বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলমের রংপুরে আগমনের পূর্বঘোষণা ছিল। ঘোষণা অনুযায়ী, আজ শনিবার সারজিস রংপুরে এলেও হাসনাত আসেননি। বিষয়টিকে একধরনের বিজয় বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান।
রংপুরে আজ দিনভর আলোচনার বিষয় ছিল হাসনাত-সারজিসের আগমন, জাতীয় পার্টির বিক্ষোভ ও লাঠি মিছিলের বিষয়টি। হাসনাত আবদুল্লাহর রংপুরে আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আসেননি—এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তাফিজার রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘এটা একধরনের বিজয় বলা যেতে পারে আমাদের। তবে সমন্বয়ক সারজিস আলম রংপুরে এলেও আইজিপির সফরসঙ্গী হিসেবে প্রটোকল থাকায় আমরা আজ মাত্র এক ঘণ্টার বিক্ষোভ সমাবেশ করেছি। তাঁদের নিজস্ব কোনো কর্মসূচি থাকলে আমরা জাতীয় পার্টি প্রতিহত করব।’
মোস্তাফিজার রহমান আরও বলেন, ‘আমরা জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এই দুই সমন্বয়ককে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিলাম। হঠাৎ জানতে পারলাম, রংপুরে তাঁরা (হাসনাত-সারজিস) আসছেন। তাও আবার পুলিশের আইজিপি মহোদয়ের এক অনুষ্ঠানে। তাঁদের আগমনের প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে দলীয় নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন। আজকেও করা হয়েছে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমের রংপুরে আগমনের প্রতিবাদে আজ শনিবার দুপুর সোয়া ১২টা থেকে বেলা সোয়া ১টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী রংপুরের রাজপথে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে। জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। আজ দুপুর সোয়া ১২টার দিকে নগরের নগরের সেন্ট্রাল রোডের জাতীয় পার্টির কার্যালয় থেকে জাতীয় পার্টির কো–চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমানের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলে জাতীয় পার্টির অনেক নেতা-কর্মীর হাতে লাঠি ছিল। মিছিলটি নগরের জাহাজ কোম্পানি মোড় হয়ে প্রেসক্লাব চত্বর এলাকায় যায়। সেখান থেকে পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ মোড় দিয়ে ঘুরে পায়রা চত্বর মোড়ে যায় বেলা সোয়া একটায়। পরে সেখানে সমাবেশ হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন মোস্তাফিজার রহমান, জাতীয় পার্টি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্যসচিব এস এম ইয়াসির প্রমুখ।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সংলাপ করেছেন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। এ নিয়ে তাঁরা ফেসবুক পোস্টে জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে উল্লেখ করেন। এতে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে ১৪ অক্টোবর জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও নেতা সারজিস আলমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুরের প্রতিনিধি ইমরান আহমেদ বলেন, হাসনাত আবদুল্লাহর আসার কথা থাকলেও অন্য একটি অনুষ্ঠান থাকায় তিনি আসেননি। এসেছেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতবিনিময় সভা শেষে আজই তিনি সৈয়দপুর বিমানবন্দর হয়ে ঢাকায় চলে যাবেন।
সারজিস আলম রংপুর মহানগর পুলিশের ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পুলিশ লাইনস স্কুল ও কলেজ মিলনায়তনে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিকেলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সারজিস।