পানি উন্নয়ন সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মো. আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে প্রকল্প অনুমোদনের আগেই হাতিয়েছেন দুই কোটি টাকা

আবু সাইদ  সাতক্ষীরাঃ সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বিভাগ ১-এর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী বর্তমানে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মো. আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোনোর উপক্রম হয়েছে। সাতক্ষীরায় কর্মরত থাকাকালে (২০১৮-২২) সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম ও টেন্ডারবাজি করে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্প বানিয়ে বিল ভাউচার তৈরি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। এ ছাড়া বেড়িবাঁধে টেন্ডারবিহীন ডিপিএম কাজেও শতকোটি টাকা হরিলুট করেছেন এই প্রকৌশলী।

ইতোমধ্যে আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ মতে, আবুল খায়ের সাতক্ষীরায় দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত পটুয়াখালী সদরের মুসলিমপাড়া আজাদ ভবনের মেসার্স আবুল কালাম আজাদের নামে কয়েক কোটি টাকার কাজ করেছেন টেন্ডার ছাড়াই। এমনকি সংশোধন উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদনের আগেই বাঁধের অন্য স্থানে চেইনেজ

সাতক্ষীরার পোল্ডার নং-১, ২, ৬-৮ এবং ৬-৮ (এক্সটেনশন)-এর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পোল্ডার নং-১ এর সদর উপজেলার বাঁকাল এলাকায় বাঁধের ৪ কিলোমিটার হতে ৭ কিলোমিটার, চরবালিথা এলাকায় ১৫ কিলোমিটার থেকে ১৭ কিলোমিটার এবং সদরের বলদঘাটা এলাকায় ৬০ কিলোমিটার থেকে ৬৪ দশমিক ৪০০ কিলোমিটার সর্বমোট ৩টি স্থানে ৯ দশমিক ৪০০ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ কাজে কাজবহির্ভূত ভুয়া চেইনেজ দেখিয়ে ২ কোটি টাকা বিল করে আত্মসাৎ করেছেন- এসব স্থানে ন্যূনতম কোনো কাজ করা হয়নি।

উক্ত কাজে সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন করার আগেই এই প্যাকেজে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বাঁধের ৩টি স্থানের বাইরে অন্য স্থানে বিল প্রদান করেছে নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের। যার প্যাকেজ নং- ডব্লিউ সাত-১/১০, টেন্ডার আইডি নং-৫১০৭১৭। এই কাজের চুক্তিমূল্য : ৫ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ২২৮ টাকা ৩০ পয়সা। এ কাজেরও ঠিকাদার মেসার্স আবুল কালাম আজাদ।

এই কাজেও বাঁধের ৩টি স্থানে যে পরিমাণ মাটির কাজ করা হয়েছে কমিশন নিয়ে এই প্রকৌশলী আবুল খায়ের তার চেয়েও অনেক বেশি টাকা বিল প্রদান করেছেন। ম্যানুয়াল লেবার দ্বারা কাজ না করলেও ম্যানুয়াল লেবার ও লিড আইটেমের বিল প্রদান করা হয়েছে। বলদঘাটা (গাজীপুর, ঘোনা) নামক স্থানে ৪ দশমিক ৪০ কিলোমিটার কাজের মধ্যে ৫ ভাগও মাটির কাজ না করে বিল প্রদান করা হয়েছে। ঘাস ও গাছ লাগানো আইটেমটিতে কাজের অতিরিক্ত বিল প্রদান করা হয়েছে এবং ওই কাজে সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন না করেই এই প্যাকেজে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ৩টি স্থানের বাইরে বাঁধের অন্য স্থানে বিল প্রদান করা হয়েছে। সর্বোপরি ওই প্যাকেজে ২ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে কাজের অতিরিক্ত বিল প্রদান করে টাকা আত্মসাৎ করেছে প্রকৌশলী আবুল খায়ের। এমন বিভিন্ন খাত থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বেনামে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি।

এসব বিষয় লিখিতভাবে দুদকের কাছে অভিযোগ করেছেন সাতক্ষীরার ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার মো. সফিউর রহমান। জানা গেছে, অভিযোগের পর দুদক কর্মকর্তা সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে এসব অভিযোগ সংক্রান্ত বেশ কিছু কাগজপত্রও জব্দ করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি দুদক।

এ বিষয়ে আবুল খায়েরের সঙ্গে কয়েক দফা সেলফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে দুদক খুলনা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো. রুবেল হোসেন জানান, দুদক বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত করছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

Check Also

সরকারের সংস্কার কাজে সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল এ. চুলিক এবং অ্যান্ড্রু হেরাপের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফররত সে দেশের একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।