রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা।সরকারকে পদত্যাগের জন্য আগামী রোববার পর্যন্ত সময় বেধে দিয়ে আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা।
এর আগে জুমার নামাজের পর থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ জনতা জড়ো হতে শুরু করেন। এরপর তারা মিছিল নিয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গিয়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হন।
কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় নিহতদের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থী-জনতার সম্মিলিত উদ্যাগে জনসমুদ্রে পরিণত হয় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। এ সময় তারা ‘আমার ভাই মরল কেন, স্বৈরাচার জবাব চাই। রক্তের ডাক দিচ্ছে ডাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক। জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো’- এমন বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
শহিদ মিনারে সমাপনী বক্তব্যে চিকিৎসক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আজকে সারা দেশে, সারা ঢাকা শহরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক, চিকিৎসক, জনতা, আইনজীবী, সাংবাদিক আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। সবাইকে আমাদের উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।
সরকারের উদ্দেশে চিকিৎসক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমাদের কথা খুব পরিষ্কার অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আর এখনো যারা কারাগারে রয়েছে তাদেরও নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে হবে। কারণ, আপনারা শাসন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার অযোগ্যতা প্রদর্শন করেছেন।’
ছাত্র ইউনিয়ন একাংশের সভাপতি রাগীব নাঈম বলেন, ‘আগামী রোববারের মধ্যে গ্রেফতার সব শিক্ষার্থীকে মুক্তি দিতে হবে। আগামী রোববারের মধ্যে কারফিউ তুলে নিতে হবে। আগামী রোববারের মধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। আগামী রোববারের মধ্যে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। যদি এই দফা দাবি পূরণ না হয়, আগামী রোববার বিকাল তিনটায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে গণমিছিল শুরু হবে।’
এদিন প্রেস ক্লাব থেকে শুরু হওয়া মিছিলের সভাপতিত্ব করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুতফাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
প্রেস ক্লাবে দেওয়া এক বক্তব্যে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করব। আন্দোলনের মাঝে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারেন। আমরা দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করছি। এরকম নারকীয় আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনো দেখিনি।’
তিনি বলেন, ‘আজ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, নারী-পুরুষ একত্রিত হয়েছে। আমাদের দেশকে এ সরকারের কাছ থেকে মুক্ত করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আর কাউকে ব্যবসা করতে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে জনতার হাতে আনতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রকৃত জায়গায় ফিরিয়ে নিতে হবে। যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিচার করতে হবে। এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আমাদের প্রধান আলোচ্য বিষয়, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।’