মুহতারাম আমীরে জামায়াতকে সাতক্ষীরায় স্বাগতম
“দেশের সীমানা নদীর ঠিকানা যেথা গিয়েছে হারিয়ে,
সেটা সাতক্ষীরা রূপময় ঘেরা বনানীর কোলে দাঁড়িয়ে।”
সাগর মেখলা বিধৌত চির সবুজ ছায়াঘেরা বনানীর রূপময় বেষ্টনীতে বাংলাদেশের দক্ষিণ—পশ্চিমের সাগর সঙ্গমে সৃষ্ট আড়পাঙ্গাশিয়ার উৎস মুখে কপোতাক্ষী—খোলপেটুয়ার মিলনমেলার বেলাভূমিতে উত্তর—পূর্বমুখী অবস্থান নিয়ে অসংখ্য খাল—বিল, নদী—নালা আর ঝিল—পুকুরের শাপলা—শালুকের পুষ্পিত বুকে সৌন্দর্যের পশরা নিয়ে স্ব—গর্বে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের প্রিয়ভূমি সাতক্ষীরা। বিশ্ব বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অগ্নিঝরা সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টি আর মায়াবন বিহারিনী হরিণীর অশ্রু—নয়না সচকিত মায়াময় চাহনির দৃষ্টি—নান্দনিকতার মধুময় আলিঙ্গনে— হে প্রিয় আমীরে জামায়াত ডঃ শফিকুর রহমান— তোমাকে স্বাগত অভিবাদন।
তোমাকে স্বাগত অভিবাদন বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের পথিকৃত সাতক্ষীরার সাতচল্লিশ জন মর্দে মুজাহিদের কলিজা—ছেড়া রক্তে ভেজা এ শহীদ ইদগাহের রক্ত পলল বেলাভূমিতে। তোমাকে সু—স্বাগতম সাতক্ষীরার প্রায় ছাব্বিশ লক্ষ জনতার হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর সম্প্রীতির বাহুডোরের বুকভরা আলিঙ্গনে।
হে বীর পুরুষ!
বাংলাদেশের কোটি কোটি ছাত্র জনতার পদভারে প্রকম্পিত ২০২৪—২৫ এর জুলাই—আগস্টের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বৈপ্লবিক শিখরে যে স্ফুলিঙ্গের বারুদ সৃষ্টি হয়েছিল ঐ প্রজ্জ্বলিত বারুদের প্রতিটি অগ্নিকনার ঝলকানির আভায় উৎসারিত তোমার আজকের এই আগমনী বার্তায় দগ্ধিভূত হয়ে পুড়ে ছারখার হোক বিগত পনের বছরের পতিত—গলিত স্বৈরশাসকের তখত—তাউস। আর উৎপাটিত হোক সন্ত্রাসী, জুলুমবাজ আর ফ্যাসিস্ট বাদের স্বমূল—শিকড়।
হে দেশ—জাতি—সাম্যবাদী তত্ত্বের বিপ্লবী দার্শনিক!
তোমার মুখ নিঃসৃত উচ্চারিত ‘সংখ্যালঘু’ তত্ত্বের বৈপ্লবিক চেতনার অলিন্দ—অবয়বে মানুষ্য জাতি— ধর্মের বিভাজিত কুসংস্কারে উপমহাদেশের আপামর জনগোষ্ঠীকে নিকৃষ্ট শ্রেণী—ভেদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে আধিপত্যবাদীদের শাসন—শোষণ আর বৈরীতার যূপকাষ্ঠে স্বেচ্ছাচারী স্বৈর—শাসকগণ এতোদিনে যে বলিদানের কু—সংস্কৃতির ফাঁদ তৈরি করেছিল, তুমি সেই অপবাদী ‘সংখ্যালঘু আর সংখ্যাগুরুর তাত্ত্বিক বৈষম্যের দেয়াল স্ব—মূলে উৎপাটন করে “আমরা সবাই দেশ—জাতির সন্তান— সম অধিকারে সবাই সমান” সাম্যবাদের এ আধুনিক বৈপ্লবিক চেতনার শ্লোগান তুলে, তুমি দেশ মাতৃকার কোটি জনতাকে যে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছ, এজন্য তোমাকে আবারো অযুত—কন্ঠে জানাই বিপ্লবী অভিনন্দন।
হে নবজাগরণের অকুতোভয় মানবতাবাদী সূর্য সৈনিক!
বন্যা ঝঞ্ঝা বিক্ষুদ্ধ বঙ্গীয় ব—দ্বীপের কোটি কোটি জনতার জীবন ছাপিয়ে যখন টর্নেডো ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডব শুরু হয়,জলোচ্ছ্বাসের করাল গ্রাসে যখন দেশজাতির জীবন বিপন্ন হয়ে যায়, মানুষ অনাহারে—অর্ধাহারে আশ্রয়হীন হয়ে কোটি জনতার অন্তরাত্মা যখন হাহাকার করে ওঠে, তুমি তখন নিশ্চিন্তে বসে বসে ফরমায়েশী পরিকল্পনার তোয়াক্কা না করে নিজ দলের লড়াকু—চৌকস—সাবধানী পূর্ব প্রস্তুতির একদল জানবাজ কর্মী বাহিনী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো উপদ্রুত এলাকায়। হাটু সমান স্রোত আর বুক সমান ঢেউয়ের তাণ্ডবেও তুমি থামিয়ে রাখনি তোমার মানবতার সেবায় নিয়োজিত চলমান দ্বৈত রথ। এখানেও তুমি তোমার সহযোগিতার হস্তকে বাড়িয়ে দিয়েছো জাতি—ধর্ম নির্বিশেষে সকল শ্রেণী—পেশার মানবতার দুয়ারে। আশ্রয়হীনকে দিয়েছো আশ্রয়ের সম্বল, খাদ্যহীনকে দিয়েছো খাদ্য সহযোগিতা, অসুস্থ আঘাতপ্রাপ্ত, অসহায়দের করেছ সুচিকিৎসার ব্যবস্থা। নিহত পরিবারের অসহায় এতিমদের দায়িত্ব তুলে নিয়েছে নিজের কাঁধে। নবজাগরণের আশার আলো ছড়িয়েছ উপদ্রুত জনপদে।
হে মানবতাবাদী অকুতোভয় সূর্য সৈনিক! তোমাকে আবারো লাখো কোটি সালাম ও মুবারকবাদ।
হে ইসলামী আন্দোলনের বিপ্লবী সিপাহসালার!
বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের রক্ত—রঞ্জিত ময়দানের রক্তিম পলল ভূমি — এ সাতক্ষীরা। স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট, খুনি, নৃশংস হাসিনা সরকারের পোষ্য—পেটুয়া ও গুন্ডা বাহিনীর পর্যায়ক্রমিক আক্রমণের শিকার এ তপ্ত জনপদের জনগণ। আচমকা গুলিতে, জিঘাংসিত গুপ্তহত্যায়, আকস্মিক ক্রসফায়ারে, নির্যাতিত রিমান্ডে সাতক্ষীরার এই বদর—ভুমিতে এ যাবৎ শহীদি মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় ছয়চল্লিশ জন তাজা প্রাণ। এর মধ্যে রয়েছেন তেজোদীপ্ত চিরো কিশোর—চিরো যুবকদের সংগ্রামী কাফেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদ্য প্রস্ফুটিত কিছু রক্ত গোলাপ। রয়েছেন দ্বীন কায়েমের অতন্ত্র প্রহরী শহীদি কাফেলা জামায়াতে ইসলামীর মর্দে মুজাহিদ কর্মী— বাহিনী সহ দ্বীনি আন্দোলনের স্বেচ্ছায় আত্মাহুতির সংগ্রামী ছাত্র—জনতা। তাদের বিদেহী আত্মার সাথে একাত্ম হয়ে আকুল আকুতি জানাচ্ছে সাতক্ষীরা জনপদের অযুত কোটি বিপ্লবী কন্ঠ। তারা ফরিয়াদ করে করে বলছে, “হে আমাদের রব! এ জনপদ থেকে আমাদের উদ্ধার কর, এখানকার জালিমদের কবল থেকে, আর আমাদের জন্য পাঠাও তোমার পক্ষ থেকে উত্তম উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী।” নিপীড়িত সাতক্ষীরাবাসীর এ অযুত কন্ঠের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে আজ সমগ্র বাংলাদেশীরাও একাত্ম হয়ে আওয়াজ তুলছে—হে আমীরে জামায়াত! তোমার নেতৃত্বে আমরা একাত্ম হয়ে এগিয়ে যাবো শত বাঁধা, শত বিরোধিতা সহ তাগুতির রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে। ইসলামী আন্দোলনের অনাগত দিনের সফল বিজয়ের সূর্য—তোরণ দ্বারে। তুমিই হবে আমাদের সেই বিজয় শোভাযাত্রার আগ্রগামী নেতৃত্বের সূর্য সারথী, দ্বিগবিজয়ী সিপাহসালার,—তোমাকে আবারও শতকোটি অভিবাদন।
গাজী নজরুল ইসলাম
সাবেক সংসদ সদস্য।
৩০শে নভেম্বর/২০২৪