বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার উন্নয়নের যিকির তুলে এদেশের মানুষের বাক স্বাধীনতাকে হরণ করেছে। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকারকে কেড়ে নিয়েছে। আজ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলাম ও নৈতিকতাকে সরিয়ে দিয়ে এদেশের ছাত্র সমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করা হচ্ছে। শিক্ষিত তরুণ যুবকেরা শহরে ঘুরে ঘুরে চাকরী না পেয়ে বেকারত্বের যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে। অথচ কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের মাধ্যমে মেধাবীদের বঞ্চিত করে দলীয় কর্মীদের নিয়োগ চূড়ান্ত করার চক্রান্ত করছে। বেকারত্ব দূর করতে না পারা ও মেধাবীদের মূল্যায়ন করতে না পারার ব্যর্থতা সরকারের। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে দেশের ক্ষমতার মসনদে বসে থেকে উন্নয়নের জিকির তোলা আওয়ামী লীগ সরকারকে এর জবাব দিতে হবে। বর্তমান সরকার দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী চুক্তি ও সমঝোতার মাধ্যমে দেশকে রাহুগ্রাসে পরিণত করতে চাচ্ছে এবং দলীয় লোকদের দ্বারা লাগামহীন দুনীর্তি ও লুটপাটের মাধ্যমে দেশকে অচল করে দিচ্ছে। মূলত এই স্বৈরাচারী সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই এদেশের জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। ইতিহাস সাক্ষী অতীতে কোনো স্বৈরাচার সরকার জুলুম নির্যাতন চালিয়ে পার পায়নি, এ সরকারও পাবেন না ইনশাআল্লাহ।
জামায়াতের কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে আমাদের সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ব্যবহারিক জীবন অন্যের কাছে অনুকরণীয় হতে হবে। সমাজের মানুষের কাছে জামায়াতে ইসলামীর একজন কর্মী হিসেবে আচার—ব্যবহার মাধুর্য্যপূর্ণ হতে হবে। অনাচার পাপাচারে ভরা জাহেলী জনগোষ্ঠীর সামনে প্রিয় রাসূল (সা) চারিত্রিক মাধুর্য্যতা দিয়ে তাদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকেও তেমন চারিত্রিক গুণাবলীর অধিকারী হতে হবে। একটি প্রতিষ্ঠিত জাহেলিয়াতকে উৎখাত করে এই জমিনে মহান আল্লাহ তায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আমাদের কাজ হচ্ছে নিজের জান—মালের কুরবানী পেশ করে ইসলামী আন্দোলনের সত্যিকার কর্মী হওয়া। প্রতিষ্ঠিত জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম করছি। একাজ সহজ নয়, সকল যুগেই ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ছিলো একথা সত্য। বাংলাদেশেও জামায়াতে ইসলামী কোনো ফাঁকা মাঠে গোল দেবার চিন্তা করে না। রাজনৈতিক পরিসরে এখানেও আমাদের শক্ত প্রতিপক্ষ রয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের ইহিতাস পড়ে আমরা জেনেছি, যুগে যুগে নবী রাসূল আম্বিয়ায়ে কেরামগণ তাদের সময়ে শক্ত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই ইকামাতে দ্বীনের বিজয় নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। এখানে আমরা আল্লাহ তায়ালার দ্বীন কায়েমের স্বপ্ন দেখি। এখানকার মাঠ পরিচ্ছন্ন করেই আমাদেরকে ইসলামী আদর্শকে বিজয়ী করতে হবে। এখানে মুসলিম সমাজে শিরক, নাস্তিক্যবাদ ও মানবরচিত যত মতবাদ রয়েছে তার বিরুদ্ধে আমরা গুটি কয়েক মানুষ আল্লাহর গোলাম হিসেবে লড়াই সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছি। পুরো শিকড় সহ আমরা এই জাহেলিয়াতের মূলোৎপাটন করতে চাই। পরবর্তীতে এই সমাজ পরিচালনায় কুরআন ও সুন্নাহকে সর্বত্র চালু রাখার ব্যবস্থা করতে চাই। মহান আল্লাহ তার কিতাব দিয়েই সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন। মানুষের জীবনের প্রকৃত কল্যাণ ও সফলতার দিকনির্দেশনা এখানে রয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের উদ্যোগে জুমাবার দিনব্যাপি বাছাইকৃত কর্মীদের নিয়ে শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের পরিচালনায় এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের ব্যবস্থাপনায় শিক্ষাশিবিরে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ আব্দুর রব ও অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন ও ড. আব্দুল মান্নান। আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি কামাল হোসাইন সহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
প্রধান অতিথি আরও বলেন, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) যে আদর্শের মাধ্যমে তার সাথীদেরকে উন্নত নৈতিকতায় সমৃদ্ধ করে একটি সোনার রাষ্ট্র তৈরী করেছিলেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও সেই আদর্শকে ধারণ করে এদেশে একদল মানুষকে সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। আজ এদেশের জনগণ নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তনে সত্যিকার নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে দেখতে চায়। তারা জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বকে গ্রহণ করতে ব্যাকুল হয়ে আছে। দেশে যদি নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে দেশের অধিকাংশ মানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে ইনশাআল্লাহ। তিনি জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের গণমুখী কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে সমাজের মানুষের সেবা অব্যাহত রাখার আহবান জানান।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি সফল ইসলামী সমাজ বিনির্মানের স্বপ্ন দেখে। এদেশের সবুজ জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে সমুন্নত করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এজন্য পরিকল্পিতভাবে দাওয়াতী কাজ করার মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সকল মানুষের কাছে ইসলামী অনুশাসনের আহবান পৌঁছিয়ে দিতে হবে। সংগঠনের দেওয়া পরিকল্পনা ভালোভাবে পড়ে বুঝে সেই মাফিক ময়দান পরিচালনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজ ভালোভাবে করা যায় না। এদেশের মানুষের মৌলিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে। একইসাথে জামায়াত সবসময় জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে। জেল জুলুম, মামলা হামলা, নির্যাতন ও হত্যার ভয় দেখিয়ে জামায়াতকে দমিয়ে রাখা যাবে না। আগামী দিনে যেকোনো নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে সকল বাঁধা উপক্ষো করে অগ্রসর হতে হবে। সেইসাথে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের সমাজের মানুষের বিপদে আপদে পাশে থেকে মানবতার সেবা করতে হবে।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমাদের আজকের এই দিনব্যাপি শিক্ষাশিবির যেন পরোকালিন নাজাতের মাধ্যম হয়। আমরা সমাজের সকল সেক্টরে সৎ, যোগ্য ও দক্ষ লোক তৈরী করতে চাই। জামায়াত কর্মী মানেই সমাজকর্মী ফলে সামাজিক কাজের মাধ্যমে মানুষের ঘরে ঘরে ইসলামের সুমহান দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। সামাজিক নেতৃত্ব তৈরী করতে হবে। তালিমুল কুরআনের মাধ্যমে সমাজের সকল মানুষের কাছে কোরআনের শিক্ষাকে তুলে ধরতে হবে। সংগঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কর্মীদের মাঠে ময়দানে ছড়িয়ে পড়তে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাহায্য কামনা করতে হবে। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার হরণ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় দেশের জনগণ তাদের সকল অধিকার থেকেই বঞ্চিত। তিনি এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায় ও জনগণের ন্যায়সঙ্গত সকল অধিকার আদায়ের আন্দোলনে কর্মীদের সর্বোচ্চ ভূমিকা পালনের আহবান জানান।
অধ্যক্ষ আব্দুর রব বলেন, সংগঠনের রুকন (সদস্য) মানে হচ্ছে আল্লাহর সাথে করা বেচা—কেনার চুক্তি মৃত্যু পর্যন্ত লালন কর। একইসাথে নিজের জীবনের সবকিছু আল্লাহর কাছে বিলীন করে দিয়ে সব ধরনের পরীক্ষাকে নিজের জীবনের পরীক্ষা হিসেবেই গ্রহণ করা। তিনি সকলকে রুকনিয়াতের শপথ নিয়ে সেই আলোকে জীবন যাপন করে এই সমাজের পথহারা মানুষদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়ার জন্য আহ্বান জানান।
অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ বলেন, প্রিয় কর্মী ভাইয়েরা, সবকিছুর উপরে অগ্রাধিকার দিয়ে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা কি আমাদের জীবনের সবকিছু কুরবানি করতে পেরেছি? তিনি বলেন, আমাদের এই আন্দোলনে শরিক হওয়ার উদ্দেশ্য তো একটাই, আমরা জাহান্নামের কঠিন আগুন থেকে বাঁচতে চাই। তিনি কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আমরা হন্যে হয়ে জান্নাতের পথ খুঁজছিলাম, আর জামায়াতে ইসলামীর মাধ্যমে আমরা সেই জান্নাতের পথের সন্ধান দিয়েছি। জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য শুধু শপথ নিলেই হবে না, আমাদেরকে সেই আলোকে কাজ করতে হবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীর কাজই হচ্ছে আল্লাহর বিধান মানা। এটা ঈমানের প্রথম দাবি। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী অন্যায় ও জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ— প্রতিরোধ গড়ে তোলা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এদেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের দুর্গ। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা জীবন দিয়ে হলেও সেই দুর্গকে রক্ষা করবে। এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দেয়া কোনভাবেই তারা সহ্য করবে না। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী আমাদের দেশের জন্য রহমত। ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে সেই রহমত পেয়েছি আমরা। আল্লাহ তায়ালা দয়া করেছেন, এরকম একটা অটোমেটিক প্ল্যাটফর্ম এদেশের মানুষ ও মুসলিম হিসেবে আমরা পেয়েছি। এই আন্দোলন সংগঠন যারা করে গেছেন, রাহাবার ছিলেন মহান আল্লাহ তাদের সকলকে জান্নাতে কবুল করুন।