৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, ‘অনেক রাজনৈতিক দল সেই জুলাইয়ের ২০ তারিখ, ২৫ তারিখ, ৩০ তারিখ পর্যন্ত বলেছিল যে আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি, আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের সঙ্গে একমত হব কি না। সেই সংগ্রামে যুক্ত হব কি না।’

আজ শুক্রবার খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘শহীদ পরিবারের পাশে বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মোট ৫৮ শহীদ পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে চেক হস্তান্তর করা হয়।

সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা অনেক রাজনৈতিক দল এখন বড় গলায় কথা বলছে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে সারজিস আলম বলেন, ‘তারা যদি আজকে বড় বড় গলায় আমাদের সামনে বলে, এই অভ্যুত্থানে তাঁরাই সামনের সারিতে ছিলেন, আমরা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) শুধু অংশগ্রহণ করেছি। তাঁদের শুধু একটি কথাই বলতে চাই—বড় গলায় কথা বলার আগে নিজের বিবেকবোধের জায়গা থেকে একটি জিনিস শুধু চিন্তা করুন যে জুলাইয়ের পুরো মাসে আপনাদের অবস্থান কোথায় ছিল? ওই জুলাইয়ের পুরো মাসে আপনাদের কথা বলার জায়গা কেমন ছিল? আপনাদের ভাগ্যগুলো কেমন ছিল?’

জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের উদ্দেশে ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা কোনো দলকানা হব না, গোষ্ঠীর পূজা করব না। আমরা কাউকে ছেড়েও কথা বলব না। কিন্তু আমরা এটাও লক্ষ রাখব, বিভিন্ন মহলের প্রোপাগান্ডার সেলগুলো বিভিন্ন অপব্যাখ্যা করে নোংরা রাজনীতি করার চেষ্টা করছে কি না। আমাদের এটাও খেয়াল রাখতে হবে, গুজব লীগের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যারা হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করে দেশের টাকা বিদেশে মজুত করেছে, সেই টাকা ব্যবহার করে এখন পুরো বাংলাদেশকে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে কি না। এই অভ্যুত্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুষগুলোকে বিভিন্ন গুজবের মাধ্যমে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে কি না।’

২৪-এর শহীদদের কারও লাশ উত্তোলন করা যাবে না: সারজিস আলম

শহীদ পরিবারকে সহায়তার বিষয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘এটা শুধু শুরু। নির্দিষ্ট অল্প কিছু টাকা দিয়ে এই রক্তের দাম দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা কথা দিতে চাই—এই ফাউন্ডেশন যত দিন থাকবে, তত দিন আপনাদের জন্য কাজ করে যাবে।’

জুলাইয়ের খুনিদের বিচার করা অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় দায় উল্লেখ করে সারজিস আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের যে সন্ত্রাসীরা এই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে সরাসরি জড়িত; যারা অবৈধ অস্ত্র নিয়ে, খুনি হাসিনার সাপ্লাই করা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে আমার ভাইবোনদের হত্যা করেছে, তাদের বিচার করা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় দায়। যদি এটা তারা তাদের জায়গা থেকে করে যেতে না পারে, তাহলে সেটা হবে তাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলে দিতে চাই—যদি আপনাদের জায়গা থেকে এই দায়িত্বটুকু পালনে গড়িমসি করেন, এই বাংলাদেশে আপনাদের মুখ দেখানোর আর কোনো পথ থাকবে না।’

অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আশ শেফা খাতুন বললেন, ‘আমাদের কষ্টের সঙ্গে শহীদ পরিবারের কষ্টের তুলনা হবে না। কেননা আমাদের কষ্ট সাময়িক সময়ের জন্য কিন্তু শহীদ পরিবারের কান্না থাকবে সারা জীবন। সুতরাং কেউ যাতে শহীদ পরিবারের সঙ্গে বেইমানি না করতে পারে, সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।’

খুলনা মহানগর পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, ‘বিগত দিনের গ্লানি মুছে আমরা জনগণের পুলিশে পরিণত হতে চাই। জুলাই-আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের গ্রাফিতিগুলোই আমাদের সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। কারণ, এটিই একসময় ইতিহাস হয়ে থাকবে।’

আরও পড়ুন

ভারতের তাঁবেদারি বাংলাদেশের জনগণ করে না এবং আগামী দিনেও করবে না: সারজিস আলম

খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার বলেন, তিনি নিজেও জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের ফল ভোগ করছেন। কেননা বিগত ১৫ বছরে তিনি ছিলেন পদোন্নতিবঞ্চিত। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলেই তিনি আজ বিভাগীয় কমিশনার। সুতরাং যাঁদের আন্দোলনের ফলে তাঁরা আজ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁদের শপথ ভঙ্গ করা চলবে না। নিয়োগপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার মধ্য দিয়ে তিনি এক নতুন বাংলাদেশ গড়তে চান বলে জানান।

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমানের (স্নিগ্ধ) সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, খুলনার পুলিশ সুপার টি এম মোশাররফ হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম প্রমুখ। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। কর্মসূচির শুরুতেই জুলাই-আগস্টের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘জুলাই অনির্বাণ’ দেখানো হয়।

Check Also

কম্বল পেয়ে খুশি দোহারের পদ্মাপারের শীতার্ত মানুষ

আশিয়া বেগমের বয়স ৮০ ছুঁই ছুঁই। মাথায় পাকা চুল। সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারেন না। লাঠিতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।