অতিবিপ্লবী প্রতিবিপ্লবী আমলাদের কঠোর বার্তা দিতে হবে

বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্রের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে আন্দোলনের গরমের পর সত্যি সত্যি আগুন লাগার ঘটনায় গোটা জাতি হতবাক। রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার স্থায়ী উইং বিবেচনা করা হয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। অন্যদিকে অস্থায়ী উইং হলো মন্ত্রী-এমপি অর্থাৎ জনগণের প্রতিনিধিরা। দুই পক্ষই জনগণের সেবক। কিন্তু ক্ষমতার দণ্ড হাতে পাওয়ার পর তাদের অনেকে নিজেদের রাষ্ট্রের মালিক এবং জনগণকে তাদের প্রজা মনে করেন। তারা ভুলে যান তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য। দেশ-জনগণের স্বার্থ রক্ষার বদলে উঠেপড়ে লাগলেন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, নয়তো দলীয় স্বার্থসিদ্ধিতে। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান মূলত উল্লেখিত গণশত্রুদের বিরুদ্ধে। কারণ ঐ গণশত্রুরা দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় জীবন দেয়ার শপথ নিয়ে বিশ্বাসঘাতক বনে যান। ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলীয় স্বার্থের কারণে দেশ এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিতে কুণ্ঠিত হন না। সচিবালয় গরম করা কতিপয় আমলা- যারা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ পর্যন্ত করেননি, তারাই চাকরিবিধি ভেঙে সভা-সমাবেশ করে স্লোগান তুলে অতিবিপ্লবীর আড়ালে প্রতিবিপ্লবীর খলনায়কের ভূমিকা পালন করছেন। তাদের এমন আচরণের প্রকাশ্য কারণ যাই বলা হোক না কেন, মূলত তারা যে সরকারকে স্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই মাঠে নেমেছেন- এতে কোনো সন্দেহ নেই বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।
কেন এ ষড়যন্ত্র : পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, মূলত ৬টি কারণে একশ্রেণির আমলা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে আন্দোলনের সাহস দেখাচ্ছে- ১. এ সরকারকে দুর্বল সরকার মনে করছে, ২. তাদের অতীতের পাপ প্রকাশ হওয়ার আতঙ্কে, ৩. দুর্নীতির পথ বন্ধ হওয়ায় লোভের ক্ষতি, ৪. দেড় দশকে কয়েক লাখ দলীয় লোক নিয়োগ ও ৫. ব্ল্যাকমেইল।
এ কয়েকটি কারণেই তারা চাচ্ছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের সরকারের পতন ঘটিয়ে তাদের সুখের দোসরদের হাতে দ্রুত ক্ষমতা তুলে দিতে।
পর্যবেক্ষকরা আরো মনে করেন, ফ্যাসিবাদী শাসকদের একটি বৈশিষ্ট্য হলো- ব্ল্যাকমেইল করে শক্তিশালীদের কাজে লাগানো। নিঃসন্দেহে রাষ্ট্র ও সরকারের অন্যতম শক্তিশালী অংশ আমলারা। তাদের সহযোগিতা ছাড়া ফ্যাসিবাদ টিকে থাকতে পারে না। সংবিধান, আইন, মানবাধিকার ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌত্বের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখিয়ে সততার সাথে রাষ্ট্রের প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করলে ফ্যাসিবাদ টিকে থাকা দূরের কথা, দাঁড়াতেই পারে না। অতি সম্প্রতি সংঘটিত দক্ষিণ কোরিয়ার ঘটনা তার প্রমাণ।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল অনেকটা আকস্মিকভাবে গত ৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সামরিক শাসন জারি করেছিলেন। দেশের সর্বস্তরের জনগণ এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মাঠে নামলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কাজ বন্ধ করে সংহতি প্রকাশ করেন। ফলে বাধ্য হয়ে সরকার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। এর পরের ঘটনা সবার জানা। ২০২০ সালে আমেরিকার নির্বাচনের ফলাফল ডোনান্ড ট্রাম্প মেনে নিতে অস্বীকার করে সামরিক বাহিনী, অ্যাটর্নি জেনারেল ও সরকারি কর্মকর্তাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন তার পক্ষে মাঠে নামতে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তার দলের সমর্থক হওয়ার পরও পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন, তারা সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছেন, ডোনান্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে টিকিয়ে রাখার জন্য নয়।
কিন্তু ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সারা দেশের মানুষ মাঠে নামলেও আমলাসহ সংবিধান রক্ষার শপথ নেয়া পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তাদের দেখা গেছে ফ্যাসিবাদ রক্ষায় সংগ্রাম করতে। এভাবে ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪-এর নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার ছিনতাইয়েও দেখা গেছে তারা আওয়ামী লীগ ও হাসিনাকে সহযোগিতা করেছেন। এদের অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল হাসিনা সরকার। পরে তাদের ব্ল্যাকমেইল করেছে এই বলে, ‘তোমাদের দুর্নীতির ফাইল আমার হাতে। আমাকে রক্ষা না করলে তোমরাও বাঁচবে না।’ অর্থাৎ আমলাদের আমলনামা ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও হাসিনাপ্রীতির পাপে এতটাই ভারী হয়ে গেছে, তারা চায় না তা কোনো নিরপেক্ষ সৎ সরকারের হাতে বেশিদিন থাকুক। তাই তারা কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। চাকরিবিধির তোয়াক্কা করছে না। একশ্রেণির মিডিয়াকর্মীর মুখ দিয়ে বলাচ্ছেন, এ সরকারের ম্যান্ডেট নেই। অথচ জনগণ বুকের রক্ত দিয়ে এ সরকারের পক্ষে তাদের ম্যান্ডেট দিয়েছে।
আল জোলানির নেতৃত্বে এইচটিএস ও অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠী একজোট হয়ে প্রেসিডেন্ট বাশারের বিরুদ্ধে অভিযান চালান এবং দেশটিতে ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে। বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদের পতনের পর সিরিয়ার স্বৈরাচার আসাদের পতন হয়েছে। সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের শাসনের অবসান ঘটে গত ৮ ডিসেম্বর ২০২৪। জনগণের সশস্ত্র বিপ্লবে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন আসাদ। সিরিয়াতেও অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আল-আরাবিয়া চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিরিয়ার ক্ষমতাসীন নেতা আহমদ আল শারা আল জোলানি ঘোষণা করেছেন, সিরিয়ায় সাধারণ নির্বাচন দিতে চার বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তিনি আরো বলেন, ‘সিরিয়ায় নতুন সংবিধান প্রণয়নে তিন বছরের বেশি সময় লাগতে পারে। এছাড়া সিরিয়ায় পরিবর্তন আনতে আরও এক বছর সময় লেগে যেতে পারে।’
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষকরাও মনে করেন, পুরনো মাফিয়াতন্ত্রের কঙ্কালের ওপর শুধু নতুন চাদর পরালেই হবে না। কঙ্কালসহ সবকিছু বদলাতে হবে। এতে ব্যর্থ হলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা পূরণ হবে না, ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় তাঁবেদার সরকার নতুন রূপে আবার ফিরে আসবে। ইতোমধ্যে তার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে। অতিবিপ্লবী সেজে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সমর্থক পরিচিত প্রভাবশালী দলের আমলারাও মাঠে নেমেছেন প্রতিবিপ্লবীদের সাথে।
অতিবিপ্লবী প্রতিবিপ্লবী
সূত্রে প্রকাশ, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সম্ভাব্য সুপারিশ নিয়ে বিধি ভেঙে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ) এবং বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড। গত ২৫ ডিসেম্বর রাজধানীতে সংগঠন দুটির যৌথ প্রতিবাদ সভা থেকে কমিশনপ্রধানের পদত্যাগে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম ও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসে। এমন ঘোষণাকে সরকার ও কমিশনের প্রতি ‘অসম্মান’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ প্রবণতা ঠেকিয়ে জনপ্রশাসনকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে আন্দোলনের নেপথ্যে থাকা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চায় সরকার। এজন্য ২৫ ডিসেম্বরের সভায় জ্বালাময়ী বক্তব্য দেওয়া কর্মকর্তাদের অতীত কর্মকাণ্ডের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
প্রতিবিপ্লবীর খলনায়কদের পরিচয় বিশ্লেষণ করলেই দেখা যায়, চাকরিবিধি ভেঙে ফ্যাসিস্টদের যেসব দোসর আমলাবিদ্রোহে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের মধ্যে এমন মুখও আছে, যারা আসলে অতিবিপ্লবীর চাদরে ঢাকা প্রতিবিপ্লবীদের প্রতিচ্ছায়া বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করলেও তাদের একজনের সাথে কথা বলার পর তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, তাদের বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড এবং বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ) যৌথভাবে আলোচনা সভার কথা বলে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তারা তাদের বক্তব্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়ে চাকরিবিধি লঙ্ঘনকারীদের তিরস্কার করে বক্তব্য দিয়েছেন। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলামও এ প্রতিবেদককে অনুরূপ কথাই বলেন। তিনিও মনে করেন, সরকারকে অস্থিতিশীল বা বিব্রত করার সাথে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জড়িত ফ্যাসিবাদের দোসরদের অবশ্যই চিহ্নিত করে বিধিমতো শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তিনি মনে করেন, সরকার ও সংস্কার কমিশনগুলোর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করা এবং সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার আগে প্রয়োজনীয় গোপনীয়তা রক্ষা করা। তাহলেই প্রতিবিপ্লবীরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার সুযোগ পাবে না।
কঠোর অবস্থানে সরকার
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবার হার্ডলাইনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের পর আগে থেকেই বিভিন্ন ইস্যুতে কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলন সামাল দিতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে ক্যাডারদের আপত্তিকর আচরণ-মন্তব্য এবং কমিশনপ্রধানের পদত্যাগের দাবিতে সম্মেলন করে আলটিমেটাম দেওয়ার বিষয়টিকে সরকার মোটেও ভালোভাবে নেয়নি। ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের’ ব্যানারে আন্দোলনকেও কর্মকর্তাদের বাড়াবাড়ি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ও কমিশনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়া কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থা এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে জমা দিয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এরই মধ্যে অন্তত একজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ বলেছেন, যারা আন্দোলনের নামে চাকরিবিধি লঙ্ঘন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমলাদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, আমরা সাম্প্রতিক সময়ে আমলাদের বক্তব্য শুনতে পারছি। তারা এক ধরনের হুমকি দিচ্ছে। এটার সাহস তারা পেয়েছে বিগত সময়ে, সেই সময় দেখেছি আমলাতন্ত্রকে শক্তিশালী করা হয়েছে। আমলাতন্ত্র নির্ভরতাকে কাজে লাগিয়ে ফ্যাসিজম তৈরি করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, এটা নিয়ে বৈঠক করেছি। আগামী সপ্তাহে কঠোর পদক্ষেপ আসবে। যারা আন্দোলনের নামে চাকরিবিধি লঙ্ঘন করছে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং আমলাদের বলছি, এখন সময় জনগণকে সেবা দেওয়ার। গণতান্ত্রিক ট্রানজিকশনটা সঠিকভাবে করার সহযোগিতা করার। আন্দোলন আন্দোলন খেলা কিংবা গোষ্ঠী স্বার্থ রক্ষার জন্য এত মানুষ জীবন দেয়নি।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, প্রয়োজনে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কঠোর বার্তা দিতে হবে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে যাদের নাম এসেছে
একাধিক সূত্রে প্রকাশ, সরকারের কাছে রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার জমা দেওয়া প্রতিবেদনে আমলাদের আন্দোলনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাসহ বর্তমান চার কর্মকর্তার বক্তব্য ও ফেসবুক পোস্টকে বিশেষভাবে আমলে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে চাকরিতে থাকা ওই চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই চার কর্মকর্তা হলেনÑ বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলার ডিসি, প্রভাবশালী একজন উপদেষ্টার একান্ত সচিব (পিএস), গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একজন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিআরইবির একজন যুগ্ম সচিব।
গত ২৫ ডিসেম্বরের সমাবেশে অভিযুক্ত ডিসি রীতিমতো জ্বালাময়ী বক্তব্য দেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ডিসিদের থেকে এসপিদের এসিআর সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারকে দুর্বল করা হয়েছে। সিভিল প্রশাসনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আগের কর্তৃত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
সাদিকুর রহমান সবুজ নামে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অভিযুক্ত আঞ্চলিক কর্মকর্তা তার ফেসবুক পোস্টে আপত্তিকর ভাষায় কিছু মন্তব্য করেন। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার এ বক্তব্য নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার ঘটেছে। বিআরইবির অভিযুক্ত যুগ্ম সচিবও ফেসবুকে লিখেছেন, রাস্তায় যখন নেমেছি অধিকার আদায় ছাড়া ঘরে ফিরছি না। রাষ্ট্রকাঠামো নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না, ইনশাআল্লাহ।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আন্দোলনে উসকানি ছড়ানোর অভিযোগ ওঠা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংস্কার কমিশনের প্রধানকে বিতর্কিত বলে অভিহিত করেন এবং তার অপসারণের জন্য আলটিমেটাম দেন।
কী আছে চাকরিবিধিতে
“সরকারি কর্মচারী (আচরণ), ১৯৭৯ (৩০/১২/২ ০০২ তারিখের সংশোধনীসহ) ৩০ এ আছে:। রাজনৈতিক বা অন্য প্রভাব প্রয়োগ: কোন সরকারী কর্মচারী তার চাকুরী প্রসংগে কোন দাবীর সমর্থনে সরকার বা কোন সরকারী কর্মচারীর উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোন রাজনৈতিক বা অন্যান্য বাইরের প্রভাব প্রয়োগ বা প্রয়োগের চেষ্টা করবেন না। ৩০ এ। সরকারী সিদ্ধান্তসমূহ, আদেশাবলী ইত্যাদি কোন সরকারী কর্মচারী
করবেন না: এ) সরকার বা কর্তৃপক্ষের কোন আদেশ বা সিদ্ধান্ত পরিপালনে প্রকাশ্যে বিরোধিতা জ্ঞাপন বা কোন উপায়ে ব্যাহত করা অথবা অনুরূপ করতে অন্যদের উস্কানী দেয়া বা সহায়তাদান; বি) সরকার বা কর্তৃপক্ষের কোন আদেশ বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনরূপ অসন্তোষ বা ক্ষোভ প্রকাশ বা আন্দোলনে অংশগ্রহণ অথবা আন্দোলনে অংশগ্রহণে অন্যদের সহায়তাদান; সি) সরকার বা কর্তৃপক্ষকে কোন আদেশ বা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন, রূপান্তর, সংশোধন বা বাতিলের জন্য অসঙ্গত প্রভাব বা চাপ প্রয়োগ; ডি) সরকারী কর্মচারীদের মধ্যে বা সরকারী কর্মচারীদের বিভিন্ন অংশের অভ্যন্তরে কোন উপায়ে অসন্তোষ, ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি বা সৃষ্টির চেষ্টা অথবা সৃষ্টিতে অন্যদের সহায়তা দান।”
অভিযান শুরু হয়েছে
সূত্রে প্রকাশ, আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়া ডিসিকে দ্রুতই তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। আর গাজীপুর সিটির আঞ্চলিক কর্মকর্তা সাদিকুর রহমান সজীবকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তের আদেশে বলা হয়েছে, ওএসডি থাকা সাদিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য তাকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালে তিনি বিধি অনুযায়ী খোরপোশ ভাতা পাবেন। ওই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের জন্য এরই মধ্যে তার বাসায় অভিযান চালানো হয়েছে বলেও জানা গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ে স্বনামে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছে না কর্মকর্তারা। একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, একদিকে দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে সক্রিয় কর্মকর্তারা; অন্যদিকে সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা। এসব বিষয় নিয়ে আমলাদের ওপর চরম বিরক্ত সরকারের নীতিনির্ধারকরা। ফলে সামনের দিকে দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের পর আমলারা ভীষণ চাপে আছে বলেও মনে করছেন অনেকে।

Check Also

বাগেরহাট কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন ৬৪ ভারতীয় জেলে

বাগেরহাট জেলা কারাগার থেকে ৬৪ জন ভারতীয় জেলে মুক্তি পেয়েছে। বুধবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে তাদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।