গত বুধবার সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় হট্টগোল হয়েছে। ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগান এবং হই-হুল্লোড়ের পর অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করে সভাস্থল ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের নিয়ে এ সভা ডেকেছিলেন ওবায়দুল কাদের। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এ সভায় ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মাঝে ও সভা শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে ‘ভুয়া-ভুয়া’ আওয়াজ দেন সামনে থাকা বেশকিছু নেতাকর্মী।
একই সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক তার ছেলের দেওয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রলীগ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় তোপের মুখে পড়েন। তার উদ্দেশে কয়েকজন ছাত্রনেতা হই-হুল্লোড় করে প্রশ্ন করেন ‘আপনি এখানে কেন।’
এ ঘটনার পর ওইদিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে ছাত্রলীগের এক নেতা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি স্ট্যাটাস দেন। ছাত্রলীগের ওই নেতার নাম আব্দুর রাজ্জাক রাজ। তিনি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়ন ছাত্রীলগের সভাপতি।
স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলো ধরা হলো-
‘আপনার পাশে একজন সৈয়দ আশরাফ কই? মাথার উপরে একজন জিল্লুর রহমান কই? হাতটা আকড়ে ধরার জন্য একজন সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া, সাহেরা খাতুন কই? মানববর্ম তৈরি করার জন্য একজন হানিফ আর মায়া ভাই কই? সাহস, ধৈর্য আর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিয়ে সংকট মোকাবিলা করার জন্য একেকজন রাজ্জাক, তোফায়েল, আমু, সুরঞ্জিত কই? বুক পেতে দেওয়ার জন্য একজন সোহেল তাজ কই?
আপনার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পদ-পদবি যে কেজি দরে বেচা-বিক্রি হয় আপনি কি জানেন? মাঠে শিবির-ছাত্রদলের মতো প্রতিপক্ষ রেখে আপনার অঙ্গসংগঠন যে ধান কাটা, ফুটবল, ক্রিকেট খেলা, গাছ লাগানোর মতো ফুটেজসর্বস্ব রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়েছে সে বিষয়টা কি ভাবেন? অনুপ্রবেশ হতে হতে যে ঠগ বাছতে গা উজাড় হওয়ার দশা সেই খোঁজ কি রাখেন?
দলের জন্য জীবন বাজি রাখতে যেসব নেতাকর্মী প্রস্তুত তারা যে দলের সর্বস্তরে কোণঠাসা সেই খোঁজ কি রাখেন? নেতাকর্মীরা দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে মন খুলে দুই মিনিট কথা বলতে পারেন না, তিনি যে সবার প্রতি সব সময় ক্ষোভ-বিরক্তি প্রদর্শন করেন তা কি জানেন?
তেলবাজ সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, নায়ক-নায়িকা-এরা যে আপনার জন্য, দলের জন্য, সরকারের জন্য কতো ক্ষতিকর তা কি জানেন? এরা যে কোনো মুহূর্তের মধ্যে ১৮০ ডিগ্রি পল্টি নেবে তা কি জানেন? আদর্শিক নেতাদের বাদ দিয়ে তারকাদের মনোনয়ন দেওয়ার ফল যে দুঃসময়ে কতো ভয়ঙ্কর তা কি জানেন?
আপনি একা সবকিছু দেখতে গিয়ে বাকি সবার গায়ে যে ১৫ বছরের তেল-চর্বি-কোলেস্টেরলের পাহাড় জমেছে তা কি জানেন? আপনার ওপর সবকিছু চাপিয়ে দিয়ে তারা যে মহাসুখে লুটপাটে ব্যস্ত সে কথা জানেন?
আপনি মূলতঃ একা, ভীষণ একা! একা আর কতো লড়বেন? শিক্ষা নেবেন নাকি সবকিছু আগের মতোই চলতে দেবেন? সারা বাংলাদেশের সব অঙ্গ ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের পদ পদবি টাকা ছাড়া দেওয়া হয় না তা কি জানেন। কোনো কোনো আসনে কত টাকার বিনিময়ে নমিনেশন বাণিজ্য করেছে তার সঠিক তদন্ত করুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’।
ছাত্রলীগ আব্দুর রাজ্জাক রাজের স্ট্যাটাসের কমেন্ট বক্সে নানা মন্তব্য করেছেন নেটিজেনরা। জাগোনিউজ২৪.কমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মো. সালাহ উদ্দিন বলেছেন, ‘আমার এলাকার এক ছাত্রলীগ নেতার অনেকগুলো প্রশ্ন। উত্তর জানা থাকলে দিয়েন। আমার জানা নেই।’
বরুড়া উপজেলা আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিরাজ বলেছেন, ‘এক বছর আওয়ামী লীগের রাজনীতি না করতে হয়ে যায় এমপি আর যেই লোক বরুড়াতে জীবনে জয় বাংলা স্লোগান দেয় নাই সে হয় উপজেলা চেয়ারম্যান- এই হলো আওয়ামী লীগ’।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের একজন সমর্থক লিখেছেন, ‘প্রতিবাদী লেখনীর জন্য ধন্যবাদ’
শাহিন নামের একজন লিখেছেন, ‘সঠিক সময়ে সঠিক বার্তা’
রফিকুল ইসলাম নয়ন লিখেছেন, ‘ক্ষমতা পেয়ে শুধু নমিনেশন বিক্রি কমিটি বিক্রি করে কর্মী মূল্যায়ন ভুলে যাওয়ার ফল এখন দিচ্ছে
মাহবুব মুন্সী নামে আরেজন লিখেছেন, ‘ভাই কি বলতাম। এই লোকটা যা করেছে তার খেসারত নেত্রীকে দিতে হচ্ছে। উনার অবদান অস্বীকার করছি না।তবে গত দুই মেয়াদে প্রচুর উলটপালট করে দিয়েছে’।