ছাত্ররা ধৈর্য ধরলে বিএনপি-জামায়াত সুযোগ নিতে পারত না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন করা সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যদি একটু ধৈর্য ধরা হতো তাহলে ছাত্র আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত দেশবিরোধী অপশক্তি সুযোগ নিতে পারত না। ছাত্রনেতাদেরও এ বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে। ছাত্রনেতাদেরও বিষয়ে খোঁজ নেওয়া দরকার।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি প্রকৃত কোনো ছাত্র এই ধরনের হামলা অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত ছিল না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তাদের নেতাকর্মী ও জামায়াত-শিবির রাষ্ট্রের ওপর এই হামলা চালিয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। যারা পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছে, মেট্রোরেল, বিটিভিতে আগুন দিয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিচার হবে। আমরা এটি করতে বদ্ধপরিকর। ২০১৩-১৪ সালে বিচার হয়েছিল, অনেকেই ফাঁকফোকর গলে বের হয়ে গেছে। এবার যাতে কেউ আইনের ফাঁকফোকর গলে বের হতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি বলেন, দেশে যখন ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দুর্যোগকবলিত মানুষ ছুটে যান। কিন্তু এখন সেই মন্ত্রণালয়েও আগুন দিয়েছে। এটি রাষ্ট্রের ওপরে হামলা। যে সেতু ভবন পদ্মা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ কাজ পরিচালনা করেছে সেই সেতু ভবনকেও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডাটা সেন্টারে আগুন দেওয়া হয়েছে, যার কারণে বেশ কয়েকদিন ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে সাবমেরিন কেবলগুলোকে কেটে দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। ঢাকাবাসীর গর্ব মেট্রোরেলে হামলা চালিয়েছে। ফুটওভার ব্রিজে আগুন দেওয়া হয়েছে। এক হাজারের বেশি গাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি বিদেশি রাষ্ট্রদূতদেরকে এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখানোর জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন ইটালিয়ান রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘এটা লজ্জাজনক’। বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সামাজিকমাধ্যমের আইডি হ্যাক করে উলটাপালটা পোস্ট দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার কোটা পুনর্বহাল করেনি। ২০১৮ সালে আমাদের সরকার কোটা ব্যবস্থা বাতিল করেছিল। সে অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছিল। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে আপিল করেছিল। হাইকোর্ট ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপনকে বাতিল করে রায় দেয়। এটি হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত, সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নয়। সরকার সঙ্গে সঙ্গে আপিল বিভাগে গেলে হাইকোর্টের রায়কে স্থগিত করে দেওয়া হয় এবং ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন বহাল হয়। সরকার পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, যেটি আমাদের সংবিধান ও আইন মতে যদি কোনো বিষয় সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকে সরকারের পক্ষে নির্বাহী ক্ষমতায় কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। সরকারের পক্ষ থেকে সেটি আমরা বারবার বলেছি।

হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বলেছেন- ‘শিক্ষার্থীরা হতাশ হবেন না’। কিন্তু দেখলাম প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আধা ঘণ্টা পরেই শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কিন্তু, পরে উচ্চ আদালতের রায়ে সমস্যার সমাধান হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যা চেয়েছিল তারচেয়ে বেশি পেয়েছে। রায়ে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা রাখা হলেও বাস্তবে তারা এক-দুই শতাংশের বেশি পাবে না। তাহলে বাকিটাও মেধাতে যাবে। কোটা থাকলেও সবাইকে মেধার ভিত্তিতে পরীক্ষার শেষ ধাপে যেতে হয়। শেষ ধাপে যেতে পারে মাত্র দুই শতাংশ শিক্ষার্থী। তারপরেই তাদের ক্ষেত্রে কোটা প্রয়োগ হয়। কিন্তু কোটার বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে ভুল বোঝানো হয়েছে। এরপরেও পত্র-পত্রিকায় নানা ধরনের বিবৃতি ও আহ্বান দেখি।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী এই নির্মমতার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। অনেক সাধারণ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। কয়েকজন শিক্ষার্থীও যে ঘটনার স্বীকার হয়নি তা নয়। সমস্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের বিচার আওতায় আনা হবে- এই প্রতিশ্রুতি শেখ হাসিনা দেশের জনগণকে দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ নেতা এমএ করিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ড. আওলাদ হোসেন প্রমুখ।

Check Also

আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইল বাংলাদেশ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ভারতকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।