ভাঙনে সরে আসছে সীমান্তনদী ইছামতী, পাল্টে যাচ্ছে সাতক্ষীরার মানচিত্র

আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরাঃ ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে সাতক্ষীরার সীমান্তনদী ইছামতী। ইতিমধ্যে দেবহাটা উপজেলার অনেক জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সীমান্তনদী ইছামতীর ভাঙনের কারণে ভারতয়ি অংশ বাংলাদেশের দিকে সরে আসছে। এতে পাল্টে যাচ্ছে দেবহাটা উপজেলার মানচিত্র। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ অংশের কয়েক হাজার বিঘা জমি বিলীন হয়ে গেছে। অন্যদিকে ভারতীয় অংশে জেগে ওঠা চরে গড়ে উঠেছে হোটেল-পার্কসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। নদীভাঙনে ইছামতীর তীরবর্তী দেবহাটা এলাকার বাসিন্দারা ঘরবাড়ি, কবরস্থানসহ জমিজমা হারাচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার দক্ষিণ সীমান্তদিয়ে বয়ে গেছে ইছামতি নদী। সদর উপজেলার হাড়দ্দহা থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার বসন্তপুর এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার পানিতর এলাকা থেকে হিঙ্গলগঞ্জ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতকে বিভক্ত করেছে ইছামতী নদী। দীর্ঘদিন ধরে নদীর বাংলাদেশ অংশের ছয়টি স্থানে ভাঙছে। ইতিমধ্যে দেবহাটা উপজেলার দেবহাটা, খানজিয়া, রাজনগর, ভাতশালা ও কোমরপুর গ্রামের কয়েক হাজার বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব গ্রামের বিপরীতে ভারতের অংশে চর জেগে উঠছে।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা গেছে, দেবহাটার ইছামতি নদীর ভাতশালার বিশ্বাস বাড়ি এলাকার বেড়িবাঁধটি বিলিন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ ভাঙতে ভাঙতে বেড়িবাধের এক-তৃতীংশ ভেঙে নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। একাধীক বার সংস্কার কাজে লাখ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হলেও তা কাজে আসেনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে মূর্হুত্বে বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্খা রয়েছে। প্লাবিত হলে লোনা পানি ঢুকে হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল ও মৎসঘের ভেসে যাওয়া সহ শত শত পরিবার পানি বন্দি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বর্তমানে উক্ত এলাকার মানুষের দিন কাটছে আতঙ্কে। তবে স্থানীয়রা নদীর মুল বেড়ি ছিত্র করে পানি উত্তোলন ও নদীতে ঠেলা জাল নদী ভাঙনের প্রধান অন্তরায় হিসাবে দায়ী করছেন।
স্থানীয় এবাদুল ইসলাম জানায়, ভাতশালা বিশ্বাস বাড়ি সংলগ্ন বেড়িবাঁধটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা যে কোন সময় ভেঙে যেতে পারে। কয়েকমাস আগে ভেড়িবাঁধের ভাঙন প্রতিরোধের জন্য সরকারি ভাবে বালুর বস্তা স্থাপন করার কথা থাকলেও তা সঠিক ভাবে সম্পন্ন হয়নি। আমরা ভয়ে আছি জোয়ারের পানির চাপে যদি বাঁধ ভেঙে যায় আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো। আমাদের ক্ষতির শেষ থাকবে না।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বকুল জানান, ভাতশালা এলাকায় নদী ভাঙন চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। যে কোন সময় দূর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আশি করি ভাঙন ঠেকানোর জন্য কাজ শুরু হবে।
এদিকে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সালাউদ্দীন শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দ্রুত কাজের আশ্বাস দেন। তিনি জানান, এই বাঁধটি আমরা বার বার সংস্কার করে রাখতে পারছি না। এখানে স্থায়ী বাঁধ দেওয়ার বিকল্প নেই। আপাতত পাইলিং করে বস্তা ও মাটি ভরাট দিয়ে কোন রকম বাঁধ রক্ষার কাজ আগামী শনিবার থেকে শুরু হবে।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৩০ বছর ধরে ইছামতী নদীতে ভাঙন চলছে। দেবহাটার ভাতশালা থেকে কালীগঞ্জের খারহাট পর্যন্ত৭ কিলোমিটার এলাকার ৮ থেকে ১০ জায়গায় ভাঙন অব্যাহত আছে। বিপরীতে ভারতের অংশে চর জেগে উঠছে। ভাঙন রোধে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নদীর পাশে শতাধিক ইটভাটা তৈরি করেছে। পাশাপাশি নদীর পাড় ঢালাই করে সুরক্ষা করা হয়েছে। নদী দিনকে দিন বাংলাদেশের দিকে সরে আসছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কালীগঞ্জের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে নদী থেকে বালু তোলায় ভাঙন ত্বরান্বিত হচ্ছে।

সুশীলগাতি এলাকার সপন মন্ডল বলেন, খানজিয়া, রাজনগর, ভাতশালা ও কোমরপুর এলাকায় মূলত ভাঙছে। রাজনগর মৌজার অধিকাংশ জমি নদীতে চলে গেছে। ভারতের অংশে রাজনগর নামে গ্রাম গড়ে তোলা হয়েছে। ভাতশালা গ্রামের আবদুল হাই (৬৮) বলে, নদীভাঙনে দেবহাটা উপজেলার মানচিত্র সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ভাঙতে ভাঙতে নদী বাংলাদেশের দিকে সরে আসছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাফিলাতির বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে স্থানীয়রা বলেন, সীমান্ত এলাকায় পাউবোর বেড়িবাঁধ সংস্কারে কোনো বরাদ্দ হলে সংশ্লিষ্ট সেকশন অফিসারদের (এসও) সঙ্গে ঠিকাদাররা মিলে দায়সারা গোছের কাজ করে চলে যান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঠিকাদারের কাছ থেকে সংস্কার কাজ কিনে নিয়ে পাউবোর এসও’রাই তা শ্রমিক সরদারদের কাছে আবার বিক্রি করে অতিরিক্ত অর্থ পকেটস্থ করেন। এ কারণে ক্ষতিগ্রগ্রস্থ বেড়িবাঁধ সংস্কারের সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো তদারকি থাকে না। ফলে বরাদ্দের অধিকাংশ টাকা লোপাট হয়ে যায়। কাজ হয় যৎসামান্য। উপকূলের মানুষের জানমাল রক্ষায় ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ সঠিকভাবে করতে তিনি এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, ভাঙন রোধে গাছ লাগানোসহ টেকসই বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্ধ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কী পরিমাণ ভূখন্ড বা জমি বাংলাদেশ হারিয়েছে জানতে চাইিেতনি বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্তের পর মাপ-জরিপ না করলে বলা যাবে না। তিনি বলেন, স্থায়ী বাঁধ ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়। সীমান্তনদী তীর সংরক্ষণ নামে দেশের অন্য জায়গায় একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপ এখানে জরুরিভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে ভাঙন রোধ করা যাবে।

 

Check Also

আশাশুনি উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সভাপতি-অধ্যাপক শাহজাহান,সেক্রেটারী বোরহান উদ্দীন মনোনীত এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি প্রতিনিধি।।বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন আশাশুনি উপজেলার দ্বি-বার্ষিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।