তিন মাসের বিরতির পর রবিবার থেকে উন্মুক্ত হচ্ছে প্রকৃতির রহস্যঘেরা সুন্দরবন

আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরাঃ নিষেধাজ্ঞা শেষে আগামী রোববার থেকে বনজীবী ও পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে সুন্দরবন। টানা তিন মাসের বিরতির পর সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা-এই তিন জেলার সুন্দরবনসংলগ্ন বনজীবীরা। তারা বলছে, নতুন বাংলাদেশের গৌরবান্বিত নাগরিক হিসেবে এবারের সুন্দরবন প্রবেশে বাড়তি আগ্রহ রয়েছে। আশা করি আগেকারমত হয়রানি শিকার হতে হবে না। কাউকে চাঁদা দিতে হবে না। কাজের মধ্যে নতুন নতুনত্ব ফিরছে। গোটা জেলে পরিবারে যেন আনন্দেও বন্যা বইছে। অন্যদিকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উটেছে সুন্দরবন ভ্রমনে। তবে প্রকৃতির অপরূপ অনাবিল সৌন্দর্যমন্ডিত রহস্যঘেরা এ বনভূমি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হলেও সেখানে নেই পর্যাপ্ত পর্যটন সুবিধা। এরপরও বন্য প্রাণী ও সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা প্রতিনিয়ত সেখানে ছুটে যাচ্ছেন।

বিশেজ্ঞরা বলছেন, মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় সৃষ্টি দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে দাঁড়িয়ে থাকা পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিশ্বের সেরা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট প্রকৃতির রহস্যঘেরা সুন্দরবন। সারি সারি সুন্দরী, পশুর, কেওড়া, গেওয়া এবং গোলপাতা গাছ। দৃষ্টি যতদূর যায় সব খানেই যেন কোন শিল্পী সবুজ অরণ্য তৈরি করে রেখেছেন। অপরূপ চিত্রল হরিণের দল, বন মোরগের ডাক, বানরের চেঁচামেচি, মৌমাছির গুঞ্জন ও বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের গর্জন। টেলিভিশনের পর্দায় নয়, ভ্রমণপ্রিয় মানুষ এখন ইচ্ছা করলে আগামি কাল থেকে নিরাপদে ঘুরে আসতে পারেন সুন্দরবন।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে সম্পদ আহরণে ১২ হাজার নৌকা ও ট্রলারকে বোর্ড লাইসেন্স সার্টিফিকেট (বিএলসি) দেয়া হয়। এসব নৌযানের মাধ্যমে প্রতি বছর এক-দেড় লাখ জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়াল সুন্দরবনে সম্পদ আহরণ করেন। বন সংরক্ষক মিহির কুমার বলেন, ‘সুন্দরবন শুধু জীববৈচিত্র্য নয়, মৎস্য সম্পদেরও আধার। জুন-আগস্ট মাছের প্রজনন মৌসুম। এ সময় সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। এ কারণে ১ জুন থেকে তিন মাসের জন্য জেলে ও পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বন বিভাগ। ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনে প্রবেশে পাস দেয়া হবে। নির্ধারিত ফরেস্ট স্টেশনগুলোকে এ বিষয়ে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। অনুমতিপত্রের মেয়াদ অনুযায়ী সুন্দরবনে অবস্থানকারী জেলেদের তালিকা বনরক্ষীদের ক্যাম্প কর্মকর্তার কাছেও থাকবে। বনরক্ষীরা তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি খালে টহল দিয়ে অনুমোদন পাওয়া জেলের নৌকা যাচাই করে দেখবেন।’

তবে সাধারণ জেলে ও বাওয়ালিদের অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞার সময়ে সুন্দরবনে অপরাধ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। বনসংলগ্ন এলাকার জেলেরা বিষ প্রয়োগে মাছ ও কাঁকড়া শিকার করেন। বনের ভেতরে গাছ পুড়িয়ে চলে শুঁটকি তৈরি। দেশ-বিদেশের বাজারে ওই চিংড়ির শুঁটকির চাহিদা ও দাম বেশি। মাছ ও কাঁকড়া সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার আড়ত ও বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হয়। এতে প্রকৃত জেলেরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। অপরাধীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।
এ প্রসঙ্গে বন সংরক্ষক মিহির কুমার বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময়ে সুন্দরবনকেন্দ্রিক সব ধরনের অপরাধ দমনে সচেষ্ট থাকেন বনরক্ষীরা। তবে এর মধ্যে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। দায়িত্ব পালনে বনরক্ষীদের কারও বিরুদ্ধে অবহেলা অথবা অপরাধীর সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ প্রমাণ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সূত্রমতে, প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই ভয়ংকর ঘূর্ণিঝঙকিংবা জলোচ্ছ্বাসের মত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সামনে দেয়াল হিসেবে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে রক্ষা করে আসছে সুন্দরবন। শুধু রক্ষা করেই থেমে থাকেনি সাথে সাথে বহু মানুষের জীবিকার জন্য রয়েছে কাঠ, মাছ, মধু ও গোলপাতা। সেই জনপদের মানুষ টিকে আছে মানুষ খেকো বাঘের সাথে যুদ্ধ করে। প্রত্যেক পদক্ষেপে পা গলানো কাদামটি, বিষাক্ত সাপ, হিং¯্র বাঘ, ১৭৭ টি নদীতে থাকা কুমির আক্রমণ কিংবা গহিন অরণ্যে থাকা দস্যুর আক্রমণের শংকায় মৃত্যুর হাতছানি প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়ায়।

সুন্দবন বিশেজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন সহ নানাবিধ কারণে আজকে আমাদের পরম আপন সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। পানি এবং মাটিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক গাছ টিকে থাকতে না পেরে মারা যাচ্ছে পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাণী এই পরিবর্তনের সাথে অভিযোজন না করতে পেরে বিলুপ্ত হচ্ছে। জলবায়ু গবেষকদের মতে আগামী ২০ বছরের মধ্যে সুন্দরবনের ঐতিহ্য সুন্দরী গাছও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তার সাথে রয়েছে কিছু অসাধু মহলের গাছ নিধন ও বনভূমি উজার।

 

 

Check Also

বাংলাদেশে একটি সফল ইসলামী বিপ্লবের স্বপ্ন দেখি: মুহাঃ ইজ্জতউল্লাহ

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের অন্যতম সদস্য অধ্যক্ষ মুহাঃ ইজ্জতউল্লাহ বলেছেন, প্রত্যেক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।