নেশার টাকার জন্য কানের দুল ছিনিয়ে নিয়ে শিশুকে হত্যা, আদালতে আসামির জবানবন্দি

সাতক্ষীরার আশাশুনিতে শিশু নুসরাত জাহান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার রেজোয়ান কবিরছবি: প্রথম আলো

সাতক্ষীরার আশাশুনিতে ৯ বছরের শিশু নুসরাত জাহান হত্যার ঘটনায় রেজোয়ান কবির ওরফে জনি (২২) নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার বিকেলে আসামি রেজোয়ান কবির আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়ে জানিয়েছেন, নেশার টাকার জন্য কানের দুল ছিনতাই করতে গিয়ে তিনি শিশু নুসরাতকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।

এর আগে গত শনিবার বেলা তিনটার দিকে উপজেলার আগরদাড়ি গ্রামের এক পুকুরের পাড়ে নুসরাতের লাশ পাওয়া যায়। আজ সোমবার বেলা একটার দিকে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ৯ বছরের শিশু নুসরাত জাহান হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আশাশুনির আগরদাড়ি গ্রামের রেজোয়ান কবিরকে রোববার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার মাদকাসক্ত যুবক রেজোয়ান কবির পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন।

পরে সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহিদুল ইসলামের খাসকামরায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন রেজোয়ান কবির। এর আগে একই আদালতে ছিনতাই হওয়া কানের দুলের ক্রেতা আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা বাজারের পলাশ জুয়েলার্সের মালিক অজয় পাইনও সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধরায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

সাতক্ষীরায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীর হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফয়সাল বলেন, রেজোয়ান কবির ঢাকায় একটি লিফট কোম্পানিতে চাকরি করতেন। চার-পাঁচ মাস আগে চাকরি চলে যাওয়ায় তিনি গ্রামের বাড়িতে আসেন। এরপর অর্থনৈতিক সংকটে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। বাবার কাছে বিভিন্ন সময় টাকা চেয়ে না পেয়ে তিনি প্রতিবেশী নুসরাত জাহানের কানে থাকা সোনার এক জোড়া দুল ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জবানবন্দিতে আসামি রেজোয়ান কবির বলেন, শনিবার সকালে নুসরাত জাহান প্রতিবেশীর বাড়ির সামনে খেলার সময় তাকে ডেকে নিয়ে যান রেজোয়ান। পথিমধ্যে সোলাইমান আজিজীর পুকুরের পাড়ে হলুদখেতে গিয়ে কানে থাকা দুল খুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। নুসরত বাধা দিয়ে মা–বাবাকে বলে দেবে বলে জানায়। তখন রেজোয়ান জোর করে দুল জোড়া খুলে নিয়ে নুসরাতকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর মরদেহ যেন কেউ খুঁজে না পায়, এ জন্য নুসরাতের হাত ও পা বেঁধে হলুদখেতের পাশে পুকুরের পাড়ে ফেলে দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. ফয়সাল বলেন, কানের দুল ক্রেতা অজয় পাইনও সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি বলেন, রেজোয়ান কানের দুল জোড়া নিয়ে শনিবার বিকেলে তাঁর কাছে আসেন। দুই আনা ওজনের সোনার দুল জোড়া তিনি ৯ হাজার টাকায় কেনেন। এর কয়েক মাস আগেও রেজোয়ান তাঁর মায়ের সাড়ে চার আনা ওজনের এক জোড়া কানের দুল ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলেন। সেই থেকে তাঁর সঙ্গে পরিচয়। রেজোয়ান শনিবার বিক্রির আগে দুল জোড়া তাঁর মায়ের বলে উল্লেখ করেন।

Check Also

নানা আয়োজনে বিজয় দিবস পালন করল জামায়াত

নানা আয়োজনে সোমবার সারা দেশে মহান বিজয় দিবস পালন করেছে জামায়াত ইসলামী। এ উপলক্ষ্যে সোমবার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।