রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ বিষয়ে আজ বুধবার (২৮ আগস্ট) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১ আগস্ট সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ (১) ধারায় জামায়াত, ছাত্রশিবিরসহ তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর আগে থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলছিল। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সরকারের পতন হয় এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন।
গত সোমবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জামায়াত নিযুক্ত আইনজীবী শিশির সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জামায়াত ও শিবির নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপনটি মঙ্গলবার বাতিল করা হতে পারে।
সূত্র জানায়, জামায়াত নতুন সরকারের কাছে তাদের দল ও ছাত্রসংগঠন নিষিদ্ধের বিষয়টি তুলেছিল। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জামায়াতের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কোন আইনে নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহার করা যায়। তখন শিশির মনিরকে জামায়াত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করে।
শিশির মনির মঙ্গলবার এই প্রতিবেদককে বলেন, সন্ত্রাস দমনের যে আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সে আইনেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে। সেই ব্যাখ্যা তিনি স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন। সরকারি সূত্রে তিনি জানতে পেরেছেন, সরকারি প্রক্রিয়া চলছে।
সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে ১৯৪১ সালে জামায়াত প্রতিষ্ঠার পর থেকে দলটি চারবার নিষিদ্ধ হয়। ১৯৫৯ ও ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে এবং ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান প্রতিষ্ঠার পর অন্য সব ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে জামায়াতও নিষিদ্ধ হয়েছিল।
পরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালে প্রকাশ্য রাজনীতির সুযোগ পায় জামায়াতে ইসলামী। ওই সময়ের ইসলামী ছাত্রসংঘ নাম পরিবর্তন করে হয় ইসলামী ছাত্রশিবির।
জামায়াত সর্বশেষ নিষিদ্ধ হয় ১ আগস্ট, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। ২৭ দিনের মাথায় তাদের নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করা হলো।
আদালতের রায়ে নির্বাচন কমিশন ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে। জামায়াতের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। এর ফলে দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে।
আইনজীবী শিশির মনির এই প্রতিবেদককে বলেন, নিবন্ধন বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আগামী সপ্তাহে তাঁরা আপিল বিভাগে আবেদন করবেন।