দীর্ঘ চার বছর অপেক্ষার পর অবশেষে সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনী পালে হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। দ্রুত গতিতে জমে উঠছে আদালত পাড়ার ভোটের পরিবেশ। আজ রবিবার মনোনয়নপত্র দাখিলের মধ্য দিয়ে চূড়ান্তভাবে মাঠে নামবেন প্রার্থীরা। আগামী ২১নভেম্বর সমিতির বার্ষিক নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটার আইনজীবীদের কাছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও নেয়া হচ্ছে সার্বিক প্রস্তুতি। এবারের নির্বাচনে ৫৫২জন ভোটার আইনজীবী আগামী এক বছরের জন্য কার্যনির্বাহী পরিষদের নেতা নির্বাচন করবেন।
উল্লেখ্য, সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০২০ সালে। উক্ত নির্বাচনে নির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই বেশিরভাগ সদস্য পদত্যাগ করায় শুরু হয় জটিলতা। একপর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে চলতে থাকে আইনজীবী সমিতি। প্রকাশ্য দুইটি গ্রুপে বিভাক্ত হয়ে যান সমিতির সদস্যরা। বিভিন্ন সময় গঠিত হয় নির্বাচন কমিশন। প্রতিটি গ্রুপ তাদের ইচ্ছামতো নির্বাচন করার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন নির্বাচনই চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হয়নি।
১৮৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী ওই সমিতির সদস্যদের মধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় সংঘর্ষের ঘটনাসহ মামলা মোকদ্দমা দায়েরের ঘটনাও ঘটে। একে অপরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটে একাধিকবার। এক পর্যায়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাচনী ব্যালট পেপারসহ ব্যালট বাক্স জব্দ করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ভোট বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে ভোট বিহীন চলে প্রায় দীর্ঘ চারটি বছর। একাধিক সিনিয়ার আইনজীবী জানান, সমিতি পরিচালনায় ছিলনা কোন নির্বাচিত কমিটি। অনেকটা বাহুবল ও রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী সমিতি পরিচালনা করা হয়েছে দীর্ঘদিন যাবত। কিন্তু সাধারণ আইনজীবীরা সকল সময় প্রত্যাশা করতেন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা আইনজীবী সমিতি পরিচালিত হোক। কারণ সমিতির ছয় শতাধিক সদস্যের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। অবশেষে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে গঠিত অন্তআর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের অন্যান্য স্থানের মতো সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতিতেও গঠন করা হয় একটি অন্তর্বর্তীকালীন আহ্বায়ক কমিটি। উক্ত আহ্বায়ক কমিটি সমিতির বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ৭ সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২১নভেম্বর আইনজীবী সমিতির সেই কাক্সিক্ষত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দিন ধার্য করেছে। ফলে আইনজীবীরা পূর্বের দ্বিধাদ্বন্দ্বকে ভুলে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে লাইনচ্যুত হওয়া আইনজীবী সমিতিকে সঠিক লাইনে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যাতে করে আগামী দিনগুলিতে নির্বাচিত কমিটির মাধ্যমে আইনজীবী সমিতি পরিচালিত হয়।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমিতির সাবেক একাধিক নেতৃবৃন্দ এবং একাধিক সিনিয়র আইনজীবী জানান, দীর্ঘদিন যাবত সমিতির নির্বাচিত কমিটি না থাকায় সমিতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আর্থিক বিষয় নিয়েও সমিতির সদস্যদের মধ্যে শংকা তৈরী হয়েছে। বার এবং বেঞ্চের মধ্যে সমন্বয় সাধন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আইনজীবী এবং বিচারপ্রার্থীরা নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
তারা আরও বলেন, বিচারকরাও সময় মতো এজলাসে ওঠেন না, খাস কামরায় চা-কফি খেয়ে, খোশ গল্প করে কর্মঘন্টা নষ্ট করেন। জেলার আশাশুনি ও শ্যামনগরের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিচারপ্রার্থী নারী-পুরুষ আদালত অঙ্গনে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা অলস সময় পার করেন। বেলা সাড়ে ১১ টার আগে কোন বিচারক এজলাসে ওঠেন না। আদালত সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা ইচ্ছামত অবৈধ অর্থ গ্রহন করেন। এসব ব্যাপারে নির্বাচিত কমিটি না থাকায় কোন প্রকার প্রতিবাদও করা যায় না। ফলে সাতক্ষীরার আদালত অঙ্গন দীর্ঘদিন একটা শূন্যতার মধ্য দিয়ে চলছে বলে দাবি করেন ওইসব আইনজীবী নেতৃবৃন্দ। তারা আশা প্রকাশ করেন, আগামীতে নির্বাচিত কমিটি বার ও বেঞ্চের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে চলতে পারলে সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা উপকৃত হবেন।