আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম, ‘টার্গেট শিক্ষার্থী ও বিরোধীরা’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এলাকা ভাগ করে সন্দেহভাজনদের আটক করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ খবরে বলা হয়েছে – আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মূলত দুটি অংশে অভিযান চালায়। একাংশ অভিযান চালায় বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর নেতা-কর্মীদের ধরতে।
অন্য অংশের পুলিশ কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গ্রেফতারে অভিযান চালায়।
খবরে ঢাকায় শাহীনবাগ এলাকায় গত বৃহস্পতিবার পুলিশের ‘ব্লক রেইড’-এর সময় তৈরি হওয়া ভীতিকর পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে এভাবে – রাত ১১টা। আকাশে হেলিকপ্টারে টহল। সাইরেন বাজিয়ে হঠাৎ মহল্লার চারপাশ ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা।
তারপর দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। বাসায় ঢুকেই পুলিশের প্রশ্ন—আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে সহিংসতা চালিয়েছে, এমন কেউ বাসায় আছেন কি না। এরপর প্রশ্ন চলে একের পর এক, সঙ্গে চালানো হয় ঘরের প্রতিটি কোনায় তল্লাশি। জবাবের হেরফের হলেই গ্রেফতার।
অভিযানসংশ্লিষ্টদের দাবি, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঢাকায় যারা সহিংসতা চালিয়েছে এবং তাদের যারা মদদ দিয়েছেন, তাদের ধরতেই এই অভিযান।
প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম, ‘১১ দিনে গ্রেপ্তার ৯ হাজার’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, সংঘাত, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
শনিবার পর্যন্ত ১১ দিনে মোট গ্রেফতারের সংখ্যা নয় হাজার ছাড়িয়েছে।
এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের একটি বড় অংশ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এবং দল দুটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী।
পাশাপাশি বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা লাগাতার কর্মসূচি শুরু করেন পহেলা জুলাই। এরপর ১৫ই জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।
মূলত ২১শে জুলাই রাত থেকে ঢাকায় চিরুনি অভিযান শুরু করে পুলিশ ও র্যাব। সহিংসতায় কারা জড়িত ছিলেন, তা বের করতে ভিডিও ফুটেজ ও ছবি বিশ্লেষণ করে তালিকাও করা হয়েছে।
নিউ এইজের প্রধান শিরোনাম, ‘SC guidelines largely ignored in wholesale arrests, remand’ অর্থাৎ, ‘গণহারে গ্রেফতার, রিমান্ডে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনেকটাই উপেক্ষিত’।
এ খবরে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় জড়িত থাকার সন্দেহে নাগরিকদের গ্রেফতার করার সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষা করছে।
এতে বলা হয়, গ্রেফতারকৃতদের জামিন আবেদন না শুনেই জেলে পাঠানো হচ্ছে এবং আদালতে হাজির করা হচ্ছে বা পুলিশের আবেদন অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে।
আইনবিদদের মতে, বর্তমান গ্রেপ্তার, আটক এবং নাশকতার মামলায় রিমান্ড মঞ্জুর করার সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য এবং ম্যাজিস্ট্রেট উভয়ই আদালতের নির্দেশনা পুরোপুরি উপেক্ষা করছে।’
২০১৬ সালের ২৪শে মে আপিল বিভাগ, কাউকে গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জণ্য ১০ দফা নির্দেশনা জারি করেছিল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনা লঙ্ঘন করা মানে আদালত অবমাননার শামিল।
কালের কণ্ঠের প্রধান শিরোনাম, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের বেশির ভাগই শ্রমিক’।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতে নিহত সবার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান এখনো জানা যায়নি।
তবে গত কয়েক দিনে ঢাকার তিন হাসপাতালের মর্গে ১০৯ জনের মরদেহের তথ্য পাওয়া গেছে।
হাসপাতালের তথ্যে ৮৪ জনের নাম ও বয়স জানা গেলেও সবার পেশার বিষয়ে জানা যায়নি। তবে নিহতদের বেশির ভাগই অছাত্র। শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি।
নিহতদের মধ্যে অনেকেই রিকশা-ভ্যানের চালক, শিশু শ্রমিক, হকার, শাক-সবজির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দোকান কর্মচারী ও কেয়ারটেকার বলে জানা গিয়েছে এবং তারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়।
পরিবারের দাবি, সংঘাত চলাকালে মাঝখানে পড়ে আকস্মিকভাবে তাদের স্বজন গুলি লেগে নিহত হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র মতে, সংঘাতে আহত হয়ে এই সময়ে তিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে অন্তত দুই হাজার মানুষ।
এর মধ্যে পাঁচ শতাধিক রোগীকে ভর্তি রেখে জরুরি অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।
সংবাদের প্রথম পাতার খবর, ‘যাদের অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজনের ব্যবস্থা করা হবে : প্রধানমন্ত্রী’।
প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বা আশ্বাস তুলে ধরা হয়েছে। শনিবার কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে হামলায় আহতদের দেখতে শেরেবাংলা নগরের পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন (নিটোর) পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এই আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আহতদের চিকিৎসার জন্য যা যা লাগবে করে দেব এবং করে দিচ্ছি। যাতে তারা আবার সুস্থ মানুষের মতো চলাফেরা করতে পারে। নিজেদের কাজ করতে পারে।
সেইসাথে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় যে ধংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে যে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, এজন্য দেশবাসীর কাছে বিচার চান তিনি।
তিনি বলেন, ‘দেশবাসীর কাছে আমি বিচার চাই। এই ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ আর কেউ যেন এই দেশে চালাতে না পারে, সেই জন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই।’
নয়া দিগন্তের প্রথম পাতার খবর, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে টুর্ককে বিশ্বের দেড় শ’ বিশিষ্টজনের চিঠি’।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বাংলাদেশে সংঘটিত সহিংসতা ও বর্তমান ঘটনাপ্রবাহে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত শিক্ষাবিদ, লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা।
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ফলকার টুর্ককে গত বৃহস্পতিবার লেখা এক চিঠিতে এ উদ্বেগ জানান তারা। সেই সাথে তারা এ বিষয়ে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ চিঠিতে ১৪০ জনের বেশি বিশিষ্ট ব্যক্তি সই করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্ট করেছেন লেখক অমিতাভ ঘোষ।
বিশিষ্টজনরা বলেন, ভয়ভীতি ও নির্যাতনের এমন পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার হাইকমিশনার হিসেবে ফলকার টুর্কের কাছে তারা ওই সব ঘটনায় একটি স্বাধীন তদন্ত পরিচালনার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন।
চিঠিতে এসব বিশিষ্টজন বাছবিচারহীন গ্রেফতার, শোকজ ছাড়াই আটক, আটক বা গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের আইনজীবীর সহায়তা পাওয়ার সুযোগ না দেয়া, আহত করা, নির্যাতন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের এমন ঘটনা থামাতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।
যুগান্তরের প্রথম পাতার খবর, ‘জাতীয় ঐক্যকে মাঠে চায় বিএনপি’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, দেশের চলমান পরিস্থিতিকে ক্রান্তিকাল হিসাবে বিবেচনা করে এখনই জাতীয় ঐক্য গঠনের উপযুক্ত সময় বলে মনে করছে বিএনপি।
সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে এক ছাতার নিচে আনার চেষ্টা করছেন তারা।
যুগপৎ আন্দোলনে থাকা নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ৩৯টি দল ছাড়াও ইসলামী, বাম ও ডানপন্থি আরও ১৫টি দলের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা।
এই ৩৯টি দলের মধ্যে রয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চের চার দল, ১২ দলীয় জোটের ১২ দল, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ১১ দল, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যৈর চারটি দল, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি, গণফোরাম, পিপলস পার্টি, লেবার পার্টি।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রথমে সব দল মিলে একটি যৌথ বিবৃতি দিতে পারে। পরে অভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার কথা ভাবছে বিএনপি।
তবে এই ঐক্যের আহ্বান নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে কয়েকটি দলের। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যের বিষয়ে বামপন্থি কয়েকটি দল আরও সময় নিতে চাইছে।
শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে সব রাজনৈতিক দল নিয়ে একদফা দাবি আদায়ে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানায় বিএনপি।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রধান শিরোনাম, ‘কোথায় গেল এত আওয়ামী লীগ!’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকট হয়েছে।
দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বীকার করে বলেছেন, ‘কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কোনো জায়গায় রুখে দাঁড়াতে না পারা দলীয় সাংগঠনিক ব্যর্থতা।’
এখন খোদ দলের ভিতরেই প্রশ্ন উঠেছে-এত আওয়ামী লীগ গেল কোথায়?
রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি প্রতীকমাত্র। সারা দেশেই আওয়ামী লীগের এ অবস্থা।
ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে আওয়ামী লীগের যে মাঠের রাজনীতি তা সংকুচিত হতে হতে প্রায় নিঃশেষিত।
সমকালের প্রথম পাতার খবর, ‘নতুন করে অনিশ্চয়তায় রপ্তানি ও রেমিট্যান্স’। এ খবরে বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে ডলারের দর এক লাফে ৭ টাকা বাড়ানো হয়। গত আটই মে ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করে ডলারের মধ্যবর্তী দর ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আগে যা ১১০ টাকা ছিল।
এছাড়া গত সপ্তাহের ছয় দিনে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে, তা এর আগের এক দিনেরও কম।
গত ১৮ই জুলাই রাত থেকে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়। বর্তমানে দেশের বাইরে যোগাযোগের বেশির ভাগই হয় ইন্টারনেটভিত্তিক।
এ পরিস্থিতিতে টানা চার দিন শিল্পকারখানার সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হওয়ায় সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়ে দেশের রপ্তানি খাত।
বিদেশি ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের সঙ্গে রপ্তানি চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে পণ্য জাহাজীকরণ সম্ভব হয়নি। নতুন কোনো রপ্তানি আদেশ আসছে না বললেই চলে।
এদিকে চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারের দমনপীড়নের প্রতিবাদে বৈধ পথে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে হুন্ডিতে পাঠানোর ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন প্রবাসীদের একটি অংশ।
এতে ডলারের দর আরও বেড়ে মূল্যস্ফীতি উস্কে দেবে।