সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের অবৈধ সাবেক সাধারন সম্পাদক এএসএম মাকসুদ খান ভোলপাল্টে এবার বিএনপি-জামায়াতের কর্মী হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত আছে। অবৈধ পন্থায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ পছন্দের কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান চেয়ারে বসে বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে স্থলবন্দরে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। এমন কোন খারাপ কাজ নেই যা তিনি করেননি আওয়ামীলীগ ও তৎকালীন কতিপয় অসাধু প্রভাবশালী ব্যক্তির ব্যবহার করে। ছাত্র জনতার গণঅভ্যুন্থানের ফলে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে এবার পালিয়ে থেকে তিনি ভোমরা স্থল বন্দরকে ধ্বংসের পায়তারা চালাচ্ছে।
সূত্র জানায়, আওয়ামীলীগ ও কতিপয় দূর্ণীতিপরায়ন পুলিশ মনোনীত ভোমরা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা আত্মগোপনে রয়েছেন। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ ও মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ঐ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খানসহ ৯ সদস্যের এই কমিটি ২০২২ সালে দায়িত্ব নিয়ে বন্দরের ব্যবসায়ীদের একপ্রকার জিম্মি করে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা, প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নগদে খুশি রেখে বন্দরে গড়ে ওঠে সিন্ডিকেট। একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও পুলিশ- প্রশাসনের ভয় ও আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের হুমকি ধামকিতে কোন ব্যবসায়ী মুখ খুলতে সাহস পাননি। ভারত থেকে আমদানিকৃত গাড়ি প্রতি ২’শ রুপি চাঁদা আদায় করাসহ নানানভাবে হয়রানি করা হয়েছে ব্যবসায়ীদের। গাড়ি পার্কিং থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে দফায় দফায় চাঁদা আদায় করা হয়েছে। প্রতি মাসে আদায়ের কোটি কোটি টাকার ভাগ দেওয়া হতো ,এমপিসহ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের। এছাড়া, দেশের দূর দূরন্ত থেকে ভোমরা স্থলবন্দরে আসা ব্যবসায়ীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হতো। তাদের কাছ থেকে আদায় করা হতো মোটা অংকের চাঁদার টাকা। সম্প্রতি চিটাগাং এর এক ব্যবসায়ীকে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন চালানোর ঘটনায় সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খানকে কিছুদিন জেলও খাটতে হয়েছে। তবে, গত জুলাইয়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই সাতক্ষীরার আওয়ামী লীগের সকল এমপি ও নেতাকর্মীদের মতো ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মাকসুদসহ পালিয়ে গেছেন বা আত্মগোপনে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগ মদদ পুষ্ট বিগত অবৈধ কমিটির নেতারা অ্যাসোসিয়েশনের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়েছেন। তাদের কোনো খোঁজ মিলছে না। তাঁরা বলেন, স্বাধীন গণতান্ত্রিক এই প্রতিষ্ঠানে এযাবত পর্যন্ত নির্বাচন হয়নি। জাতীয় নির্বাচনের মতো আমরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগের দলীয় করণে তাদেরই মন পছন্দ লোক দিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে অ্যাসোসিয়েশন দখল করে বন্দর পরিচালনা করেছেন। ঘুরে ফিরে আওয়ামী লীগের লোকজনই অ্যাসোসিয়েশন দখল করেছে। চাঁদাবাজি করেছেন। এমনকি মাঝখানে আওয়ামী লীগের এক দরবেশ বাবাও কয়েক মাস বন্দর লুঠে খেয়েছেন , দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে এমনভাবেই বললেন ব্যবসায়ীরা।
তারা বলেন, সব শেষ ২০২২ সালে পরিকল্পনামাফিক সাধারণ সভার নামে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করে মনোনয়ন পত্র কিনতে দেয়নি পুলিশ ও আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নেতারা প্রকাশ্যে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাকসুদসহ পছন্দের লোকদের অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি গঠন করেছে। আওয়ামীলীগের মদতপুষ্ট এই কমিটির কাছ থেকে দুই কোটির অধিক টাকা নিয়েছে আওয়ামী লীগ, ছাত্র লীগ ও যুবলীগের জেলার শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। কোটি কোটি টাকা দিয়ে কেনা এই কমিটি দীর্ঘদিন ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে ইচ্ছে মতো হয়রানি ও চাঁদাবাজি করেছেন। যে কারণে অনেক ব্যবসায়ী বেনাপোলসহ দেশের অন্য বন্দরে চলে গেছেন।
এদিকে, সুন্দর ও স্বাভাবিক পরিবেশে ভোমরাস্থল বন্দরের কার্যক্রম চলছে তার মধ্যে থেকেই ব্যবসায়ী নামধারী সুদের কারবারি এএসএম মাকসুদ খান ভোমরা স্থলবন্দরের ব্যবসা বানিজ্যকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে বিভিন্ন দপ্তরে নামে-বেনামে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করে চলেছে।
সাধারন ব্যবসায়ীদের দাবী, সুদখোর মাকসুদ খানকে গ্রেফতার পূর্বক তাকে বিচারের আওতায় এনে ভোমরা স্থলবন্দরে ব্যবসায়ীদের এই মানুষরুপি দানব থেকে রেহাই দিয়ে ভোমরা ব্যবসা বাণিজ্যের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে সাতক্ষীরার ভোমরা শুল্ক স্টেশন চালু হয়। এরপর ২০০২ সালে শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর হিসেবে সরকার ঘোষণা করেন। বন্দরটি কলকাতার কাছাকাছি হওয়ায় দেশের অনেক আমদানি-রপ্তানিকারক এই বন্দরে ব্যবসার জন্য এসেছিলেন । কিন্তু নানান অনিয়ম, হয়রানি, চাঁদাবাজির কারণে বহু ব্যবসায়ী দেশের অন্য বন্দরে চলে গেছেন।
তবে, নবগঠিত সিএন্ডএফ আ্যাসোসিয়েশন, আমদানি রপ্তানি কারক, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং কাষ্টমস্ কর্তৃপক্ষ ভোমরা বন্দর সংশ্লিস্ট সকল ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রচেষ্টায় স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসায় বর্তমানে ব্যবসায়ীরা আবারও ভোমরা স্থল বন্দরে ব্যবসা বাণিজ্যে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।