সাতক্ষীরায় আমনের বাম্পার ফলন

আবু সাইদ, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় ২০২৪—২০২৫ মওসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন চাষীরা। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ ভাগের বেশি ধান কাটা শেষ হয়েছে। জলাবদ্ধতা থাকার পরও লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে অতিরিক্ত ধান উৎপাদন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। চলতি মওসুমে আমন ফসলের উৎপাদিত ধানের বাজার মূল্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় তিন ৫৮ হাজার ৫৫০ লাখ চাষী পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ চাষী পরিবার আমন চাষে যুক্ত। চলতি বছর জেলায় ৭৮ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জন হয়েছে প্রায় ৮৩ হাজার ৪৯৫ হেক্টর। যা গত মৌসুমের তুলনায় ৪২৭ হেক্টর জমি বেশি।
কয়েকদিন পূর্বে ও সাতক্ষীরার মাঠ ছিল সবুজের সমারোহের বেড়াজালে। তারপর হলুদাভাব, স্নিগ্ধ হওয়ায় মন মাতানো উদাসী দোলায় মাঠময় ঝিকিরমিকির এক অন্য প্রকৃতি দেখতে দেখতে সবুজ, আর হলুদাভাবের সেই গোছায় গোছা ধান গাছ পাকা ধানে পরিপূর্ণতা পেয়ে বর্তমানে তা কৃষকের ঘরে যেতে চলেছে। পাকা ধান কাটার শুরু হয়েছে মহাউৎসব, এ দৃশ্য সাতক্ষীরার দিগন্ত বিস্তৃ মাঠে। শস্য ভান্ডার সাতক্ষীরার কৃষকরা তাদের স্বপ্ন সাধ পুরনে ব্যস্ত, অবিরাম, ক্লান্তহীন ভাবে কেটে চলেছে আমন ধান। সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরোদমে চলছে ধানকাটা, গোছানো। মহা ব্যস্ততায় কৃষকরা। কাকডাকা ভোরে আবার কেউ কেউ সকালে গাতার খেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান কেটেই চলেছে দৃশ্যতঃ সাতক্ষীরার গ্রামীন অর্থনীতিতে আমন ধান নির্ভর অর্থনীতির সুবাতাস বইছে। কৃষক এবং কৃষি কাজের সাথে সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক শ্রমিক ধান কাটা, বাছা, গোছানো এবং মাড়াই করার কাজে নিয়োজিত। উৎপাদনের ঘাটতি নেই, বলা চলে এবার সাতক্ষীরায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে, কিন্তু ধানের দাম কিছুটা কম এমন হতাশা ময় কথা বললেন কৃষক সুলাইমান। তিনি জানান বীজ সার কিছুটা কৃষি দপ্তর হতে বিনামূল্যে পাওয়া গেলেও শ্রমিক মজুরী সহ অপরাপর খরচ পরবর্তি খুববেশী লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই। বর্তমান সময়ে আমন ধান ওঠা শুরু হওয়ায় ধানের বাজার কিছুটা নিন্মমুখি, কোন কোন এলাকায় বস্তা প্রতি পনেরশত। কৃষকরা ধানের পাশাপাশি বিচুলী বিক্রয়ে অর্থ পাচ্ছে। সাতক্ষীরার বিভিন্ন ধানকাটা মাঠ পরিদর্শনে দেখা গেছে ক্ষেতে মধ্যেই কৃষক আধুনিক পদ্ধতিতে মেশিনের সাহায্যে ধান মাড়াই করে সেখান থেকেই চিক্রি করছে। তবে এমন দৃশ্য খুব কম, অধিকাংশ কৃষক ধান কেটে বাগের সাহায্যে ছাড়াও ভ্যান, ঠেলাগাড়ী সহ বিভিন্ন যানবাহনে বাড়ীতে নিচ্ছে। আমন ধানের সোদা গন্ধে গ্রামের মেঠো পথ হতে শুরু করে কৃষকের বাড়ী পর্যন্ত মৌ মৌ সুসভিত গন্ধে ভরপুর। কৃষকের পাশাপাশি কৃষাণীরাও মহাব্যস্ত সময় অতিক্রম করছে। ধান সিদ্ধ, শুকানো এবং মাড়াই করার জন্য প্রস্তুত করতে কৃষাণীরা গভীর রাতে উঠছে সূর্য উঠতে না উঠতে ধান সিদ্ধ শেষ করে দৌড়ে শুকাচ্ছে। ধান, সিদ্ধ, রৌদ্রে শুকানো, মাড়াই করা সব মিলে গ্রামীন জনপদ এক ধরনের কমংযজ্ঞে চিত্র চিত্রায়িত হচ্ছে। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে তাদের অনেকে মহাজন সহ বিভিন্ন এনজিও হতে ঋন গ্রহন করে ধান চাষে নেমেছে। আমন ধান ঘরে তুলেছে কিন্তু ঘরে থাকার সুযোগ কই? ধান বিক্রি করে ঋন পরিশোধ করছে এবং বাদ বাকি ধান সারা বছরের খোরাকির জন্য রাখতে হচ্ছে। আমন ধানের চালের আটার মেহমানদারী এবং আথিথেয়তা হবে। শীত পড়তে শুরু করেছে। গ্রামীন জনপদে শীতের সময় গুলোতে পিঠা পায়েস তৈরীর ধুম পড়ে এই ধানের উপস্থিতি পিঠা পায়েসের আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে। সবমিলে কৃষক খুশি, লাভ লোকসান বড় কথা নয়, নতুন ধান উঠেছে তাই সর্বত্র বইছে আনন্দ স্রোত। ধান চাষে লাভবানই হচ্ছে কৃষকরা, তবে আরও বেশী লাভবান হতেন যদি না প্রনোদনা এবং বিনা সুদে কৃষি ধানের ব্যবস্থা করা হতো।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ—পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি মৌসুমে জেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৮ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে, যা গত মৌসুমে ছিল ৭৮ হাজার ৬৮ হেক্টর জমি। তাদের সার্বিক সহযোগীতার কারণে এবার আমনে বাম্পার ফলন পেয়েছে চাষিরা।

Check Also

বাটকেখালী রোডে নাগরিক সমাবেশে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থায়ীভাবে বাতিলের দাবি

সাতক্ষীরায় বাটকেখালী রোডে আজ এক নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশ থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।