শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, গুলি ও গণগ্রেপ্তারের ঘটনায় গণতদন্ত কমিশন গঠন

কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় ২০৯ জনের মৃত্যু, আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, গুলি ও গণগ্রেপ্তারের ঘটনায় শিক্ষক, আইনজীবী, সংস্কৃতি কর্মী ও সাধারণ অভিভাবকেদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কয়েকজন প্রথিতযশা ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে।  সোমবার সুপ্রিম কোর্টে গণহত্যার বিচার ও গায়েবী মামলায়-গ্রেপ্তার ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে এক আইনজীবী সমাবেশে এই জাতীয় গণতদন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়।

তদন্ত কমিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি আব্দুল মতিন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল। কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন- সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাইয়িদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন, সিনিয়র সাংবাদিক আশরাফ কায়সার, আইনজীবী অনীক আর হক, অধ্যাপক তানজিমুদ্দিন খান, লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা। কমিশনের সদস্যসচিব হিসেবে যুগ্মভাবে কাজ করবেন অধ্যাপক তানজিমুদ্দিন খান ও মাহা মির্জা। এছাড়াও এই গণতদন্ত কমিশনে উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন- সিনিয়র আইনজীবী তোবারক হোসেন, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ড. শাহদীন মালিক, লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যপক সলিমুল্লাহ্ খান,  শিক্ষক কাজী মাহফুজুল হক সুপন, আইনজীবী রাশনা ইমাম, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও শিক্ষক সাইমুম রেজা তালুকদার।

এদিকে সুপ্রিম কোর্টে সোমবার দুপুরে গণহত্যার বিচার ও গায়েবী মামলায়-গ্রেপ্তার ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে আইনজীবী সমাজের ব্যানারে অনুষ্ঠিত আইনজীবী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সারা হোসেন, মোবারক হোসেন, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অনীক আর হক, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সম্পাদ মাহবুবুর রহমান খান প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল।

আইনজীবী সমাবেশে জেড আই খান পান্না বলেন, ছাত্রদের ৮ দফা দাবি খুবই যৌক্তিক ছিল। এই ছাত্ররাই কিন্তু ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন শুরু করে ছিল বটতলা থেকে। আর পাকিস্তান আমল থেকে আজকে পর্যন্ত দেখিনি একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটি দাবি নিয়ে এতোগুলো ছাত্রকে হত্যা করা হয়। রাতের অন্ধকারে কেন ব্লক রেড করে বাসা থেকে তুলে নেয়া হবে, কোন অধিকারে।

কোন আইনে এই অধিকার দিয়েছে। আমরা ধিক্কার দেই। যে রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। পদে পদে সরকার তা বরখেলাপ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, নিম্ন আদালতের প্রতি আবেদন তারা যেন আপিল বেভাগের নির্দেশনা মান্য করে। যাচা বাছাই না করে রিমান্ডে পর্যন্ত দিচ্ছে। আপনারা কি বিচারক, না কসাই। তিনি বলেন, আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। এটা জাতির জন্য কলঙ্ক হয়ে থাকবে। আমরা আইনজীবী হিসেবে একটা গণতদন্ত কমিশন গঠন করেছি। যেটা তদন্ত করে দেখবে। আমরা ছাড়ব না। আমৃত্যু চালিয়ে যাব।

গণমাধ্যমে দেয়া গণতদন্ত কমিশনের লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- গত ১৬ই জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বৈষম্যবিরোধি ছাত্র আন্দোলন দমনে শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়ে সহিংসতার সুত্রপাত হয়। বিশেষ করে এই সহিংসতার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশ জুড়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ পথে নেমে এলে রংপুরে আবু সাইদকে সরাসরি বুকে গুলি করা হয়। কিন্তু পুলিশ যখন মামলা দায়ের করে তখন সাধারণ ছাত্র এবং জনগণকে দায়ী করা হয়। এতে গোটা তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মনে প্রশ্ন উঠেছে এবং এইসব ঘটনায় সত্য উদঘাটনের দাবী উঠেছে। এ ঘটনায় পত্রিকার হিসেবে অন্তত ২০৯ জনের মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশ হলেও, সরকারী হিসেবে তা ১৪৭ জন। উক্ত আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, গুলি ও গণগ্রেপ্তারসহ নানা সহিংস উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়েছে, এবং তাতে সংবিধান, প্রচলিত আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের অভিযেগ উঠেছে। তাই এসব ঘটনার কারণ উদঘাটন, সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আবশ্যকতা রয়েছে।

এরই অংশ হিসেবে, দেশের শিক্ষক, আইনজীবী, সংস্কৃতি কর্মী ও সাধারণ অভিভাবকেদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কয়েকজন প্রথিতযশা ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। জাতীয় গণ তদন্ত কমিশনের পক্ষ থেকে সকল সচেতন ব্যক্তিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১লা জুলাই  থেকে সংগঠিত বিভিন্ন সহিংস নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, গুলিবর্ষণ, হুমকি, মামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যাবতীয় তথ্য কমিশনের কাছে প্রেরণের জন্য শিগগির আহ্ববান জানানো হবে।

Check Also

আশাশুনিতে টঙ্গী ইজতেমায় হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।ঢাকার টঙ্গীত ইজতেমা-মাঠে নিরীহ মুসল্লিদের উপর উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের বর্বরোচিত হামলা ও পরিকল্পিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।