বেঁচে থেকে অশান্তি, ত্রাণ চাই না রাস্তা চাই, আমরা বাঁচতে চাই

 বেঁচে থেকে অশান্তি, মরেও যেন শান্তি নেই, ত্রাণ চাই না রাস্তা চাই, আমরা বাঁচতে চাই, আমরা স্কুলে যেতে চাই, আমরা বাড়ি থেকে বের হতে চাই।

এমন স্লোগানের প্লাকাট নিয়ে গলাসমান পানিতে নেমে রাস্তার দাবিতে মানববন্ধন করেছে সাতক্ষীরা আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নবাসী।

বিগত ২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পূর্ব নাকনা কুড়িকাহুনিয়া রাস্তাটি জোয়ারের পানিতে ভেঙ্গে গড়ুইমহল খালের সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়। ফলে রাস্তার মাঝখানে তৈরি হয় কৃত্রিম খাল। কিন্তু সড়ক ভাঙার চার বছর পার হলেও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরে স্থানীয় বাসিন্দা সাংবাদিক মিলন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন গড়ুইমহল খালের পাশে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী।

এদিকে, কয়েকটি গ্রামের একমাত্র চলাচলের রাস্তাটি ৪ বছর যাবত অস্তিত্ব সংকটে পড়ে আছে। ফলে  শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অসুস্থ রোগী ও স্থানীয়দের আসা-যাওয়া করতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

মানববন্ধনে স্থানীয় সমাজ কর্মী নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রুপান্তরিত হচ্ছে। তবে উচ্চ পর্যায়ে এই দুর্দশার কথা না পৌঁছানোর কারণে এখানকার মানুষের এই দুরবস্থা।

কুড়িকাহুনিয়া গ্রামের ভবানী বিশ্বাস বলেন, রাস্তার পাশেই আমাদের একটি শ্মশান ঘাট ছিল। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময় রাস্তার সাথে সাথে শ্মশানটিও বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে কেউ মারা গেলে অন্য গ্রামে গিয়ে দাহ করতে হয়। রাস্তা না থাকার কারণে বেচে থেকে অশান্তি, মরেও যেন শান্তি নেই ।

স্থানীয়রা জানান , রাস্তা না থাকায় প্রতাপনগর ইউনিয়নের নাকনা, কুড়িকাহুনিয়া, গোকুলনগর, গোয়ালকাটি, সোনাতনকাটি, শ্রীপুরসহ পার্শ্ববর্তী কয়রা উপজেলার সঙ্গে আশাশুনি উপজেলার সড়কপথের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে   স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা গামী শিক্ষার্থী, অসুস্থ রোগীরা চরম বিপাকে রয়েছে।

কুড়িকাহুনিয়া গ্রামের কামাল গাজী বলেন, আমাদের হাট-বাজার, স্কুল মাদ্রাসা সব রাস্তার ঐপাশে। রাস্তা না থাকায় ছোট ছোট বাচ্চাদের প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয় নৌকা পার হয়ে। ব্যবসা বানিজ্য করার জন্য মালামাল নিয়ে যেতে পারিনা।

স্থানীয় বাসিন্দা মহিনূর গাজী বলেন, এইখানে আমার একমাত্র উপার্জন করার একটা ধানমাড়ায়ের মিল ছিলো। যার অর্থ দিয়ে আমার সংসার চলতো। সেই মিলটা ও এই খালে চলে গেছে। রাস্তা বানানোর জন্য আজ পর্যন্ত কেউ কোনো ব্যবস্থা নিলো না। কবে হবে কেউ বলতে পারে না।

স্থানীয় সংবাদকর্মী মাছুম বিল্লাহ বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিকতার অভাবেই রাস্তাটির এই অবস্থা। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে রাস্তাটির ব্যাপারে অবগত না করার কারণেই এই রাস্তাটি এখনো সংস্কার হয়নি। তিনি রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানান।

এসব বিষয়ে প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু দাউদ ঢালী বলেন, আমার ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডের রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। ছোট ছোট বরাদ্দ দিয়ে অন্য রাস্তার কাজ করে যাচ্ছি। কুড়িকাহুনিয়ার রাস্তাটি ভেঙে বেশি গভীর হয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের বরাদ্দ ছাড়া এই রাস্তা সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। এমপি মহোদয় সহ ডিসি স্যারকে জানানো আছে বরাদ্দ পেলে কাজ করবো।

এসময় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সমাজকর্মী নূরে আলম সিদ্দিকী, সাংবাদিক মাছুম বিল্লাহ, শিক্ষক আলগীর হোসেন, সিরাজুল ইসলাম, মৎস্য ব্যবসায়ী আবুল খায়ের, ভ্যান শ্রমিক রিয়াসাদ আলী, মটরশ্রমিক হাবিবুর রহমান, মৌসানা খাতুন মছু প্রমুখ।

Check Also

আশাশুনিতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ব্যবসা পর্যালোচনা ও কর্মী সভা অনুষ্ঠিত

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান(আশাশুনি)সাতক্ষীরা।।আশাশুনিতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এর ব্যবসা পর্যালোচনা ও কর্মী সভা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।