ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরাঃ শিবির শিশু কর্মী হত্যার ঘটনায় ৭নং আমলী আদালতে সাবেক এসপি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবিরসহ ২৬ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পদ্মশাখরা গ্রামের মৃত এজাহার আলী গাজীর ছেলে মো. শহর আলী গাজী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। আদালত বাদীর দায়ের করা অভিযোগ এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করার জন্য সাতক্ষীরা সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আসামীরা হলেন সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির, সাতক্ষীরা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি এনামুল হক, ডিবি প্রধান আব্দুল হান্নান, এসআই আব্দুল মালেক, এসআই আবুল কালাম, ভোমরার মৃত সোনা গাজীর ছেলে ওহিদুল ইসলাম, ভোমরা দাসপাড়ার আব্দুস সোবহানের ছেলে আশরাফুল ইসলাম, হাড়দ্দহার মৃত বাদল গাজীর ছেলে শহিদুল ইসলাম গাজী, মৃত মোহম্মদ মোল্লার ছেলে আব্দুল গনি, পদ্মশাখরার মৃত আব্দুর রহিম গাজীর ছেলে মফিজুল ইসলাম, খানপুরের নজরুল ইসলামের ছেলে ইব্রাহিম খলিল, চৌবাড়িয়ার মফিজ উদ্দীন সরদারের ছেলে আব্দুস সাত্তার সরদার, আব্দুল গনির ছেলে মোশারফ হোসেন, পদ্ম শাখরার মৃত এমাম বক্স গাজীর ছেলে রেজাউল ইসলাম, ভোমরার মৃত মোকসেদ গাজীর ছেলে আনারুল ইসলাম গাজী, লক্ষ্মীদাড়ীর মৃত কাদের মোল্লার ছেলে জালাল উদ্দীন, হাড়দ্দহার আব্দুস সামাদ সরদারের ছেলে খলিলুর রহমান, হাড়দ্দহার আব্দুর রাজ্জাক সরদারের ছেলে তরিকুল ইসলাম, হাড়দ্দহার মৃত নেছার উদ্দীনের ছেলে এমাদুল ইসলাম, পদ্মশাখরার মৃত আব্দুর রহিম বক্সের ছেলে শহীদুল ইসলাম, ভোমরার আবু শেখের ছেলে আনসার আলী, পদ্মশাখরার সায়েদ ফকিরের ছেলে আবু বক্কর ফকির, ভোমরার আনসার আলীর ছেলে ইসমাঈল হোসেন, ভোমরার হারু কাপালীর ছেলে সুবাস ডাঃ, লক্ষ্মীদাড়ীর মৃত কাদের মোল্লার ছেলে জালাল মোল্লা, বিজয় কৃষ্ণ ঘোষের ছেলে হারু ঘোষ, পদ্মশাখরার রমজান গাজীর ছেলে আব্দুল গফুর গাজীসহ অজ্ঞাত আরো ১৫/২০ জন।
শাহাদাতের ঘটনা
শহীদ মো: আবু হানিফ ছোটন
১৭ জানুয়ারি’১৪, বিকাল সাড়ে ৫টায় শহীদের নিজ এলাকা থেকে ডিবি পরিচয়ে সাদা মাইক্রোতে চোখে বেঁধে নিয়ে যায়। সারা রাত নির্যাতনের পর ভোর সাড়ে ৫টার সময় নিজ গ্রামের পাশে ভোমড়া স্থলবন্দরে যৌথবাহিনীর গুলিতে শাহাদাত বরণ করেন সংগঠনের কর্মী ভোমরা ইউনিয়ন দাখিল মাদরাসার নবম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র আবু হানিফ ছোটন। তাঁর বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার সদর উপজেলার সাকরা কোমরপুর ইউনিয়নের পদ্মশাখরা গ্রামে।
বাদী আদালতে দাখিল করা অভিযোগে উল্লেখ করেন, ১ হতে ৬নং আসামী একই চেইন অফ কমান্ডের অর্ন্তভূক্ত এবং ৭ হতে ২৬নং আসামী হত্যার ষড়যন্ত্রকারী, হত্যার পরিকল্পনাকারী এবং পুলিশকে সরজমিনে সাহায্য সহায়তাকারী ব্যক্তিবর্গ। বাদীর ছোট পুত্র এক্ষণে মৃত আবু হানিফ ছোটন বয়স-১৫ বছর। যে ভোমরা ইউপি দাখিল মাদ্রাসার ৯ম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। গত ইং ১৭/০১/২০১৪ তারিখের ঘটনায় পুলিশ শহর আলী গাজীকে থরতে যায়। বাড়িতে তাকে না পেয়ে তার শিশু পুত্র আবু হানি কে আসামীরা ধরে নিয়ে যায় পরে তাকে গুলি করে হত্যা করে।
সে একজন ভাল ক্রীড়াবিদ। গত ইং ১৭/০১/২০১৪ তারিখ সকালে ৭নং আসামীর নেতৃত্বে তার ভোমরা বাড়িতে (৭-২৬) নং আসামীগন এক যৌথ মিটিং এ সমবেত হয়। তারা উক্ত মিটিং এ বাদীকে অথবা বাদীর পরিবারের যেকোন একজনকে হত্যা করবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। উক্ত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে তারা ১ হতে ৩নং আসামীর সাথে আলাপ আলোচনা করে বিষয়টি নিশ্চিত করে। আসামীদের পরিকল্পনার বিষয় স্বাক্ষীর মাধ্যমে বাদী খবর পায়। খবর পাওয়া মাত্র ১৭/০১/২০১৪ তারিখের দুপুরে বাদী নিকটস্থ প্রতিবেশির বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। বাদীর অপর তিন পুত্র আশেপাশের প্রতিবেশির বাড়িতে লুকিয়ে থাকে।
বাড়িতে বাদীর স্ত্রী ও ছোট পুত্র এক্ষণে মৃত আবু হানিফ ছোটন ছিল। গত ইং ১৭/০১/২০১৪ তারিখ বিকাল অনুমান ৫:৩০ টার সময় ওসি এনামুল হকের নেতৃত্বে দারগা ৫ ও ৬নং আসামী সহ ৭-৮ জন ফোর্স ও ৭, ৯. ১১, ১২, ১৭, ১৯, ২০ ও ২১ নং আসামীগন পুলিশের সাথে একই সঙ্গে বাদীর বাড়িতে যেয়ে বাড়ি ঘেরাও পূর্বক বাদীকে এবং বাদীর ছেলেদেরকে খোঁজাখুজি করতে থাকে। বাড়িতে থাকা বাদীর স্ত্রী ও এক্ষণে মৃত বাদীর ছোট পুত্র আবু হানিফ ছোটন জানায়, তার আব্বু ও ভাইয়েরা া কেউ বাড়িতে নাই। বাদী এবং স্বাক্ষী আবুল হোসেন ও প্রতিবেশী অন্যান্য স্বাক্ষীরা আসামীদের কর্মকান্ড দেখতে পায়।
বাদী বাড়িতে নাই জানিয়া পুলিশ সদস্যরা ওসি সাহেবের নেতৃত্বে ঘর, রান্নাঘর, গোয়াল ঘর, বৈঠক খানায় খোঁজাখুজি করে কাউকে না পেয়ে বাদীর ছোট পুত্র এক্ষণে মৃত আবু হানিফ ছোটনকে ১নং আসামীর নির্দেশে ধরে নিয়ে যায়। ৩. ৪ ও ৫নং স্বাক্ষীরা বাদীর নিকটতম প্রতিবেশী তারা শিশু পুত্রকে ধরে নেয়ার কারণে ‘পুলিশের পিছু পিছু যেতে থাকলে তাদেরকে গ্রেপ্তারের ভয়ভীতি দেখায়ে তাড়িয়ে দেয়। বাদীর শিশু পুত্র এক্ষণে মৃত আবু হানিফ ছোটনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও স্বাক্ষীদের দারস্থ হয়ে তাকে ছাড়িয়া আনবার জন্য অনেক প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু বাদীর শিশু পুত্র পুলিশ কোথায় রেখেছে তার কোন সন্ধান দেয়নি।
বাড়িতে এক্ষণে মৃত আবু হানিফ ছোটনের মাতাসহ তারা ভীষণ কান্নাকাটি করতে থাকেন। গত ১৮/০১/২০১৪ তারিখ ভোর অনুমান ৫:৩০টার সময় ভোমরা স্থলবন্দর এর লাভলু স্কেল এর সামনে মেইন রাস্তার উত্তর পার্শ্বে ফাঁকা জায়গায় ১নং আসামীর উপস্থিতিতে তার নির্দেশে ও হুকুমে ২ ও ৩নং আসামী পিস্তল দিয়া বাদীর শিশু পুত্র আবু হানিফ ছোটনের বুকের বার পার্শ্বে, ডান হাতের বাহুতে এবং বাম হাতের কনুইয়ে পরপর ৩টি গুলি করে।
গুলি করার সময় ঘটনাস্থলে (৭-১৩) নং আসামীগন সেখানে উপস্থিত ছিল বলে জানা যায়। বাদীর পুত্র গুলির পর সে জমিনে লুটায়ে পড়ে। গুলির স্থান সমূহ দিয়ে অঝোরে রক্ত পড়তে থাকে এবং কিছুক্ষণের মধ্যে বাদীর পুত্র ছটফট করে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। উপস্থিত আসামীরা বাদীর শিশু পুত্র আবু হানিফ ছোটনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে দেখে তাকে পুলিশের পিকআপ ভ্যানে উঠায়। উপরোক্ত ঘটনা ১-২নং স্বাক্ষীদ্বয় নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন।
পুলিশ বাদীর শিশু পুত্রকে হত্যা করে তার লাশ পিকআপ ভ্যানে তুলে সদর হাসপাতালের চাতালে রাখে এবং ময়নাতদন্ত শেষ করে (১৮/০১/২০২৪) তারিখ বিকাল অনুমান ৫টার সময় এক্ষণে মৃত স্থানীয় মেম্বর জাকির হোসেন নিকট পুলিশ বাদীর পুত্রের লাশ হস্তান্তর করে। বাদী পুত্রের লাশ দেখেন এবং তার শরীরের গুলির চিহ্নগুলো দেখেন। রক্তাক্ত অবস্থায় কাদামাটি মাখা রক্তাক্ত দেহ দেখে বাদীসহ আত্মীয় স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশিরা ভীষণভাবে কান্নাকাটি করতে থাকে। অবশেষে তাকে গোসল করায়ে, কাফন পরায়ে, বাদীর বাড়ির সম্মুখে রাস্তার পার্শ্বে কবর খুড়ে জানাযা দিয়া শিশু পুত্র আবু হানিফ ছোটনকে দাফন সম্পন্ন করেন।
আসামীরা একই উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক গৃহিত সিদ্ধান্তের আলোকে নিরপরাধ শিশু পুত্রকে নির্দয়, নিষ্ঠুর, নির্মম ভাবে গুলি করে হত্য করেছে। উল্লেখ্য যে, ১নং আসামীর নির্দেশ ছিল যে, দেখা মাত্র গুলি এবং পিটাইয়া হত্যা করলে কোন মামলা হবে না। পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে তৎকালীন সময়ে (১৮/০১/২০১৪) মামলা করার কোন সুযোগ ছিল না। বর্তমান পরিবেশ অনুকুলেটি হওয়ায় ন্যায় বিচার পাওয়ার আদালতে অত্র মামলা দাখিল করলাম। মামলাটি এজাহার রূপে গণ্য করিতে মর্জি হয়।