কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ডের সঠিক পরিসংখ্যান দেশের জনগণ জানতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, গত কয়েকদিনে কত নিরীহ মানুষকে হত্যা ও পঙ্গু করা হয়েছে জনগণ তার সঠিক পরিসংখ্যান জানতে চায়। এছাড়া জনগণের টাকায় কেনা কী পরিমাণ গোলাবারুদ, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে তার হিসাবও চায়। রাষ্ট্রের টাকায় কেনা হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব একদিন কড়ায়-গণ্ডায় জনগণ আদায় করে নেবে।
শুক্রবার বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্মমভাবে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এ সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। তাই আমরা অবৈধ সরকারকে বলব- অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করার লক্ষ্যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা নিন।
তিনি বলেন, বরাবরই আওয়ামী লীগ লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছে। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য গত কয়ক দিন নিরীহ ছাত্র-মানুষকে গুলি চালিয়ে পাখির মতো হত্যা করেছে। যে গণহত্যা চালিয়েছে তা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কথাই মনে করিয়ে দেয়। ছাত্র-জনতার ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে দমন করার জন্য সেনাবাহিনীকে ব্যবহার কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। অবিলম্বে সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারি চাকরিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর সরকার দলীয় সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে হামলা চালিয়েছে। ইতিহাসে হতাহতের যে বর্বরোচিত নজির স্থাপন করেছে, তা দেশ-বিদেশের সব স্বৈরাচারের নির্মম নিষ্ঠুরতাকেও হার মানিয়েছে। অবৈধ সরকার নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্যর্থতা আড়াল করতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে গ্রেফতার করে যাচ্ছে। গ্রেফতারদের গুম করে রেখে নির্যাতন চালিয়ে তিন, চার কিংবা পাঁচ দিন পর আদালতে হাজির করা হচ্ছে; যা আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। দেশের নাগরিকদেরকে গুম করে রাখার ভয়াবহ সংস্কৃতি চালু রেখে মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করা হচ্ছে। সরকারকে এ ধরনের লোমহর্ষক কর্মকাণ্ড পরিহারের আহ্বান জানান তিনি।
ফখরুল বলেন, একটি স্বাধীন দেশে সরকারের দায়িত্ব হলো-রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। গত কিছুদিন যাবত কোটা সংস্কার আন্দোলনে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা যখন যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলনরত, তখন সেই মুহূর্তে সরকার প্রধানসহ সরকারি দলের নেতা-মন্ত্রীরা তাদেরকে তাচ্ছিল্য করে আওয়ামী সন্ত্রাসীদেরকে নির্দেশ দেয় শিক্ষার্থীদেরকে নির্মূল করার। সরকারি দলের সন্ত্রাসী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে জনগণের টাকার কেনা গুলি, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড শিক্ষার্থীদেরকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপের মাধ্যমে শত শত নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীকে হত্যা করেছে। হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে আহত করেছে; যা দেশবাসীসহ বিশ্ববাসী দেখেছে। এ নির্মম অত্যাচারে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ হতবাক ও ক্ষুদ্ধ হয়েছে এবং কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিও একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে এবং সারা দেশে কর্মসূচিও পালন করেছে। কিন্তু অবৈধ সরকার মরিয়া হয়ে রাষ্ট্রের সব বাহিনীসহ দলীয় সন্ত্রাসীদেরকে সাধারণ মানুষ, বিএনপি নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে ব্লকরেড দিয়ে গ্রেফতার করছে। এখন পর্যন্ত তাদের হিসাবে প্রায় ৩ হাজার গ্রেফতার করছে; যা জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জার।
তিনি আরও বলেন, এ গণহত্যা, নির্যাতন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে সব দেশপ্রেমিক মানুষ, রাজনৈতিক দল, ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে শাসক গোষ্ঠীকে পরাজিত করতে হবে।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল আলমগীর বলেন, বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিন সিকদার, নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মোশাররফ হোসেন খোকন আটকের তিন দিন পর আদালতে তোলা হয়েছে। অব্যাহত গতিতে দেশব্যাপী বিরোধী দলের নেতাকর্মী বাড়ি বাড়ি তল্লাশি হচ্ছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর বাসাসহ অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দের বাসায় তল্লাশি চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার, কারান্তরীণ ও জুলুম-নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব। অবিলম্বে গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানান তিনি।