন। অন্যদিকে আবুল হোসেন মোঃ মকছুদুর রহমান ও তার ভাইয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অন্তর্ভূক্তির ২০,০০,০০০/-(বিশ লক্ষ) টাকা না দিয়ে অবৈধ পন্থায় প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান সভাপতি আবুল হোসেন মোঃ মকছুদুর রহমান প্রতিষ্ঠাকালীন ১ বার সহ এযাবৎ একাধিক্রমে ৫বার বিধি বহির্ভূত অনৈতিকভাবে বার বার সভাপতি মনোনীত হয়ে যশোর
শিক্ষাবোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিধি-বিধান সংবিধি
উপেক্ষা করে দীর্ঘ ২৪ বছর যাবৎ আর্থিক অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে ৭১,৫০,০০০/- (একাত্তর লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা আর্থিক অনিয়ম করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে বহাল তবিয়তে আছেন।
অভিযোগ উঠেছে কলেজের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ যোগ সাজশে আর্থিক লুটপাট ও অনিয়মের পাশাপাশি হামলা-মামলার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে মুসলিম-অমুসলিম শিক্ষক-কর্মচারী গ্রুপিং করে মুসলিম শিক্ষক কর্মচারীদের কোণঠাসা করে রেখেছে।একই সাথে ৫ বছর যাবৎ কলেজের চিরাচরিত প্রচলিত শিক্ষক মিলনায়তন বন্ধ করে ২/৩ জন করে শিক্ষককে পৃথক পৃথক কক্ষে বিশেষ অবস্থানের ব্যবস্থা করে মানসিক নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় বিধিবহির্ভূত যোগ্যতাবিহীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দ্বারা ৪ বৎসর ৪ মাস যাবৎ দখল করে রেখে কলেজ পরিচালনা করছে। এদিকে গভর্নিং বডির সভাপতি আবুল হোসেন মোঃ মকছুদুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সরদার রমেশ চন্দ্র গভর্নিং বডির
সদস্যদের যোগসাজশে অতি সম্প্রতি জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় অনুমতি ব্যাতিত অত্যন্ত গোপনীয়তায় ২ জন ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারীর অবৈধ নিয়োগে
৩০,০০,০০০/-(ত্রিশ লক্ষ) টাকা আর্থিক দুর্নীতি করেছে। সংবাদ সন্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছে, গভর্নিং বডির সভাপতি আবুল হোসেন মোঃ মকছুদুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সরদার রমেশ চন্দ্র ২০২৩ সালে জাল জালিয়াতের মাধ্যমে ব্যাকডেটে (২০০৫-২০০৬ খ্রিঃ এনটিআরসি চালুর পূর্ববর্তী সময় দেখিয়ে) ২২ জনের অধিক প্রভাষক-কর্মচারীর অবৈধ নিয়োগ দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে হিন্দু ধর্মবলম্বী-১৫ জন, মুসলিম ৭ জন। এ নিয়োগ বানিজ্যের মাধ্যমে কমপক্ষে ২,০০,০০,০০০/-(দুই কোটি) টাকা আত্মসাতকরেছেন।অতি সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিটে নতুন শিক্ষক সমিতির ননএমপিও শিক্ষক সুশান্ত মন্ডল অডিটের নামে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিকট ২৫,০০,০০০/-(পঁচিশ লক্ষ) টাকা চাঁদা দাবি করেছে। ইতোমধ্যে ৫,০০,০০০/-(পাঁচ লক্ষ) টাকা চাঁদা কালেকশন হয়েছে। সদ্য সাবেক এমপির অনুসারী নন এমপিও শিক্ষক
সুশান্ত মন্ডল গং এরকমভাবে দীর্ঘ ৫ বৎসর যাবত বিভিন্ন নামে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জোর জরবদস্তি করে চাঁদা নিচ্ছেন এমন অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ করা হয়েছে কলেজের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আবুল হোসেন মোঃ মকছুদুর রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠাকালে ১০,০০,০০০/-(দশ লক্ষ) টাকা অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে ৮ জন জনবলের সরকারী বিধি বহির্ভূত শিক্ষাগত যোগ্যতাবিহীন, নিয়োগ নির্বাচনী পরিক্ষায় প্রতিযোগিতাবিহীন ভূয়া নিয়োগের ভিত্তিতে অবৈধ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৮ জনের মধ্যে ৪ জনউচ্চমাধ্যমিক স্তরে এমপিওভূক্তি হয়ে ১,৩৭,০০,০০০/-(এক কোটি সাইত্রিশ লক্ষ) টাকা রাষ্ট্রীয় অর্থ উত্তোলন করে অদ্যবধি আত্মসাৎ করেছে। এবং স্নাতক স্তরের ৪ জনকে অবৈধ নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদেরকে অবৈধ উপায়ে এমপিওভূক্তির চেষ্টা অব্যাহত আছে। সকল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৯ খ্রিঃ কলেজের সিনিয়র জ্যেষ্ঠ ইংরেজি সহকারী অধ্যাপক মোঃ আব্দুল মজিদকে ভীতি প্রদর্শন ও মামলার ভয়
দেখিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব পালনের অপারগতা পত্রে সহি স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়। এছাড়া ২০১৯ খ্রিঃ এডহক কমিটির সভাপতি আবুল হোসেন মোঃ মকছুদুর রহমান কর্তৃক সংবিধি বহির্ভূত জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে দায়িত্ব প্রদানকৃত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ-১ মোঃ শামিম-উল-আলম গত ০৬/০৪/২০১৯খ্রিঃ তারিখ থেকে ২৪/০২/২০২০খ্রিঃ তারিখ পর্যন্ত ১০ মাস ১৭ দিন দায়িত্ব পালন করে। গভর্নিং বডির সভাপতি দ্বিতীয়বার জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ-২ সরদার রমেশ চন্দ্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকুরীর শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯ এর ধারা ৪ (ক) ২.(র) (রর), পরিপন্থী দায়িত্ব অর্পণ ও গ্রহণ করে ২৪/০২/২০২০খ্রিঃ থেকে ২৫/০৬/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ পর্যন্ত অদ্যাবধি ৪ বছর ৪ মাস ১ দিন দায়িত্ব পালন করছে। দুইজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অজ্ঞাতসারে ২দফায় ৫ বছর ২ মাস ১৮ দিনের অধিক অবৈধ দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ-২ সরদার
রমেশ চন্দ্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ১০টি বিষয়ের কোনো শিক্ষক নন। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের জীববিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক। ২০০০ খ্রিঃ কলেজ কর্তৃক পত্রিকায় প্রকাশিত ও ১৯৯৫ জনবল কাঠামো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নিয়োগকালে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের জীববিজ্ঞান প্রভাষক পদে আবেদনের যোগ্যতাহীন ও নিয়োগের শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন ছিল না। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের জীববিজ্ঞান বিষয়ে প্রভাষক পদে চাকুরীর আবেদনকারী অপর দুই প্রার্থী জীববিজ্ঞান প্রভাষক পদে আবেদনের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন ছিলেন না।
সংবাদ সন্মেলনে সাতক্ষীরা সংসদীয় সদর আসনের সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশুসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করা হয়েছে।