ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ১২ দিন ধরে চিকিৎসাধীন শিশু মো. রফিকুল (১৫)। তবে এই ১২ দিনে ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হওয়া রফিকুল একবারও স্বজনের দেখা পায়নি। মেডিকেলের বেডে শুয়ে কখনও আনমনে হাসছে আর কখনও বিমর্ষ হয়ে থাকছে। রফিকুলের আর্তনাদ—কেউ আমার চাচারে একটু খবর দেবেন!
গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) রাজধানীর নাখালপাড়া রেললাইনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতার মধ্যে গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ হচ্ছে—এই খবরে বাসা থেকে বের হয়েছিল রফিকুল। পরে রেললাইনেই গুলিবিদ্ধ হয়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে সেদিনই ভর্তি করে ঢামেকে। সেই থেকে সে হাসপাতালের ২০৬ নম্বর ওয়ার্ডের ১৯ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন।
রফিকুল জানিয়েছে, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার কাটারিবাড়ি গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে সে। ঢাকায় থাকে চাচার বাসায়, তবে কারও ফোন নম্বর জানা নেই তার।
রফিকুল জানায়, দুই মাস আগে ঢাকায় আসে সে। এরপর থেকে নাখালপাড়ায় চাচার ভাতের হোটেলে কাজ করে আসছিল সে। ঘটনার দিন বিকেলে নাখালপাড়া রেললাইনে গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের খবর শুনে তা দেখতে বেরিয়েছিল। রেললাইনের কাছাকাছি যাওয়ার পরপরই একটি গুলি তার ডান পায়ের হাঁটুতে লাগে। পরে পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নেয়।
রফিকুল বলে, ‘আমি যে গুলি খেয়ে হাসপাতালে, এটা হয়ত বাসার কেউ জানেই না।’
রফিকুল জানায়, নাখালপাড়ায় চাচার যে বাসায় সেই ঠিকানা জানা নেই তার। শুধু জানে, নাখালপাড়া এলাকায় সাততলা ভবনের পাঁচতলায় চাচার সাথে থাকে। রফিকুলের দাবি, নাখালপাড়া বাজারের পাশে একটি গলির শেষ মাথায় তার চাচা হেলাল হোসেনের একটি ভাতের হোটেল রয়েছে। এর বেশি জানা নেই তার।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রফিকুল বলে, ‘আমার চাচারে একটা খবর দিতে পারবেন, আমি হাসপাতালে আছি। চাচা আপনারে রিকশা ভাড়া দিয়ে দিবে।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘বেশ কিছুদিন পেরিয়ে গেলেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই কিশোরের স্বজনেরা তার খোঁজ নিতে আসেনি। এমনও হতে পারে ওই কিশোরের হাসপাতালে থাকার বিষয়টি স্বজনেরা জানেই না। তবুও আমরা তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানা কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।’
দ্রুতই রফিকুল স্বজনদের কাছে ফিরে যাবে এই আশাও করেন বাচ্চু মিয়া।