আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরা: চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়া সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগর পর্য়ন্ত ৬২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। পৃথক দুটি প্যাকেজে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩১ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৮৬১ টাকা। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত দুইটি প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দুটি প্যাকেজে ‘সাতক্ষীরা—সখিপুর—কালীগঞ্জ এবং কালীগঞ্জ—শ্যামনগর—ভেটখালী মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ’—এর ক্রয় প্রস্তাব পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের (পুনঃটেন্ডার) উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
সূত্রমতে দীর্ঘ এই সড়কের অধিকাংশ স্থানে পিচ উঠে সৃষ্টি হয়েছে খানা খন্দকে। সড়কটি এখন পরিণত হয়েছে মরণ ফাঁদে। প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক ছোট বড় দূর্ঘটনা। ফলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ছেন সাতক্ষীরার সুন্দরবন উপকূলীয় চারটি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। একইসাথে বেড়েছে পণ্য পরিবহন ব্যয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, ৮২২ কেটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটি সংস্কারে টেন্ডার আহ্বান করা হলেও ঠিকাদার নির্বাচন না হওয়ায় কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।
উপকূলীয় শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মানুষ সরাসরি সাতক্ষীরা—শ্যামনগর সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। এছাড়া আশাশুনি উপজেলার একাংশের মানুষের যাতায়াতের সড়ক এটি। সাতক্ষীরার এই সড়ক ধরেই জেলা শহরসহ রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করেন এই ৪ উপজেলার মানুষ। বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন সুন্দরবনে ভ্রমণের জন্য যেতে হয় এই সড়ক দিয়েই। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি গত প্রায় দুই যুগ ধরে সংস্কার করা হয়নি। মাঝে মাঝে সড়কের ক্ষতিগ্রস্থ অংশে ইট ফেলে কোন ভাবে জোড়াতালি দিয়ে দায় সারছে সড়ক বিভাগ।
পথচারীরা জানান, বর্তমানে অবস্থা এতোটাই খারাপ যে সড়ক পথ দিয়ে চলাচল করলে সুস্থ্য মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়ছে পণ্য পরিবহন।
সাতক্ষীরা জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের স্লোগান ‘সাতক্ষীরার আকর্ষণ, সড়কপথে সুন্দরবন’। কিন্তু সাতক্ষীরা—শ্যামনগর সড়কের বেহাল দশার কারণে জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের এ স্লোগান ভুলতে বসেছেন মানুষ। কারণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক হওয়ায় সাতক্ষীরা রেঞ্জের সুন্দরবনে আসতে উৎসাহ হারাচ্ছেন পর্যটকরা। বর্তমানে পয়ৃাটনের ভারা মৌসুম চলছে। এতে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যাটনের উপর নির্ভরশীল উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন—জীবিকায়। একই সঙ্গে ব্যহৃত সীমান্তের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিজিবি সদস্যদের চলাচল।
শ্যামনগর আসনের সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে সড়কটির বিভিন্ন অংশে পিচ উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। অল্প বৃষ্টিতে গর্তগুলো মরণ ফাঁদে পরিণত হয়। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এই সড়কে চলাচলকারীরা।
সাতক্ষীরা সড়ক বিভাগ বলছে, সড়কটি উন্নয়নে বিগত সরকারের সময় সাতক্ষীরা—সখিপুর এবং কালিগঞ্জ—শ্যামনগর—ভেটখালী মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়/ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে মোট ৬ টি প্যাকেজে ৬২ দশমিক ৩২৫ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়নে ৮২২ কোটি ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর একনেকে অনুমোদন হওয়ার পর ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল দরপত্র আহবান করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ১ আগষ্ট ২০২৩ থেকে ৩০ জুন ২০২৬ সাল পর্যন্ত। দরপত্র গ্রহণের পর ঠিকাদার নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
সড়কটি সর্বশেষ সংস্কার করা হয় ১৯৯৮ সালে। এরপর ২০০০ সালে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান গুলো মেরামত করা হয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি চলাচল উপযোগী রাখতে সে সময় কিছু কিছু স্থানে হেরিংবন্ড করা হয়। এছাড়া মাঝে মাঝে সওজ নিজ উদ্যোগে কিছু অংশ পুডিং করে মেরামত করে রাখার চেষ্টা অব্যহত রেখেছে।