শিবির নেতা হত্যার দায়ে সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা, এজাহার নিতে সদর থানার ওসিকে নির্দেশ

আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরা:  সাতক্ষীরার আলোচিত ছাত্রশিবিরের নেতা আমিনুর রহমানকে গুলি করে হত্যার ১০ বছর পর সাতক্ষীরার তৎকালিন পুলিশ সুপার ফাটাকেষ্ট খ্যাত চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সদর সার্কেলের তৎকালিন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, সদর থানার তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইনামুল হক, ডিসি ওসি আব্দুল হান্নানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ রঘুনাথপুর গ্রামের মফিজউদ্দিন সরদারের ছেলে নিহত আমিনুর রহমানের ভাই সিরাজুল ইসলাম(৫৪) বাদি হয়ে সোমবার সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। বিচারক নয়ন কুমার বড়াল বাদির লিখিত অভিযোগ আমলে নিয়ে (১৫৬(৩) ধারা মতে) এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সদর সার্কেলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারি পুলিশ সুপার ও সম্প্রতি সাতক্ষীরা থেকে বদলী হওয়া সাবেক পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইনামুল হকসহ সদর থানার চারজন উপপরিদর্শক, একজন সহকারি উপপরিদর্শক, ছয়জন কনস্টেবল, গোয়েন্দা পুলিশের তিনজন উপপরিদর্শক, আট জন কনস্টেবল ও পৌরসভার কামাননগরের আওয়ামী লীগের নেতা ইনামুল হক, ইমামুল ইসলাম রণি ও ইউসুপ সুলতান। পুলিশ সদস্যরা হলেন, এস.এমইউ সুফসুলতান, ডিবির আলি হোসেন, আবুলকাশেম (এস.আই), হুমায়ূনকবীর (এস.আই), বিধানকুমার বিশ্বাস (এস.আই),ইয়াছিন আলী (এস.আই),লিটন বিশ্বাস (এ.এস.আই), জাহাঙ্গীর আলম, কং- ১৪৫,বেলায়েত হোসেন, কং- ৫৬৭, জিল্লুর রহমান, কং- ৬২৫, বাবুল হোসেন, কং-৭৭১, ফারুখ হোসেন, কং- ২৩৪, শেখ আলম, কং- ১৯৭, আব্দুল হান্নান, এস.আই, হান্নানশরীফ, এস.আই,আবু জারগিফারী, এস.আই, হাবিবুর রহমান, কং- ৭৪৪, রাসেল মাহমুদ, কং- ৭৯৭, ওমর ফারুক, কং- ১৬০, আব্দুর রহমান, কং- ২৮৭, আবিদুর রহমান, কং- ৪৭৩, আসাদুজ্জামান, কং- ৪৭০, বদরুলআলম, কং- ২০০,

মামলার বিবরণে জানা যায়, কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ রঘুনাথপুর গ্রামের মফিজউদ্দিন সরদারের ছেলে আমিনুর রহমান ২০১৪ সালে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে সাতক্ষীরা শহরের কামাননগর কবরস্থানের পাশে জনৈক মুকুল হোসেনের বাড়িতে একটি ছাত্রাবাসে থাকতো। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুরে ভাত খাওয়া চলাকালিন তৎকালিন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরের নির্দেশে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। ছাত্রাবাসে ঢুকে পুলিশ ছাত্রাবাসের আটজন সদস্যকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে। সদর থানার উপপরিদর্শক আবুল কাশেম ছাত্রাবাসে থাকা আমিনুর রহমানের পিঠের বাম দিকে গুলি করে। আমিনুর মেঝেতে পড়ে গেলে তার পায়েও গুলি করা হয়। একপর্য়ায়ে অধিক রক্তক্ষরণে আমিনুর মারা হয়। একই সময়ে পুলিশের গুলিতে মারা যায় মেসের আরও ৬জন। ওই সময়কার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব না হওয়ায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তণ হওয়ায় মামলার বিলম্বের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. তোজাম হোসেন বলেন, সাতক্ষীরার তৎকালীন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির আমিনুর রহমানসহ ৩৬ জন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করেছেন। যেটাকে আইনের ভাষায় বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ড বলা হচ্ছে। চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির ও সম্প্রতি বদলী হওয়া আরেক পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানসহ অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন তিনি।
বাদী পক্ষের আইনজীবী এড. এ.টি.এম বাসারুতুল্লাহ আওরঙ্গী বাবলা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল শহরের কামালনগরের একটি মেসে পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, কাজী মনিরুজ্জামান, সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইনামুল হকের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনার নামে তৎকালি ছাত্র শিবিরের শহর সেক্রেটারী আমিনুর রহমানকে গুলি করে হত্যা করে। এসময় মেসে থাকা আরো ৭ জনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে মারাত্মক জখম করে। ওই সময়কার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা সম্ভব না হওয়ায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ায় মামলাটি দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে। তিনি আরো জানান, এ মামলা দায়েরের সময় তার সহযোগি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন, এড. হাফিজুর রহমানসহ অর্ধশতাশীক আইনজীবী।
শাহাদাতের ঘটনা : ২৭ এপ্রিল ২০১৪ তাং সাতক্ষীরা শহর শাখায় নিয়মিত সফরে ছিলেন তৎকালীন খুলনা মহানগর সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারায়েজী। সকাল থেকেই শহরের সফরের অংশ হিসাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছিল। সফরের বিরতিতে মেহমানসহ তৎকালীন শহর সভাপতি আবু তালেব, শহর সেক্রেটারি আমিনুর রহমানসহ অনেকেই শহরের কামালনগরস্থ সাংগঠনিক একটি মেসে দুপুরে খাওয়া শেষ করে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। বিশ্রামের এক পর্যায়ে আকস্মিকভাবে মেসটিকে যৌথ বাহিনী ঘেরাও করে ফেলে। মেসের ভিতরে গিয়ে তৎকালীন শহর সেক্রেটারি আমিনুর ভাইকে পুলিশ বুকে গুলি করে নির্মম ভাবে হত্যা করে শহীদ করে দেয়। সাথে সাথে নিথর হয়ে পড়ে থাকে শহীদ আমিনুর রহমানের সদা হাঁসিমাখা দেহখানি। একই সাথে সেখানে অবস্থানরত তৎকালীন খুলনা মহানগর সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারায়েজী, তৎকালীন শহর সভাপতি আবু তালেব, তৎকালীন শহর সদস্য ইমরান হোসেন তৎকালীন থানা সভাপতি আঃ গফুরসহ ৬ জনের চোখ বেধে পায়ে গুলি করে মারাত্মক ভাবে আহত করে দেয়।

 

Check Also

আশাশুনিতে টঙ্গী ইজতেমায় হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।ঢাকার টঙ্গীত ইজতেমা-মাঠে নিরীহ মুসল্লিদের উপর উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের বর্বরোচিত হামলা ও পরিকল্পিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।