সাতক্ষীরায় সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের তিন খেলোয়াড়কে গণসংবর্ধনা

সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনসহ তিনজনের বাড়ি সাতক্ষীরা শহরে। ৩০ অক্টোবর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বিজয়ী হওয়ার পর এই তিন খেলোয়াড় বুধবার নিজেদের এলাকায় এসেছেন। তাঁদের আজ বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বর্ণাঢ্য গণসংবর্ধনা।

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সাফল্যে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন সাতক্ষীরার কৃতী খেলোয়াড় অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, ডিফেন্ডার মাছুরা পারভীন ও আফঈদা খন্দকার। ২০২২ সালে নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে রচিত হয়েছিল এক নতুন গল্প। সেখানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাবিনা খাতুন। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন মাসুরা খাতুন। তাঁর সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে আফঈদা খন্দকার প্রান্তি। একই মাটিতে ২০২৪ সালে ৩০ অক্টোবর সেই গল্পের নতুন অধ্যায় লিখলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। আর এ অবিস্মরণীয় সাফল্যে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাতক্ষীরার মেয়ে সাবিনা। টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে দেশকে গর্বিত করেছে এই নারী ফুটবল দল।

নারী ফুটবল দলের সাফল্যে সাতক্ষীরার মানুষ ভীষণ খুশি। সাফল্যের আনন্দ ভাগাভাগি করতে সাতক্ষীরার সর্বস্তরের মানুষ আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে এক হয়েছিলেন। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে এই তিন গর্বিত খেলোয়াড়কে দেওয়া হয় গণসংবর্ধনা। জেলা শহরের স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। ব্যান্ড সংগীত, স্থানীয় শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও খেলোয়াড়দের নিয়ে স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে এক অন্য রকম অনুষ্ঠানে পরিণত হয় এ আয়োজন।

গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এই তিন মেয়ে শুধু সাতক্ষীরার নয়, পুরো বাংলাদেশের গর্ব। তাদের সাফল্য নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। এখানেই থেমে গেলে চলবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, খেলার মান উন্নয়নে বিশেষ করে নারী ফুটবলের মান উন্নয়নে ইনডোর স্টেডিয়াম ও মহিলা স্টেডিয়াম নির্মাণের পাশাপাশি খেলাধুলায় নারীদের আগ্রহী করে তুলতে হবে।’

অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বক্তব্য রাখতে গিয়ে আক্ষেপ করে বলেন, শুধু ফুটবলে নয়, বিভিন্ন খেলায় সাতক্ষীরার ছেলেমেয়েরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমার ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় সাতক্ষীরা জেলা স্টেডিয়ামে বড় ধরনের কোনো টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। পরবর্তী প্রজন্মের সাবিনা, মাছুরা ও আফঈদাকে উঠিয়ে আনার কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা চাই আমাদের মতো সাতক্ষীরা থেকে আরও খেলোয়াড় উঠে আসুক, তারা দেশের জন্য ভূমিকা রাখুক। তাদের নিয়ে যেন আমরা গর্ব করতে পারি। তাদের সম্মানিত করতে পারি। আমি সাতক্ষীরা জেলার প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাব, নারী ফুটবলের পাশাপাশি যেন অন্যান্য খেলাকে প্রাধান্য দিয়ে খেলোয়াড়দের সঠিক পরিচর্যা করা হয়।’

সাফজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের হাতে ক্রেস্ট তুলে দিচ্ছেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ। আজ বৃহস্পতিবার জেলা শিল্পকলা মিলনায়তনে
সাফজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের হাতে ক্রেস্ট তুলে দিচ্ছেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ। আজ বৃহস্পতিবার জেলা শিল্পকলা মিলনায়তনেছবি: প্রথম আলো

সাবিনা খাতুন আরও বলেন, ‘আমাদের সাফল্যের পেছনে পুরো জাতির দোয়া এবং পরিবারের সমর্থন ছিল। সাতক্ষীরার মানুষ সব সময় আমাদের পাশে থেকেছেন। আপনাদের এই ভালোবাসা আমাদের আরও বড় স্বপ্ন দেখতে সাহস জোগায়।’

মাছুরা খাতুন বলেন, ‘সাতক্ষীরা এলে মনে হয়, সব মানুষ আমাদের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। ছোট-বড় সবার ভালোবাসায় আমি, আমরা সিক্ত। স্থানীয়ভাবে খেলোয়াড় তৈরি করতে হবে। খেলাধুলায় আগ্রহী করে তোলার পাশাপাশি খেলোয়াড়দের সুযোগ–সুবিধা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।’

আফঈদা খন্দকার বলেন, ‘আমার বাবা খেলোয়াড় ছিলেন। আমাকে তৈরি করার জন্য সকাল–বিকেলে পরিশ্রম করেছেন। আমি তাঁর কথা রাখতে পেরেছি। সাতক্ষীরাবাসী আমাদের নিয়ে গর্ব করে। আমরা সাতক্ষীরা তথা বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করতে পেরে গর্বিত।’

সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের ডিফেন্ডার মাছুরা পারভীন ও আফঈদা খন্দকারের হাতে ক্রেস্ট তুলে দিচ্ছেন অতিথিরা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে জেলা শিল্পকলা মিলনায়তনে
সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের ডিফেন্ডার মাছুরা পারভীন ও আফঈদা খন্দকারের হাতে ক্রেস্ট তুলে দিচ্ছেন অতিথিরা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে জেলা শিল্পকলা মিলনায়তনেছবি: প্রথম আলো

গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাবেক ফিফা রেফারি তৈয়ব হাসান। এতে  পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবুল হাশেম, সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বাসুদেব বসু, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিষ্ণুপদ পাল, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী, বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ ও ফুটবলার আফঈদা খন্দকারের বাবা খন্দকার আরিফ হাসান প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান শেষে সাফজয়ী এই তিন নারী ফুটবলারকে ফুলেল শুভেচ্ছা, ক্রেস্ট এবং সংবর্ধনা স্মারক দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাঁদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে প্রাইজমানি দেওয়া হয়।

Check Also

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করেননি সমাজী

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।