শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন এই ট্রাইব্যুনাল।

১৮ নভেম্বরের মধ্যে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে এই ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আজ বৃহস্পতিবার পৃথক দুটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে চলা হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সকালে বিচারকাজ শুরু হয়েছে।

যাঁদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ প্রমুখ। পরোয়ানা জারির আবেদনের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের আমল এবং জুলাই–আগস্টে তাঁদের ভূমিকা তুলে ধরা হয় ।

এই অপরাধগুলো বিস্তৃত মাত্রায়, সারা বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম এই অপরাধের আসামি যাঁরা, তাঁরা অসম্ভব রকমের প্রভাবশালী, তাঁদের গ্রেপ্তার করা না হলে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করাটা অসম্ভব কঠিন। তাঁদের ভয়ে সাধারণ মানুষ, এমনকি শহীদ পরিবারের সদস্যরা কথা বলতে সাহসী হচ্ছেন না। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আমরা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানিয়েছিলাম।’

ট্রাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান তাজুল ইসলাম। ১৮ নভেম্বরের মধ্যে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে এই ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

দ্বিতীয় আরেকটি আবেদনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানানো হয়েছে। সেটিও মঞ্জুর করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এই অপরাধীদের অনেকে এখনো রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। সে কারণে তাঁদের সবার নামপ্রকাশ করা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার, ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মহিতুল হক এনাম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ শুরু হয়েছে

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ শুরু হয়েছেছবি: দীপু মালাকার

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। এই ট্রাইব্যুনালে ইতিমধ্যে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অনেকের বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আরও কয়েকজনের বিচার ট্রাইব্যুনালে চলছিল।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এরপর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।