খুলনার কয়রার ‘সবচেয়ে মজবুত’ বেড়িবাঁধে ভাঙন, বাসিন্দারা আতঙ্কে

খুলনার কয়রা উপজেলা সদরের কপোতাক্ষ নদের তীরে রয়েছে ২ নম্বর কয়রা, হরিণখোলা, ঘাটাখালী ও গোবরা গ্রাম। ২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে গ্রামগুলোর প্রায় ২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষ নদের নোনাপানিতে তলিয়ে যায়। এরপর প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ১ হাজার ৭০০ মিটার বেড়িবাঁধ। ওই বাঁধটিকে বলা হতো ‘উপজেলার সবচেয়ে মজবুত বেড়িবাঁধ’। তবে এবার ভাঙন দেখা দিয়েছে সেই বাঁধেও।

বেড়িবাঁধ ভাঙনে হুমকিতে পড়েছে বাঁধসংলগ্ন গ্রামসহ কয়রা উপজেলা সদরের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। এ ছাড়া ভাঙনরোধে অবিলম্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে কয়েক হাজার একর আমন ধানের খেত ও অসংখ্য মাছের ঘের নদের নোনাপানিতে ডুবে যাওয়ায় আশঙ্কা রয়েছে।

গত সোমবার সকালে হরিণখোলা গ্রামের কপোতাক্ষ–তীরবর্তী বেড়িবাঁধে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধের ৩০০ মিটার অংশ নদে ধসে পড়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে পাশের আরও ৫০০ মিটার। বাঁধের ধসে যাওয়া স্থান থেকে জিও বস্তা নদের পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। নদের পানির গতিপথ পাল্টে বেড়িবাঁধের গায়ে আছড়ে পড়ছে। বাঁধের ওপরে রয়েছে দীর্ঘ ফাটল। কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী এই বেড়িবাঁধে ফাটল দেখেছেন তাঁরা। তবে সোমবার সকালে বাঁধের ওপরে দেওয়া বস্তা ও বড় বড় মাটির খণ্ড নিয়ে ৩০০ মিটার অংশ মুহূর্তেই নদে বিলীন হয়ে যায়।

হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা মোকসেদ গাজী বলেন, এভাবে ফাটল ধরলে বাঁধের বড় অংশ যেকোনো মুহূর্তে নদে বিলীন হতে পারে। যত দিন যাচ্ছে, ভাঙন বাড়ছে। ভাঙন ছোট থাকলে মেরামতের জন্য অল্প টাকা বরাদ্দ হয়। সামান্য ওই টাকায় ঠিকাদার, প্রকৌশলী, কর্মকর্তা—কেউ লাভবান হন না। ভাঙন বড় হলে বরাদ্দ বেশি আসে। এতে সব পক্ষই লাভবান হয়। মূলত এ কারণেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২০২১ সালে এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। অথচ বছর না যেতেই ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর ঘাটাখালী গ্রামের অংশে ভাঙন দেখা দেয়। সেখানে ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে পুনরায় ১৩০ মিটার রিং বাঁধ নির্মাণ ও জিও ব্যাগ স্থাপন করেছে পাউবো। এরপর ২০২৩ সালে বাঁধটির ২ নম্বর কয়রা গ্রামের ২০০ মিটার অংশ নদে ধসে পড়ে। সেখানে এখনো সংস্কারকাজ চলছে। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হরিণখোলা গ্রামের বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার ধসে পড়ে। এখন আবার ৩০০ মিটার অংশেও ভাঙন দেখা গেছে। বারবার বাঁধ জোড়াতালি না দিয়ে নদের তীরে ব্লক দেওয়া দরকার।

হরিণখোলা বেড়িবাঁধ ধরে সামনে এগোলে ঘাটাখালী এলাকার বেড়িবাঁধ। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা জিও বস্তায় বালু ভরে বাঁধের ওপরে রাখছে। এখানে ২০০ মিটার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সংস্কারের কাজ করছেন তাঁরা।

এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহিম শেখ বলেন, হরিণখোলা, ঘাটাখালী, ২ নম্বর কয়রা গ্রামের ওই বাঁধকেই বলা হতো কয়রার সবচেয়ে মজবুত বেড়িবাঁধ। সেখানে যত বড় প্রকল্প ছিল, কাজ তত ভালো হয়নি। অধিকাংশ স্থানে বাঁধের দুই পাশ ও ওপরে মাটি দিয়ে ভেতরে বালু দেওয়া হয়। এ কারণে বাঁধ দুর্বল হয়ে ধসে যাচ্ছে। গত সোমবার বাঁধে ফাটল দেখা দিলেও এখন ভাঙনের পরিধি বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কী হবে, তা বলা যাচ্ছে না।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, জাইকার অর্থায়নে ঠিকাদারের মাধ্যমে ২০২০ সালের নভেম্বরে ১ হাজার ৭০০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হয়। কপোতাক্ষ নদের তীরের এই কাজ শেষ হয় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে। নির্মাণকাজে খরচ হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা। দুই পাশে মাটির দেয়াল ও মাঝখানে নালা কেটে বালু ভরাট করে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম শেখ বলেন, নির্মাণের সময় সঠিক তদারক না থাকায় অপরিকল্পিতভাবে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছিল। বাঁধের ভেতরে যদি বালু দেওয়া না হতো, তাহলে এ অবস্থা হতো না। এখন ভাঙনকবলিত স্থানে নদের পানিতে ঘূর্ণমান প্রবাহ দেখা যাচ্ছে। এতে বাঁধের নিচের অংশের মাটি দ্রুত সরে যাচ্ছে।

বেড়িবাঁধটি নির্মাণকালে পাউবো কয়রা উপজেলার সেকশন কর্মকর্তা মশিউল আবেদীন বলেন, তখন জরুরি মুহূর্তে মাটির সংকট থাকায় ভিন্ন নকশায় বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মাটির সংকট থাকায় প্রথমে বাঁধের মধ্যের স্থানে নালা কেটে বালু দিয়ে ভরাট করা হয়।

খুলনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘কয়রার বেড়িবাঁধ এত দিন সাতক্ষীরা পাউবোর আওতাধীন ছিল। আগে কী কী হয়েছে, জানি না। আমরা খুলনা পাউবো দায়িত্ব নেওয়ার পর বাঁধটি পুনরায় সংস্কারের জন্য প্রকল্প অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।’

Check Also

সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা  অনুষ্ঠিত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।