সাতক্ষীরার শস্য, মৎস্য উৎপাদনে যে শাখা নদীগুলো মৃতপ্রায় ও দখলে অবিলম্বে খনন জরুরী

সাতক্ষীরার নদ-নদী সাতক্ষীরাকে রক্ষা করার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকলেও নিকট অতীতে জেলার নদ-নদী গুলোর উল্লেখযোগ্য অংশ স্রোতহীন হয়ে পড়েছে। আর স্রোতহীনতার কল্যাণে নদ-নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে বার্ধক্যে পরিণত হয়েছে। কেবলমাত্র জোয়ার ভাটাহীনতা বা স্রোতহীনতার কল্যাণে সাতক্ষীরার নদ-নদী গুলো নায্যতা হারিয়েছে তা নয় এক শ্রেণির ভূমিদস্যুরা খাল, বিল, নদীর যায়গা দখল করে স্থাপনা তৈরী করে নদী ধ্বংসের মহাউৎসবে মেতেছে। এখানেই শেষ কথা নয় খোজ নিয়ে জানা গেছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নদ-নদী, খাল ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের কল্যাণে বন্দোবস্ত নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে রক্ষা পাইনি পানি নিষ্কাশনের পথ গুলোও। মৃত প্রায় জেলার শাখা নদী ও খাল গুলোর দুরবস্থা কেবলমাত্র সোনালী অতীতকে স্বরণ করিয়ে দিচেছ। খরস্রোত ইছামতি, কালিন্দী, কাঁকশিয়ালী, বেতনা, খোলপেটুয়া নদীর শাখা নদী গুলো অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত জোয়ার ভাটা হীনতার কারণে সময়ের ব্যবধানে আর বাস্তবতার নিরিখে শাখা খাল প্রাণসায়ের, সাপমারা, বেতনা, কুলিয়া, মরিচ্চাপ, জিয়া, যমুনাসহ অসংখ্য খাল অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। গত বছর খাল খনন ও পুনঃখননের আওতায় জেলার বিভিন্ন এলাকার খাল খনন এর নামে চলেছে সরকারি অর্থের লুটপাট ও অপচয়। সুবিশাল গাড়ী আর যন্ত্রচালিত যন্ত্রের মাধ্যমে খাল পুনঃ খনন করা হলেও তলদেশ যে অবভীর সেই অগভীর থেকে গেছে দুই পার্শ্ব কেটে ছোট প্রস্ত করা হয়েছে। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় জনসাধারণের প্রত্যাশা তাই বেশী। সাতক্ষীরার মরে যাওয়া, বার্ধক্যে পৌঁছানো, পানি নিষ্কাশনসহ পানি প্রবাহ (জোয়ার ভাটা) বন্ধ শাখা খাল গুলো অবিলম্বে খননসহ পুনঃ খনন জরুরী। সাতক্ষীরা শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত কিন্তু বর্ষা মৌসুমে খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় শস্য ডুবতে থাকে। শেষ হওয়া বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টির কল্যাণে এবং খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় খাদ্য শষ্য ডুবেছে। ধান যথাযথ উৎপাদন হইনি, সবজি ক্ষেতে জলাবদ্ধতার কল্যাণে কৃষক তার কাক্সিক্ষত সবজি উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয়েছে। কপোতাক্ষ তীরের শস্য ভান্ডারের জয়গান অভিশাপে পরিণত হয়েছে। এক সময়ের প্রমত্ত কপোতাক্ষ পানি ধরে রাখার ক্ষমতা হারিয়েছে। শস্য ভান্ডারের সাতক্ষীরার পাশাপাশি এই জেলা মৎস্য শিল্প উৎপাদনে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে একক চিংড়ী উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিতি পেলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাতক্ষীরা সাদা প্রজাতির মাছ উৎপাদনে বহুগুণ উচ্চতায় পৌছেছে। সাতক্ষীরার উৎপাদিত চিংড়ী যেমন বিশ্ববাজারে সুনাম অর্জন করেছে ও বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করে চলেছে অনুরূপ সাদা প্রজাতির মাছ দেছের রাজধানী ঢাকার বাজারসহ অন্যান্য জেলার চাহিদা পূরণ করছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় শাখা নদী গুলোতে যথাযথ পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় প্রতি বছর চিংড়ী ও সাদা প্রজাতির মাছের ঘের ডুবে শত শত কোটি টাকার মৎস্য ভেসে যাচ্ছে। সর্বশান্ত হচ্ছে চাষীরা। এই মুহূর্তে জেলার পরিবেশ, অর্থনীতি, ব্যবসা বাণিজ্য রক্ষায় দখল হওয়া শাখা খালগুলো পুনঃখনন এর বিকল্প নেই।

Check Also

সংখ্যালঘুদের ওপর মিথ্যা নির্যাতনের অভিযোগে সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি—রপ্তানি বন্ধ: ৫ ঘণ্টা পর স্বাভাবিক

আবু সাইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর মিথ্যা নির্যাতনের অভিযোগে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা স্থলবন্দরের প্রধান সড়ক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।