মোজাফফর হোসাইন: শ্যামনগর
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে, আর এতেই আতঙ্ক নেমেছে উপকূলজুড়ে। ‘দানা’ নামের এই ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে উপকূলের ঝুঁকিতে থাকা কয়েক হাজার মানুষ।
পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এর কিছুটা প্রভাব ইতোমধ্যে উপকূলে পড়তে শুরু করেছে। সকাল থেকে পুরো আকাশ মেঘলা, বইছে হালকা বাতাস এবং শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এতে উদ্বিগ্ন উপকূলের মানুষ ও,তবে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
কাল দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কি. মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৪৫ কি. মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করেছে ঘূর্ণিঝরটি। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কি. মি.-এর মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি. মি.। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কি. মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপকূলবাসী বিগত বছরগুলোর দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই নতুন করে আবারও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। উপকূলের অধিকাংশ দুর্বল এবং কাজ চলমান বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। অধিকাংশ এলাকায় বহু আগে নির্মাণ করা এখানকার বেড়িবাঁধগুলো আর পুনর্নির্মাণ করা হয়নি তেমন ভাবে। তবে এসব বাঁধ এখন আর সামাল দিতে পারছে না ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কা। জিও ব্যাগের বালুর বস্তা আর রিং বাঁধ দিয়ে কোনোরকম টিকিয়ে রাখা হয়েছে কয়েক স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো।
সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকায় ২০০৯ সালের আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আইলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া উপকূলীয় এলাকাগুলো মধ্য শ্যামনগর উপজেলা অন্যতম এবং দক্ষিণ অঞ্চলের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে এ উপজেলায় গাবুরা, পদ্মপুকুর,আটুলিয়া, কাশীমাড়ি, বুড়িগোলীনী খুবই ভয়াবহ অবস্থা হয় ঘূর্ণিঝড়ের সময়।
উপকূলে বসবাস করা মানুষেরা ঘূর্ণিঝড়ের খবরে আতঙ্কে দিন পার করছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে শ্যামনগর উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসরত হাজারো পরিবার। দুর্যোগে সাগর এবং নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এসব এলাকার মানুষের মধ্যে। দুর্বল বেড়িবাঁধ তাদের উদ্বেগের প্রধান কারণ।
এদিকে ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহ মিলে ১৬২ সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত, পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনা খাবার, জান মালের ক্ষতি এড়াতে ২জাহার ৯৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং দুর্যোগ প্রস্তুতি সভা হয়েছে।