বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন দেশটির কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ২২ জন সদস্য। এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে এক চিঠি দিয়েছেন তাঁরা।
গতকাল শুক্রবার কংগ্রেসের উভয় কক্ষের আইনপ্রণেতাদের লেখা এ চিঠি ম্যাসাচুসেটসের ডেমোক্র্যাট সিনেটর এডওয়ার্ড জে মার্কি তাঁর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছেন। এ চিঠি লেখায় নেতৃত্বদানকারী আইনপ্রণেতাদের মধ্যে এডওয়ার্ড জে মার্কি ছাড়াও আছেন প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট সদস্য জিম ম্যাকগভার্ন ও বিল কিটিং।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় দেশজুড়ে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অধীন দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সংঘটিত হতে থাকার ওপরই আলোকপাত করেছে এসব ঘটনা।
আইনপ্রণেতারা লেখেন, ‘বাংলাদেশ সরকার এমন সব পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ন করছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে– জানুয়ারিতে ব্যাপকভাবে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের আয়োজন করা, শ্রমবিধির উন্নয়ন ঘটাতে ব্যর্থ হওয়া। এ ছাড়া আছে, অতিসম্প্রতি গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে সহিংস পন্থায় বিক্ষোভ দমন ও ইন্টারনেট পরিষেবা প্রায় পুরোপুরি বন্ধ করার ঘটনা।’
আইনপ্রণেতারা লেখেন, ‘বাংলাদেশ সরকার এমন সব পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ন করছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে- জানুয়ারিতে ব্যাপকভাবে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের আয়োজন করা, শ্রমবিধির উন্নয়ন ঘটাতে ব্যর্থ হওয়া। এ ছাড়া আছে, অতিসম্প্রতি গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে সহিংস পন্থায় বিক্ষোভ দমন ও ইন্টারনেট পরিষেবা প্রায় পুরোপুরি বন্ধ করার ঘটনা।’
আইনপ্রণেতারা আরও লেখেন, ‘এ উদ্বেগজনক ও চলমান প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আশা করি, দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কে অভিন্ন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের যে ভিত্তি রয়েছে, তা সমুন্নত রাখতে আপনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নেতৃত্ব দেবেন। যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই সব ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানাতে হবে, গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে; যেমন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার, জনগণের বিরুদ্ধে উল্লেখিত নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে পদক্ষেপ নিতে হবে। উপরন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্রের আরও অবনতি ঠেকাতে অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে, যাতে দেশটিতে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় মানুষের অধিকারকে সমর্থন দেওয়া যায়, যে সরকার মানবাধিকার সমুন্নত রাখবে ও নাগরিকদের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে।’
চিঠিতে আরও যাঁরা সই করেছেন
সিনেটর ক্রিস ভ্যান হলেন, ডিক ডারবিন, টিম কেইন, ট্যামি বাল্ডউইন, জেফ মার্কলে, ক্রিস মারফি এবং প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য সেথ মুল্টন, লরি ট্রাহান, জো উইলসন, ডিনা টিটাস, গ্রেস মেং, গ্যারি কনোলি, গ্যাবি অ্যামো, আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ, ইলহান ওমর, নাডিয়া ভেল জিকুয়েজ, ড্যান কিলডি, বারবারা লি ও জেমস ময়লান।
উল্লেখ্য, দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘটিত সহিংসতা ও বর্তমান ঘটনাপ্রবাহে সম্প্রতি গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষাবিদ, লেখক ও বুদ্ধিজীবীরাও। জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ফলকার টুর্ককে গত ২৫ জুলাই লেখা এক চিঠিতে ওই উদ্বেগ জানান তাঁরা। সেই সঙ্গে তাঁরা এ বিষয়ে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানান।
ওই চিঠিতে বাছবিচারহীন গ্রেপ্তার, শোকজ ছাড়াই আটক, আটক বা গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের আইনজীবীর সহায়তা পাওয়ার সুযোগ না দেওয়া, আহত করা, নির্যাতন-মানবাধিকার লঙ্ঘনের এমন ঘটনা থামাতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান বিশিষ্টজনেরা।
১৪০–এর বেশি ওই বিশিষ্টজনের চিঠিতে বলা হয়, বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও অন্যদের হতাহত হওয়ার ঘটনায় তাঁরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ ঘটনা কোনো গণতান্ত্রিক দেশে বিক্ষোভ প্রদর্শনের মৌলিক অধিকার শুধু খর্ব করেনি; বরং বাংলাদেশের সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের অধীন মানুষের জীবনধারণের অধিকারের নিশ্চয়তাকে উপহাস করেছে।