ছয় বছর পর যশোর জেলা শ্রমিক লীগের সম্মেলন হওয়ার কথা রয়ােছে আজ (শনিবার)। সম্মেলন ঘিরে শ্রমিক লীগের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। একই সময়ে শ্রমিক লীগের দুই গ্রুপ পৃথক সম্মেলন আহ্বান করেছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক সমর্থিত গ্রুপ সম্মেলন ডেকেছে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে। অন্যদিকে, যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারীরা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শহরের পৌর কমিউনিটি সেন্টারে জেলা শ্রমিক লীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন পালটা সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
দুটি সম্মেলনেই সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। জেলা শ্রমিক লীগের দু’পক্ষের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। তবে, শেষ অবধি কী হয় সেটি দেখার অপেক্ষায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী।
জানা গেছে, গত ৭ জুলাই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সম্পাদকের সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৩ জুলাই সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলন করে এই সম্মেলন সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র পরিপন্থি দাবি তুলে বন্ধের দাবি জানিয়েছিলেন যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ অনুসারী জেলা শ্রমিক লীগের একাংশের নেতারা।
আর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের পক্ষের নেতাকর্মীরা এই সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে প্রচারণা শুরু করেন। শহরের বিভিন্ন স্থানে ফেস্টুন ও ব্যানার টাঙিয়ে পদপ্রত্যাশীরা জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের তোরণ নির্মাণও করেছেন।
নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। অন্যটি সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। জেলা আওয়ামী লীগের গ্রুপিংয়ের কারণে জেলা শ্রমিক লীগেও নেতৃত্বের গ্রুপিং রয়েছে। গ্রুপিং- দ্বন্দ্বের জেরে জেলা শ্রমিক লীগে দুইজন সভাপতি ও একজন সাধারণ সম্পাদক। জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি আজিজুর রহমানের মৃত্যুর পর এ পদ নিয়ে শুরু হয় টানাটানি।
দুইপক্ষই দুটি সহসভাপতি জবেদ আলী ও সাইফুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোনীত করেন। জবেদ আলী কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী ও সাইফুর রহমান শাহীন চাকলাদারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আর সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন শাহীনের সঙ্গে রাজনীতি করলেও বর্তমানে নাবিলের সঙ্গে রাজনীতি করছেন। ফলে সম্মেলনকে ঘিরে শ্রমিক লীগের গ্রুপিং আরও প্রকট হয়েছে। এই গ্রুপিং দ্বন্দ্বের জেরে শ্রমিক লীগের দু’গ্রুপ পৃথক সম্মেলন আহ্বান করেছে।
শনিবার বিকাল তিনটায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সমর্থিত গ্রুপ সম্মেলন ডেকেছে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে। এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নান ও প্রধান বক্তা হিসেবে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কে এম আযম খসরু উপস্থিত থাকবেন বলে কয়েকদিন ধরে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার।
অপরদিকে, শুক্রবার রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেলা শ্রমিক লীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন শনিবার পালটা সম্মেলন হবে বলে জানিয়েছেন। শনিবার স্থানীয় পৌর কমিউনিটি সেন্টারে বিকেল ৩টায় জেলা শ্রমিক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি তোফায়েল আহমেদ উপস্থিত থাকবেন।
জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন বলেন, জেলা শ্রমিক লীগের একটি অংশ হঠাৎ করেই সম্মেলন আহ্বান করেছে। আমার কাছে কোন প্রকার চিঠি আসেনি এবং কেন্দ্রের কোনো নির্দেশনাও আমি পাইনি। জোর করে একটি পক্ষ সম্মেলন করছে। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের দারস্ত হলে পালটা সম্মেলনের আয়োজন করতে বলেছে। এই সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির এক সহ সভাপতি ও কয়েকজন নেতারা থাকবেন।
শাহীন অনুসারী শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুর ইসলাম বলেন, ‘এই সম্মেলনকে স্বাগত জানায়। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সম্পাদক জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সম্পাদক আমাদের সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। তার বিপরীতে অবস্থান নিয়ে কেউ পাল্টা সম্মেলনের আয়োজন বোকামি ছাড়া কিছুই না। আমরা চাই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব দিয়ে যাবেন। এই বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ও স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ ফোন রিসিভ করেনি।
তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘দীর্ঘদিন সম্মেলন হয় না। কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। উৎসবের মধ্যে দিয়ে সম্মেলন শনিবার হবে। এই সম্মেলন কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে হচ্ছে। জিলা পরিষদে আয়োজিত সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সম্পাদক উপস্থিত হয়ে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করবেন। কারোও ব্যক্তিগত সম্মেলন বিবেচ্য হবে না। সেটি কেন্দ্রীয় কমিটিও মেনে নিবে না।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এক যুগ পর জেলা শ্রমিক লীগের ত্রি বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।