এখন কেন মৌখিক পদত্যাগপত্রের ভুয়া গল্প প্রচার করছেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে দেওয়া রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সাক্ষাৎকারকে ঘিরে তুমুল বিতর্কের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার উদ্দেশে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার।

সোমবার রাতে দেওয়া ওই স্ট্যাটাসে নানা প্রশ্ন ছোড়ার পাশাপাশি কিছু পরামর্শও দিয়েছেন ফরহাদ মজহার।তিনি লিখেছেন, ‘উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভূঁইয়া লিখেছেন, ‘রাষ্ট্রপতির কাছে মৌখিকভাবে পদত্যাগ করেছিল স্বৈরাচারী খুনি হাসিনা। পদত্যাগপত্র নিয়ে বঙ্গভবনে যাওয়ার কথা থাকলেও ছাত্র-জনতা গণভবনের কাছাকাছি চলে এলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় খুনি হাসিনা।’

তিনি লেখেন, ‘আসিফ, এটা সত্য নয়। মৌখিকভাবে পদত্যাগের কথা কখনোই বলা হয়নি। সবসময়ই রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যে জন্য আমি আমার একটি ভিডিওতে পদত্যাগপত্র দেখতে চেয়েছি। আপনারা তখন দেখাতে পারেননি। এখন কেন মৌখিক পদত্যাগপত্রের ভুয়া গল্প প্রচার করছেন?’

ফরহাদ মজহার লেখেন, ‘শুরু থেকেই আমরা বলেছি, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে শপথ নেওয়া ছিল আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। কিন্তু আপনারা সেটাই করেছেন। আপনারা সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার বানিয়েছেন। বাস্তব সত্য স্বীকার করুন। এটা কি ঠিক করেছেন? আমার ভিডিওগুলো আবার শুনুন। পোস্টগুলো আবার পড়ুন।’

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে উদ্দেশ করে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক লেখেন, ‘আপনারা আমাদের কারো কথা শোনেননি। এমনকি কথা বলারও প্রয়োজন বোধ করেননি। আপনাদের অনেকে দাবি করেছেন, ট্রেন মিস হয়ে গেছে, এখন আর কিছু করা যাবে না। এটাও ঠিক নয়। অবশ্যই সমাধান আছে। এখন সমাধানের কথা আলোচনা না করে পদত্যাগপত্র নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াবেন না।’

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে উদ্দেশ করে ফরহাদ মজহার আরও বলেন, ‘উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং আপনাদের এখন ব্যাখ্যা করতে হবে কোন যুক্তিতে আপনারা গণঅভ্যুত্থানকে ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে ঢুকিয়েছেন এবং সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লবে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন। এখন যে ভয়াবহ রাজনৈতিক এবং আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, সেই অবস্থা থেকে নিষ্ক্রান্ত হবেন কিভাবে? সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকারতো এখনো অবৈধ। এর বৈধতা প্রতিষ্ঠার জন্য কী করছেন?’

তিনি লেখেন, ‘আসিফ নজরুলসহ আপনারা সেনাপ্রধান এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনার নিযুক্ত সেনাবাহিনীর কিছু উচ্চপদস্থ অফিসারদের সঙ্গে নিয়ে যে রাজনৈতিক আঁতাত গড়ে তুলেছিলেন, সেটা শুরু থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। এখন তা অনেক জটিল রূপ পরিগ্রহণ করেছে। শুধু তাই নয়, আপনারা সাধারণ সৈনিকদের দেশপ্রেম এবং গণঅভ্যুত্থানে তাদের অবদানকেও অস্বীকার করেছেন।’

ফরহাদ মজহার আরও লেখেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান ছিল ছাত্র-জনতা-সৈনিকদের অভ্যুত্থান। কিন্তু আপনারা সাধারণ সৈনিকদের অবদান অস্বীকার করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নিযুক্ত সেনাপ্রধানের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। সাধারণ সৈনিকদের দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি আনুগত্যকে গণশক্তিতে রূপান্তরিত করার পরিবর্তে ফ্যাসিস্ট হাসিনার জেনারেলদের সঙ্গে আঁতাত করা কি ঠিক হয়েছে? আত্মসমালোচনা করতে শিখুন। আমরা বারবার এর সমালোচনা করেছি। তথাকথিত সাংবিধানিক শূন্যতা এবং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার নামে যেভাবে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা আপনারা টিকিয়ে রেখেছেন, তা আবার বিষধর সাপ হয়ে বাংলাদেশকে ছোবল মারতে উদ্যত। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের অভিপ্রায়ের পূর্ণ বাস্তবায়নে আপনারা যে বিঘ্ন ঘটিয়েছেন, দয়া করে তা উপলব্ধি করুন। সমাধানের পথ খুঁজুন।’

স্ট্যাটাসের শেষার্ধ্বে ‘জনগণই শক্তির উৎস’ উল্লেখ করে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ‘আসুন, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে নিষ্ক্রান্ত হওয়ার সঠিক রণনীতি ও রণকৌশল আমরা আগে নির্ণয় করি। মনে রাখবেন, জনগণই আমাদের শক্তির উৎস, জেনারেলরা নয়। জনগণের শক্তির মানে হচ্ছে ছাত্র-জনতা ও সৈনিকের মৈত্রী। এই মৈত্রীকে জোরদার করুন। জনগণের জয় হোক।’

Check Also

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের কর্মশালায় সাংবাদিকদের দাওয়াত নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ 

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় হাওর না থাকলেও হাওরের ১০০ বছর এবং আমাদের করণীয়” বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।