খুলনাতে থেমে থেমে টানা চারদিনের মুষলধারে বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে নগরীর বেশির ভাগ এলাকা। বেড়েছে সাধারণ মানুষের চরম দুর্ভোগ। গত শুক্রবার রাত থেকে ভারি বৃষ্টি শুরু হয় এ জেলায়। এরপর থেকে টানা চারদিন কখনো মুষলধারে আবার কখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। টানা বর্ষণে জেলা সদরসহ উপজেলাগুলোতেও পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। চারদিনের আবহাওয়ার এমন বৈরী আচরণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
ভারী বর্ষণের কারণে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালের দিকে সড়কে যানবাহন ছিল কম। এ অজুহাতে বৃষ্টিতে অধিক ভাড়া গুণতে হয়েছে জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়া সাধারণ মানুষকে।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের নিচতলার ক্লাস রুম, প্রশাসনিক ভবনের নিচতলা, খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পানিতে থই থই করছে। একই অবস্থা খুলনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক ইনস্টিটিউটে প্রবেশের রাস্তা এবং খেলার মাঠের। গভ. ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের খেলার মাঠে হাঁটু সমান পানি জমে আছে। জামিআ রশীদিয়া গোয়ালখালী পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া মুজমুন্নী, গোয়ালখালী, নবীনগর, বাস্তুহারা, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ভারী বর্ষণে আড়ংঘাটা থানার বিল ডাকাতিয়ার তেলিগাতী মৌজার সহস্রাধিক মাছ চাষির ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার চিংড়ি ও সাদা মাছ।
নগরীর শীববাড়ি মোড়ে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকা চায়ের দোকানী বলেন, টানা বৃষ্টিতে এতদিন দোকান খুলতে পারিনি। আজকে দুপুরের পরে এসে দেখি ভেজা চুলা, খোলা জায়গায় চুলা জ্বালাতে পারছি না। অসুস্থ স্বামী সন্তান নিয়ে থাকি। এই দোকান থেকেই আমাদের সংসার চলে। তিনদিন ধরে দোকান খুলতে পারিনি। তাই কোনো ইনকামও নেই। কালকে কিস্তি দিবো কি দিয়ে আর বাজারই বা কই পাব বুঝতে পারছি না। আল্লাহ কবে মুখ তুলে চাইবে বুঝতে পারছি না। আল্লাহ মাফ করো।
আজকে ছুটির দিন। সকালে বৃষ্টি হওয়ায় একটু দেরি হলো বাজারে আসতে। রাস্তায় স্থুপ করে রাখা ময়লা গুলো পানিতে ভাসছে, সেই পানি ঠেলে যেতে হচ্ছে গৌন্তব্যে। যার জন্য পায়ে চুলকানি হচ্ছে। ময়লা পানির চুলকানি ঘা নিয়ে আছি যেমন বিপত্তিতে তার থেকে বড় বিপত্তি বাজারে। দেরিতে বাজারে আসায় ফ্রেস সবজি যেমন কম তেমনই দাম অন্যদিনের তুলনায় অনেক বেশি। সবকিছু মিলিয়ে কয়দিনে অতি বৃষ্টি যেন আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য গলার কাটা হয়ে দাড়িছে খুলনা গেজেটকে এমনটাই বলেন আরিফুল আলম নামে একজন সরকারি চাকুরিজিবি।
খুলনা আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, নিম্নচাপের কারণে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা থেকে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ১৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। সোমবার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খুলনায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। আরও ২-১ দিন বৃষ্টি থাকবে।