আসামি করেও এখন আ.লীগ নেতা নাছিরের নাম বাদ দিতে চান বাদী

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে গুলিবর্ষণের ঘটনায় করা একটি মামলা থেকে আসামি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি করপোরেশন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নাম বাদ দিতে আবেদন করা হয়েছে। আজ সোমবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ আবেদন করেন গুলিতে আহত মামলার বাদী মো. মানিক। গত ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক আ জ ম নাছির উদ্দীন।

৫ আগস্ট নগরের ডবলমুরিং থানার মনসুরাবাদ এলাকায় একটি মাজারের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিতে আহত হন বাদী মো. মানিক। এ ঘটনায় ২০ নভেম্বর নগরের ডবলমুরিং থানায় তিনি মামলা করেন। এতে ১০৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলায় ৬ নম্বর আসামি হলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। এ ছাড়া সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়। মামলার ১ থেকে ৬ নম্বর আসামির নির্দেশে ঘটনার দিন (৫ আগস্ট) গুলিবর্ষণে বাদী ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন।

আদালতে করা আবেদনে বাদী উল্লেখ করেন, মামলার ৬ নম্বর আসামি আ জ ম নাছির উদ্দীনের বিরুদ্ধে তাঁর কোনো অভিযোগ নেই। যখন মামলা করেছিলেন, তখন বাদীর মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না। পরে জানতে পারেন যে আ জ ম নাছিরকে তিনি আসামি করা হয়েছে। এ মামলার ঘটনার সঙ্গে নাছিরের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ফায়দা লোটার জন্য সুকৌশলে বাদীর অজ্ঞাতসারে তাঁর (নাছির) নামটি কেউ দিয়ে দিয়েছেন। ন্যায়বিচারের স্বার্থে আ জ ম নাছিরকে এজাহার থেকে বাদ দেওয়া হোক।

বর্তমানে মামলাটি নগরের ডবলমুরিং থানা-পুলিশ তদন্ত করছে। জানতে চাইলে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মো. রফিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বাদী যেভাবে মামলার এজাহার দিয়েছেন কিংবা যাঁদের আসামি করেছেন, পুলিশ সেভাবে মামলা নিয়েছে। কে আসামি হবেন, কে হবেন না, তাতে পুলিশের কোনো এখতিয়ার নেই। তবে তদন্তে পুলিশ ঘটনার সঙ্গে যাঁদের সংশ্লিষ্টতার তথ্যপ্রমাণ পায়, শুধু তাঁদের আসামি করে।

এ বিষয়ে জানতে বাদীর মুঠোফোনে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বাদীর আইনজীবী আখেলুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাদী আদালতে আসামি আ জ ম নাছিরের নাম বাদ দিতে আবেদন করেছেন। আদালত এটি নথিভুক্ত করেছেন। এজাহারে দেওয়া বক্তব্য বাদী কেন প্রত্যাহার করে নিলেন, জানতে চাইলে আইনজীবী আখেলুর রহমান বলেন, এটি বাদীই ভালো বলতে পারেন।

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ডবলমুরিং থানার এসআই তিথংকর দাস আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতে করা আবেদনটি আমরা এখনো পাইনি। বাদী কোনো আসামি জড়িত নন দাবি করলে বিষয়টি আমাদের নলেজে থাকল। তবে তদন্ত শেষ না হওয়ার আগে কিছু বলা যাবে না।’

উল্লেখ্য, সারা দেশের মতো চট্টগ্রামের আদালত ও থানাগুলোয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় অন্তত ৫০টি মামলা হয়। বেশির ভাগ মামলা হওয়ার আগে এজাহার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মামলা হওয়ার পর অনেকের নাম বাদ যায়। অভিযোগ রয়েছে, বাদীসহ একটি চক্র অর্থের বিনিময়ে আসামির নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন, যা ‘মামলা বাণিজ্য’ নামে আলোচনা আছে। অনেক মামলার বাদী চেনেন না আসামিদের।

Check Also

সাতক্ষীরায় সবার আগে বাংলাদেশে শীর্ষক কনসার্ট অনুষ্ঠিত

আহসান হাবিবঃ সাতক্ষীরা নিউমার্কেট মোড় বন্ধুমহলের উদ্যোগে ও পৌর যুবদল সাতক্ষীরার সার্বিক সহযোগিতায় সবার আগে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।