বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একটি নেতাকর্মীও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেনি বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল সুপ্রীম কোর্ট শাখার উদ্যোগে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ভবনে শামছুল হক চৌধুরী হল রুমে অনুষ্ঠিত মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও বাংলাদেশ আলোর পথ পায়নি। অন্ধকার জগত থেকে বাংলাদেশকে বের করে আলোর জগতে নিতে হলে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আলোকিত বাংলাদেশ গড়তে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা এদেশের ছাত্র-জনতা ৫৩ বছর পরে উপলব্ধি করতে পেরে জুলাই-আগস্টে উই ওয়ান্ট জাস্টিস প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করেছে। এই ন্যায় বিচার মানুষের তৈরি আইনে কখনো হয়নি, হবেও না।’
‘ন্যায় বিচার’ প্রতিষ্ঠা হবে কেবলই ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মন্তব্য করে সুপ্রীম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, একজন বিবেকবান আইনজীবী কি বলতে পারবেন মানুষের তৈরি আইনে ন্যায়বিচার হয় বা হয়েছে?- যদি ন্যায়বিচার হতো তাহলে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিরুদ্ধে ভারতের পরামর্শে শেখ হাসিনার সাজানো মামলায় সকলেই মুক্তি পেতো। কেন সাক্ষীদের আদালতে সাক্ষ্য দিতে দেয়া হয়নি?- কেন আদালত থেকে সাক্ষীকে গুম করে নিয়ে যেতে হলো?- এর কারণ ন্যায়বিচার ছিল না।
ড. মাসুদ বলেন, শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধের সাজানো মামলায় জামায়াত নেতারা হত্যা করেছে। আজ শেখ হাসিনা নিজেই গণহত্যা চালিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রকৃত আসামি। জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতাকর্মীও মানবতাবিরোধী অপরাধ কোনোকালেই করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা নিজেদেরকে কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল দাবি করে সেই আওয়ামী লীগের হাতে কেন স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিরাপদ ছিল না। কারণ তারা ভারতের তাঁবেদারির স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিল। জামায়াতে ইসলামী কারো তাঁবেদারির স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিল না বলেই জামায়াতকে তারা স্বাধীনতাবিরোধী বলে অপপ্রচার চালিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতাবিরোধী নয়, জামায়াতে ইসলামী মর্যাদাশীল স্বাধীনতার পক্ষে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ভারত যদি বিশ্বাস করতো, তাহলে তারা আমাদের সার্বভৌমত্বে আঘাত আনতো না।
বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল সুপ্রীম কোর্ট শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট গিয়াসউদ্দিন মিঠুর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আবদুল বাতেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মশিউল আলম, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো: ইউসুফ আলী।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো: সাইফুর রহমান, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির ট্রেজারার ও সুপ্রীম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট এ কে এম রেজাউল করিম খন্দকার, অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন ভুঁইয়া, অ্যাডভোকেট ড. গোলাম রহমান ভুইয়া প্রমুখ।
এর আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে মশা নিধন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. মাসুদ বলেন, রাজধানী সহ সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাজার-হাজার মানুষ মারা গেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সেদিকে নজর ছিলো না। তারা মশার নিধনের ঔষধও লুটপাট করে খেয়েছে। ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণে মশা নিধনের বরাদ্দকৃত ঔষধ আওয়ামী দলীয় লুটেরা কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়ে মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান মানুষকে ডেঙ্গু থেকে একটু নিরাপদ রাখতে মশা নিধন ও মশারি বিতরণের নিদের্শ দিয়েছেন। সেই নিদের্শনার আলোকে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় মশা নিধন অভিযান ও মশারি বিতরণ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।
এ সময় তিনি আরো বলেন, ভারতের দাদাবাবুরা উগ্রবাদী সংগঠন ইসকনকে দিয়ে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে উসকানি দেয়ার চেষ্টা করেছে। জামায়াতে ইসলামী তাদের সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনায় দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী বিবেচনা করে না, জামায়াতে ইসলামী সমাজের প্রত্যেককে দেশের নাগরিক হিসেবে মূল্যায়ন করে। সে হিসেবে সকল ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠীর কাছে জামায়াতে ইসলামীর উপহার ও সেবা পৌঁছানো হয়। এটাই ইসলামের শিক্ষা। জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা দায়িত্ব পেলে ইসলামের শিক্ষায় রাষ্ট্র পরিচালনা করবে।
মশা নিধন অভিযানের উদ্ধোধনকালে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, অফিস সেক্রেটারি ড. মোবারক হোসেন, কর্মপরিষদের সদস্য কামরুল আহসান হাসান, পল্টন থানা আমির শাহীন আহমেদ খানসহ মহানগরী ও বিভিন্ন থানার দায়িত্বশীল নেতারা।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি