আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরা: মাদকে সয়লাভ সাতক্ষীরাসহ সীমান্ত অঞ্চল। প্রতি দিন হু-হু করে প্রবেশ করছে এসব মাদকদ্রব্য। গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় মদদপুষ্ঠ শেখ হাসিনার সরকারের দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণে সীমান্ত দিয়ে অব্যাহ ভাবে বানের পানির মত বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ভারতীয় মাদকদ্রব্য। তবে নতুন সরকার আসার পর নড়ে চড়ে বসেছে বিজিবি। গত তিন দিনে সাতক্ষীরার কলারোয়া সীমান্ত থেকে ৯ কোটি টাকার ভারতীয় মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতি দিন মাদকের বড় বড় চালান ধরা পড়ছে। এর মধ্যে ২০ আগষ্ট মঙ্গলবার কলারোয়ার হঠাৎগঞ্জ এলাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার ভারতীয় ক্রিস্টাল মেথ আইস উদ্ধার করেছে বিজিবি। ১৭ আগষ্ট একই উপজেলার কাঁদপুর সীমান্ত থেকে তিন কোটি ৬০ লাখ টাকার এলএসডি মাদক জব্দ করেছে বিজিবি। ২১ আগষ্ট বুধবার একই উপজেলার কাকডাংগা সীমান্তে ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ২ কেজি হেরোইন উদ্ধার করেছে সংস্থাটি।
সূত্রমতে সাতক্ষীরা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সর্বত্র এখন মাদকের ছড়াছড়ি। গাঁজা, ফেন্সিডিল, ইয়াবাসহ নতুন নতুন বিভিন্ন মাদকের ছড়া ছড়িতে যুব সমাজসহ এক শ্রেণীর ইয়াবা আসক্ত মানুষ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। তবে মাদক বিক্রয়কারী বড় বড় রাঘব বোয়াল সিন্ডিকেট ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। ধরা পড়ছে চুনোপুঁটির সঙ্গে দু’একজন সেবনকারী। অভিযোগ রয়েছে মাদক ব্যবসায়ীদের পিছনে বড় ধরণের ছায়া থাকায় সর্বদাই তারা পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। তেমনি সেবনকারীরাও অবাধে কিনতে পারছে তাদের নেশাদ্রব্য
সাতক্ষীরা সীমান্তের ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনায় একাধীক ইয়াবার কারখানার তথ্য রয়েছে গোয়েন্দা বিভাগের কাছে। কারখান গুলো সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মতে ভারতে যে তিনটি ইয়াবা কারখানার সন্ধান মিলেছে তার দুটি পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার ও একটি উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। মিয়ানমার থেকে ইয়াবার কাঁচামাল ‘এমফিটামিন’ এনে এসব কারখানায় ইয়াবা তৈরি হয়। সংস্থাটি বলছে, এ তিন কারখানায় উৎপাদিত ইয়াবা বড়ি গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে আসছে। বাংলাদেশে পাচারের জন্যই কারখানাগুলোতে ইয়াবা তৈরি করা হয়। সাতক্ষীরা টু যশোর সীমান্ত মাদক পাচাঁরের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। ভারতের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোকে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব তথ্য জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। কিন্তুু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সূত্র বলছে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের ক্ষেত্রে ভারতকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। প্রথমে মিয়ানমার থেকে মিজোরাম সীমান্ত হয়ে ভারতে নেওয়া হয় ইয়াবা। পরে তা পশ্চিমবঙ্গ ত্রিপুরা, মেঘালয় ও আসাম হয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। মাদকবিষয়ক গবেষক ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম ইমদাদুল হক এর উদ্বৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, আশির দশকের শুরু থেকে ভারতীয় সীমান্তে কারখানায় ফেন্সিডিল উৎপাদন করে বাংলাদেশে পাঠানো শুরু করেন মাদক কারবারিরা।
বুধবার (২১ আগষ্ট সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কাকডাংগা সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ২ কেজি হেরোইন আটক করা হয়েছে। গতকাল বুধবার (২১ আগষ্ট ২০২৪) ভোর রাত ৫টার দিকে বিজিবির ধাওয়া খেয়ে একদল চোরাকারবারীর ফেলে যাওয়া উক্ত হেরোইন উদ্ধার করা হয়। বিজিবি জানায়, সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবি এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ আশরাফুল হক এর দিক নির্দেশনায় একটি বিশেষ আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে ২১ আগষ্ট ভোর ৪.৫০টার দিকে কাকডাঙ্গা বিওপি‘র দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত হতে বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য পাচার করবে।
উক্ত সংবাদ প্রাপ্তির পর অধিনায়কের নির্দেশে কাকডাঙ্গা বিওপি’র নায়েব সুবেদার মোঃ আবু তাহের পাঠোয়ারী এর নেতৃত্বে একটি চৌকষ আভিযানিক দল মেইন পিলার ১৩/৩-এস ৭ আরবি হতে আনুমানিক ১০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কলারোয়া থানাধীন দকলের মোড় এলাকায় গোপনে অবস্থান গ্রহণ করে। এক পর্যায়ে আগত মাদক চোরাকারবারীরা আভিযানিক দলের উপস্থিতি টের পেয়ে পলায়নে উদ্যত হলে অভিযানিক দল তাদেরকে ধাওয়া করে। এ সময় চোরাকারবারীরা রাতের অন্ধকারে ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আভিযানিক দল উক্ত এলাকা তল্লাশী করে একটি ব্যাগ হতে ২ কেজি ভারতীয় হেরোইন উদ্ধার করে। আটককৃত মাদকদ্রব্যের আনুমানিক সিজার মূল্য ৪০ লাখ টাকা
এদিকে সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত হতে বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য পাচারকালে পাঁচ কোটি টাকার ভারতীয় ক্রিস্টাল মেথ আইস উদ্ধার করেছে বিজিবি।মঙ্গলবার ( ২০ আগষ্ট) কলারোয়ার হঠাৎগঞ্জ এলাকা থেকে এ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়।
সাতক্ষীরা ব্যাটালিয়ন (৩৩ বিজিবি) লেঃ কর্ণেল মোঃ আশরাফুল হক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারি কাকডাঙ্গা বিওপি‘র দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত হতে বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য পাচার করবে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে নায়েব সুবেদার মোঃ শামীম আলম এর নেতৃত্বে একটি চৌকষ আভিযানিক দল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কলারোয়া থানাধীন হঠাৎগঞ্জ এলাকায় গোপনে অবস্থান গ্রহণ করে। এক পর্যায়ে আগত মাদক চোরাকারবারীরা আভিযানিক দলের উপস্থিতি টের পেয়ে পলায়ন করলে অভিযানিক দল তাদেরকে ধাওয়া করে। এ সময় চোরাকারবারীরা রাতের অন্ধকারে ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আভিযানিক দল উক্ত এলাকা তল্লাশী করে একটি ব্যাগ হতে ১ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস উদ্ধার করে। যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ কোটি টাকা।
১৭ আগষ্ট একই উপজেলার কাঁদপুর সীমান্ত থেকে তিন কোটি ৬০ লাখ টাকার এলএসডি মাদক জব্দ করেছে বিজিবি।
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কাঁদপুর সীমান্ত থেকে তিন বোতল ভারতীয় মূল্যবান এলএসডি (লাইসার্জিক এসিড ডাইথ্যালামাইড) মাদক জব্দ করেছে বিজিবি। শনিবার দুপুরে উপজেলার চান্দুড়িয়া সীমান্তের কাঁদপুর এলাকা তাকে উক্ত মাদক গুলো জব্দ করা হয়। তবে, এসময় বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাচালানীরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের আটক করতে সক্ষম হননি বিজিবি।
সাতক্ষীরাস্থ বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ আশরাফুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ ব্যাপারে কলারোয়া থানায় সাধারণ ডায়েরীসহ পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।