‘সরকার দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে’

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার দলীয় সার্থে ভারতকে একের পর এক সমুদ্র বন্দর করিডোর, স্থল বন্দর করিডোর, নদী বন্দর করিডোর এবং সর্বশেষ রেললাইন করিডোর দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।

আজ ১৩ জুলাই, শনিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের উদ্যোগে “ভারতের সাথে অসম চুক্তি-বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের উপর হুমকি” শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ এই মন্তব্য করেন।

বক্তারা বলেন, এতকিছু দেয়ার পরও গত একযুগে সীমান্তে ভারতের বিএসএফের হাতে ১ হাজার ২৭৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। ভারত আমাদের উপরে পানি আগ্রাসন চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভারতের সাথে ১২০টি গোলামীর চুক্তি করেছে। এইসব চুক্তির মাধ্যমে ভারত লাভবান হচ্ছে কিন্তু আমাদের দেশের জনগণের কোনো লাভ হচ্ছে না।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে দেশকে অকার্যকর ও ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি করেছে। এক এগারো করা হয়েছিল মাইনাস ওয়ান ফর্মুলার জন্য। মাইনাস ওয়ানের প্রধান টার্গেট ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। শহীদ জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্রকে বাংলাদেশে পূনরায়  প্রতিষ্ঠার কারনে গণতান্ত্রিক পরিবেশের সুফল যখন জনগণ ভোগ করছিলো, তাকে নস্যাৎ করাই ছিল প্রতিবেশী দেশের মূল লক্ষ্য। মিডিয়ার মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ রাঘব বোয়ালদের পরিচয় উন্মোচিত হওয়ার পরেও আইনের মুখোমুখি না করে নিরবে দেশত্যাগ করতে সাহায্য করছে বর্তমান সরকার। পানি নিষ্কাশনের জন্য ৭০০ কোটি টাকার বাজেট পাওয়ার পরেও ঢাকা শহর এখন জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। সিটি করপোরেশনের নেই কোন দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা। সরকার জঙ্গি নাটক নিয়ে ব্যস্ত কিন্তু কিশোর গ্যাং ঠেকাতে কোন পদক্ষেপ নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক বন্ধু ভারতের বিএসএফ প্রায়ই সীমান্তে আমাদের নাগরিকদের হত্যা করছে। সীমান্ত জুড়ে মাদকের কারণে বাংলাদেশের যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে। দেশজুড়ে মাদকের ভয়াবহতা। দুদক অভিযুক্ত করেই শেষ, নেই কোন ফলপ্রসু পদক্ষেপ। সরকার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে ফেলেছে। দেশে যখন যুবকরা বেকারত্বে অভিশাপ নিয়ে ঘুরছে, তখন অবৈধ ভারতীয়দের চাকরির বিরুদ্ধে সরকার চুপ। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তরুণ প্রজন্মকে সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণ আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় পায় না, তাদেরকে ভারতের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হলেই এই সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে। স্বৈরাচারী আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদেরকে ভারতের আগ্রাসনে বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদ ড. এডভোকেট মো হেলাল উদ্দিন বলেন, ভারতের সাথে যে দশটি চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে তা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কে হুমকীর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে।  বিগত তিনবারের অবৈধ ক্ষমতাসীন হয়েও ভারত ও বিদেশি দেশগুলোর সাথে করা চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক নিয়ে সংসদ ও জনগনের কাছে প্রকাশ করতে পারেনি। যা সংবিধান পরিপন্থী।  বর্তমান আওয়ামী সংসদ সদস্যরাও ক্ষমতা ও দুর্নীতির স্বার্থে সংসদে এই বিষয়ে কোন প্রস্তাবনা তুলেনি। আমলাদেরকে অতিরিক্ত  সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নিরব দর্শক করে রাখা হয়েছে। চলমান কোটা বাতিল আন্দোলনের প্রতি আমাদের সমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করছি। বর্তমান জুলুমবাজ ও অবৈধ সরকারকে হটানোর জন্য বিরোধী দল ও সচেতন জনগনকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে আন্দোলন করার জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারের উদাত্ত আহ্বান জানান।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির মাধ্যমে বিদেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা। সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মাধ্যমে বিরোধী নেতাদের হত্যা করতে চায়। বাংলাদেশকে পঙ্গু রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে পরাধীন করতে চায়।

সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বিলকিস ইসলাম বলেন, সরকার দেশ ও দেশের জনগণকে হতাশাগ্রস্ত করে রেখেছে। চুক্তি অনুযায়ী হিস্যার পানি না পেলেও বাঁধ খুলে দিয়ে দেশের উত্তর অঞ্চলকে পরিকল্পিতভাবে পানিবন্দি করে রেখেছে।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের মহাসচিব ও পেশাজীবি আন্দোলনের সদস্য সচিব জনাব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশকে জল, স্থল ও রেলপথের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের বুক চিরে এপার ওপার চলাচলের ব্যবস্থা করেছে। যাদের সাথে তাদের সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী কোন বন্ধু রাষ্ট্রের সুসম্পর্ক নেই। ভারতের আগ্রাসী শাসনের ফলে নেপাল ও ভুটানের মত দেশের জনগণ তাদের দেশ থেকে ভারতীয় তাবেদার কে হটিয়ে মাথা উচু করে দাঁড়াচ্ছে। বর্তমানে সরকারি দলের নেতা কর্মীরাও ভারতে দাদাগিরিকে মেনে নিতে পারছে না। ২৮ বছরেও গঙ্গা চুক্তির হিস্ব্যা অনুযায়ী কোন কিছুই বাংলাদেশ পায়নি। ভারত পরিকল্পিতভাবে আসাম ও মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে লোক ঢুকাচ্ছে। কিন্তু সরকার এবিষয়ে কোন আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করছে না।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, জনগণকে অন্ধকারে রেখে চুক্তি ও সমঝোতা করছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার। আপনারা জানেন বিশ্বব্যাপী যারা গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তারাই রাষ্ট্র কে শাসন করতে পারে। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেশকে শাসন করে চলছে। দৈনিক আমার দেশ ও দিগন্ত টেলিভিশনকে বন্ধ করে গণমাধ্যমকে ভারত বিরোধিতার কারণে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। দেশের বুক চিরে রেল করিডোরের নামে ভারতকে আমাদের ভূখন্ড ব্যবহারে বাধা দিতে বুকে রক্ত ঢেলে দিতে হবে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রো ভিসি জনাব দেওয়ান সাজ্জাদ বলেন, আজ বাংলাদেশ সার্বভৌমত্ব হারাতে বসেছে, মানুষের ভোটের অধিকার নাই, মানবাধিকার নাই, বাক-স্বাধীনতা নাই, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নাই।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট ইউসুফ আলী বলেন, কোটা আন্দোলনকারীদের থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত আন্দোলনকে কিভাবে সফল করতে হয়। পাশাপাশি ছাত্ররা যেভাবে সমগ্র বাংলাদেশে তাদের দাবির পক্ষে জনসমর্থন সৃষ্টি  করেছে তা থেকে বিরোধী সকল দলকে ভাবতে হবে। বৃটিশরা ওয়াইন এর বিনিময়ে দুটি জাহাজ দিয়ে ২০০ বছর ভারতকে গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ করেছে। বর্তমান আওয়ামী সরকার বিদেশি রাষ্টের সাথে চুক্তি করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে পারলেও জনগনের ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট পারভেজ হোসেন বলেন, ভারতকে একচেটিয়া সুবিধা দেয়ার কারণে চীন থেকে শেখ হাসিনা খালি হাতে ফিরে এসেছেন।  এখন প্রয়োজন বিরোধী জোটের কূটনৈতিক উপায়ে এই সুবিধা ও সম্পর্ক বৃদ্ধি করা।

ইয়থ ফোরামের নেতা জনাব শাহজাহান মিয়া সম্রাট বলেন, নেহেরু ডকট্রিন বাস্তবায়নের জন্য ভারত অবৈধভাবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে রেখেছে। ফলশ্রুতিতে ভারতে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যে প্রটোকল পাওয়ার কথা তা না পেয়ে তৃতীয় শ্রেণীর মর্যাদা পান। যা বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করছে।

রাষ্ট্রচিন্তক ও ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি এস নাজমুল হাসান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, বর্তমান কোটা আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাই। জনগণকে অন্ধকারে রেখে ভারতের সাথে চুক্তি করছে বর্তমান সরকার। ভারতের কাছে ক্ষমতার দায়বদ্ধতা থেকে ভারতকে আজীবন খুশি রাখতে সবকিছু দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের জন্য কিছুই করছেনা।

Check Also

সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে ১০ বোতল ভারতীয় মদ জব্দ

মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সীমান্তে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ১০ বোতল ভারতীয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।