সাতক্ষীরার ঐতিহ্যের ধারক খেঁজুর রস, গুড়, পাটালী

সাতক্ষীরার যশ খেঁজুরের রস। আর শীত মৌসুমেই উপস্থিতি মেলে রসনাতৃপ্তের এই মহারস। বর্তমানে জেলার গ্রামগঞ্জে, প্রত্যন্ত এলাকাতে চলছে রস উৎপাদনে সর্বশেষ পর্যায়। কোথাও কোথাৗ ইতিমধ্যে গাছিরা খেঁজুর রস উৎপাদনে নেমেছে। একদা সাতক্ষীরা জেলা ব্যাপী বিপুল পরিমান খেঁজুর গাছের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হলেও বিভিন্নমুখি কারণে অতি দ্রুততার সাথে হ্রাস পেয়েছে খেঁজুর গাছ যে কারণে পূর্বের ন্যায় বর্তমান সময়গুলোতে কাঙ্ক্ষিত রস উৎপাদন হচ্ছে না। গাছিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে গত এক মাসের পরে প্রথমে খেঁজুর গাছের উপরি অংশ পরিস্কার করা হয় অর্থাৎ গাছের স্থানীয় ভাষায় যাকে বলে বেগো তা ছাড়ানো হয় তার দুই সপ্তাহ পর উক্ত পরিস্কার করা উপরিঅংশে বিশেষভাবে পরিস্কার করা হয় স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় চাচ দেওয়া। জেলার বিভিন্ন এলাকাতে গাছে চাচ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। কোন কোন চাষী অবশ্য রস উৎপাদনে (গাছ টাকা) শুরু করেছে। বর্তমান সময়ে বিশেষ করে শীতের সময়গুলোতে রস উৎপাদনের পাশাপাশি পিঠাপায়েশের মহা উৎসব চলছে। গ্রামে গ্রামে শীতের সময়গুলোতে অতিথি আপ্যায়নের মোখ্যম ক্ষেত্র পিঠা পায়েশ সহ হরেক রকম পিঠা পুলি। সাতক্ষীরার বাস্তবতায় খেজুর রস মানেই লোভনীয় এবং খেঁজুর রসের পিঠাই কেবল শেষ কথা নয়। খেঁজুর রসের ক্ষির অতি লোভনীয় এবং রসনাতৃপ্ত। এক সময় কাচা রস পানের প্রচলন থাকলেও সা¤প্রতিক বছরগুলোতে কাচা রস বিভিন্ন ধরনের রোগের ও জীবাণুর কারণে পরিণত হওয়ায় কাচা রসের ভীতি বিরাজ করছে। চিকিৎসকরা বলছে খেঁজুর রস গরম করে অর্থাৎ জ্বালিয়ে পান করাই উত্তম। খেঁুজুর রস জ্বালিয়ে মিষ্টান্ন তৈরি হয় গ্রাম্য ভাষায় যাকে বলে গুড় এবং গুড় জমাট বেধে তৈরি হয় পাটালী। নলেন পাটালী আর নলেন গুড়ের মৌ মৌ সুগন্ধ মন জুড়িয়ে যায়। গুড় পাটালির মূল্যও কম নয়। প্রথম রসের মূল্য যেমন বেশি হয় অনুরূপ নলেন গুড় ও নলেন পাটালির মূল্য বেশী থাকে। গত বছর প্রতি ভাড় রস ছিল দুই শত টাকা এবং নলেন পাটালী ও গুড়ের প্রতি কেজি মূল্য ছিল ৪০০ টাকা। দুর দুরান্ত হতে বিশেষ করে শহুরে জীবন যাপনকারীরা আর কয়েক দিন পরেই গ্রামে আসবে উদ্দেশ্য রসনাতৃপ্তের আ”ন্দন খেজুর রস, নলেন গুড় ও পাটালির স্বাদ গ্রহণ করা। দিনে দিনে খেজুর গাছ যেমন কমতে শুরু করেছে অনুরূপভাবে গাছির সংখ্যাও হ্রাস পাচ্ছে। সাতক্ষীরার ঐতিহ্য এবং সম্মানের প্রতিমুল খেঁজুর রসের আর গুড় পাটালীর মহাসমারোহ জাগরুক থাকুক এই প্রত্যাশা তবে তার আগে খেঁজুর গাছ নিধন নয়। বেশি বেশি কে খেঁজুর গাছ রোপন করতে হবে। সাতক্ষীরার দেশময় বিশেষ পরিচিতি খেজুর রসের কারণে আমাদের সেই পরিচিতি এবং ঐতিহ্য অব্যাহত থাকুক এই প্রত্যাশা। আর কয়েক দিনের ব্যবধানেই সর্বত্র রসের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হবে। ঘরে ঘরে ধুম পড়বে পিঠা, পায়েশ আর নানান ধরনের মিষ্টান্নের।

Check Also

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয় করণ ঘোষনা বাস্তবায়নের দাবিতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও স্মারক লিপি প্রদান

ফিরোজ হোসেন, সাতক্ষীরা : মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্ত অনুদানভুক্ত ও অনুদান বিহীন সকল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।