মজার মজার খাবার দিয়ে আতিথেয়তা

উৎসবমুখর পরিবেশে মেতে উঠেছে চারপাশ। বাকি আছে শুধু আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া আর মজাদার খাবার খাওয়া। মজার মজার খাবার দিয়ে আতিথেয়তা করতে না পারলে তো মজাই থাকে না ঈদ আনন্দে। তাই ঈদের দিন খাবার মেন্যুতে যোগ করুন সহজ ও সুস্বাদু কিছু রেসিপি। রসুইঘর মাতিয়ে রাখুন সুগন্ধে। ঈদে পরিবার-আত্মীয়-পরিজন ও অতিথি আপ্যায়নে কিছু মুখরোচক খাবারের রন্ধন প্রণালি নিয়ে আমাদের এ বিশেষ আয়োজন।
চিকেন আখনি পোলাও
প্রয়োজনীয় উপকরণ: ১. পোলাও চাল ১ কেজি, ২. মুরগির গোশত ২ কেজি, ৩. গোটা জিরা ১ টেবিল চামচ, ৪. সাদা এলাচ ৮-১০টি, ৫. বড় এলাচ ২টি, ৬. তেজপাতা ৪টি, ৭. দারুচিনি ৫-৬ টুকরা, ৮. লবঙ্গ-৭-৮টি, ৯. সামান্য পরিমাণ জয়ত্রী, ৯. পেঁয়াজ কুচি এক কাপ, ১০. কাঁচামরিচ ৮-১০টি, ১১. আদা+রসুন বাঁটা ৩ টেবিল চামচ, ১২. গোলমরিচের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, ১৩. লবণ স্বাদমতো, ১৪. ফুড কালার সামান্য পরিমাণ, ১৫. পরিমাণ অনুযায়ী পানি, ১৬. পুদিনাপাতা ১০-১৫টি, ১৭. তেল ৬ টেবিল চামচ।
প্রস্তুত প্রণালী
প্রথম ধাপ: প্রথমে একটি পাত্রে মোটামুটি ৩ লিটার পরিমাণ পানি নিয়ে চুলায় বসাতে হবে। এরপর একে একে গোটা জিরা, সাদা এলাচ, বড় এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, তেজপাতা, জয়ত্রী, গোলমরিচ এবং একটি পেঁয়াজ মাঝ বরাবর কেটে পানিতে দিয়ে পানি মাঝারি আঁচে ফুটিয়ে নিতে হবে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে। এরপর এই ফুটানো পানি ছেঁকে নিয়ে গোটা মশলা আলাদা করে ফেলতে হবে এবং পানি ঢেকে রাখতে হবে, যাতে করে পানি গরম থাকে।
দ্বিতীয় ধাপ: এবার একটি পাত্র চুলায় বসিয়ে এতে তেল দিয়ে দিতে হবে। এরপর পেঁয়াজ কুচি দিয়ে হালকা বাদামি করে ভাজা হয়ে গেলে একে একে আদা, রসুন বাঁটা, গোলমরিচের গুঁড়া, কাঁচামরিচ দিয়ে একটু কষিয়ে নিয়ে তাতে গোশত দিয়ে দিতে হবে। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে পরিমাণমতো লবণ দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে এবং চুলার আঁচ অবশ্যই মাঝারি রাখতে হবে। মাঝে মাঝে ঢাকনা খুলে নেড়ে দিতে হবে। ১০ মিনিট পর ঢাকনা খুলে দেখা যাবে মোটামুটি পানি বেরিয়েছে। পানি শুকিয়ে ফেলার প্রয়োজন নেই। এ অবস্থায় ধুয়ে রাখা এবং পানি ঝরিয়ে রাখা পোলাও চাল এবং লবণ দিতে হবে। এবার মশলা দিয়ে ফুটিয়ে রাখা পানি দিয়ে দিতে হবে। মনে রাখবেন পানির পরিমাণ সবসময় চালের দ্বিগুণ হবে। পানি ফুটে উঠে একটু কমে এলে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে চুলার তাপ যেন অবশ্যই মাঝারি থাকে। ১০ মিনিট পর ঢাকনা খুলে দেখে একটু নেড়ে দিতে হবে। এ অবস্থায় ৪-৬টি গোটা কাঁচামরিচ ও পুদিনাপাতা এবং সামান্য পরিমাণ হলুদ রঙের ফুড কালার নেড়ে-চেড়ে ঢেকে রাখতে হবে আরও ৫-৭ মিনিট। এরপর অতিথি আপ্যায়নে ঈদ আনন্দে মোহনীয় পরিবেশে ঢাকনা খুলে একটি সুন্দর সার্ভিং ডিশে পরিবেশন করুন মজাদার চিকেন আখনি পোলাও।
খাসির শাহী রেজালা
উপকরণ: ১. খাসির গোশত ১ কেজি, ২. টক দই ১ কাপ, ৩. ঘি অথবা তেল পরিমাণমতো, ৪. লবণ পরিমাণমতো, ৫. পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ কাপ, ৬. পোস্ত বাঁটা ২ টেবিল চামচ, ৭. মিষ্টি দই ১ কাপ, ৮. আদা ও রসুন বাঁটা ২ টেবিল চামচ, ৯. ধনেগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, ১০. মরিচগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, ১১. হলুদগুঁড়া-১ টেবিল চামচ, ১২. সাদা এলাচ-৬টি, ১২. লবঙ্গ-৮টি, ১৩. জয়ত্রী গুঁড়া অর্ধেক চা-চামচ, ১৪. গোল মরিচ-৬-৮টি, ১৫. দারুচিনি ৫ টুকরা, ১৬. জয়ফল অর্ধেক চা-চামচ, ১৭. কাজুবাদাম ও পেস্তা বাদাম, ৪ টেবিল চামচ, ১৮. দুধ ১ কাপ, ১৯. কিশমিশ-১০-১২টি, ২০. আলুবোখারা-৬টি।
প্রস্তুত প্রণালী: প্রথমে মিষ্টি দই-এর সাথে কাজুবাদাম ও পেস্তা বাদাম দিয়ে ব্লেন্ডারে খুব ভালোভাবে ব্লেন্ড করে পেস্ট করে নিতে হবে। এরপর একটি পাত্রে গোশত নিয়ে তাতে একে একে টকদই, লবণ, মরিচগুঁড়া, হলুদগুঁড়া, এলাচ, দারুচিনি, গোলমরিচ, পেঁয়াজ বেরেস্তা, আদা রসুন বাঁটা, পোস্ত বাঁটা, তেজপাতা, লবঙ্গ, জয়ত্রী এবং জয়ফল গুঁড়া দিয়ে খুব ভালোভাবে হাত দিয়ে মাখিয়ে মাখিয়ে ম্যারিনেট করতে হবে। এবার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে ৩০ মিনিট। পরে চুলায় পাত্র বসিয়ে পরিমাণমতো তেল বা ঘি দিয়ে হালকা গরম হলে এতে ম্যারিনেট করে রাখা গোশত ঢেলে দিতে হবে। মাঝারি আঁচে রান্না করতে হবে এবং অনবরত নাড়তে হবে। কিছুক্ষণ পর ঢেকে দিতে হবে এবং মাঝেমাঝে ঢাকনা খুলে নেড়ে দিতে হবে। এভাবে প্রায় ২০ মিনিট রান্না করতে হবে। এ অবস্থায় ঢাকনা খুলে দেখা যাবে তেল ভেসে উঠেছে। এখন ১ কাপ দুধ দিতে হবে। আলাদাভাবে কোন পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ধীরে ধীরে গোশত সেদ্ধ হয়ে আসবে এবং ঝোল বেশ ঘন হয়ে আসবে। এরপর ৬টি আলুবোখারা দিয়ে দিতে হবে। খুব অল্প আঁচে রান্না করতে হবে। এ পর্যায়ে দই এবং বাদামের পেস্ট দিয়ে দিতে হবে। আরও ১০ মিনিট রান্নার পর দুই চামচ চিনি এবং কিশমিশ দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। চুলা বন্ধ করে কিছুসময় রেখে দিতে হবে। এরপর পছন্দমতো সাজিয়ে ঈদে পরিবার-পরিজন-অতিথি আপ্যায়নে পরিবেশন করুন মজাদার খাসির শাহী রেজালা।
রায়তা
উপকরণ : দই, বিট লবণ, চিনি, শসা, টমেটো, আপেল, চেরিফল, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা।
প্রস্তুত প্রণালী: প্রথমে টক দই, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা একসাথে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। তারপর একটি আপেল ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে। পরে একটি পাত্রে আপেল, চেরি, শসা এবং টমেটো কুচি নিয়ে তাতে বিট লবণ ও চিনি মেশাতে হবে। এখন এতে তৈরি করে রাখা পেস্ট খুব ভালো করে মিশিয়ে নিলেই হয়ে গেলো সুস্বাদু রায়তা। আপনার পছন্দমতো উপকরণ ব্যবহার করে সাজিয়ে নিয়ে পরিবেশন করুন রায়তা। ঈদে অতিথি আপ্যায়নে পোলাও অথবা বিরিয়ানির সাথে রায়তার জুড়ি মেলা ভার।
নারিকেল দিয়ে মুরগি মুসাল্লাম
যা যা লাগবে : মুরগি একটি, আদা বাঁটা পরিমাণমতো, রসুন বাঁটা পরিমাণমতো, পেঁয়াজ (কিউব করা এবং বাঁটা), গরম মসলা, নারিকেল বাঁটা, নারিকেল কুরানো, তেল, মরিচগুঁড়া, কাঁচামরিচ, পরিমাণমতো পানি, লবণ।
যেভাবে করবেন : নারকেল কুড়ে নিতে হবে। এর থেকে খানিকটা বেটে নিতে হবে। মুরগি ছোট ছোট টুকরা করে নিতে হবে। এতে আদা বাঁটা, রসুন বাঁটা, পেঁয়াজ বাঁটা, পেঁয়াজ কুচি, হলুদ, মরিচ, গরম মসলা, নারিকেল বাঁটা একসঙ্গে পরিমাণমতো মাখিয়ে নিতে হবে। সঙ্গে খানিকটা তেল দিয়ে মাখিয়ে নেবেন। এরপর প্যানে খানিকটা তেল দিয়ে মসলাসহ মুরগি কষিয়ে নিন। কিছুক্ষণ কষানোর পর এতে পরিমাণমতো লবণ দিতে হবে। আরও খানিকক্ষণ কষিয়ে পরিমাণমতো পানি দিতে হবে। এরপর ঢেকে দিন। দুই থেকে তিন মিনিট রাখুন। নারিকেলের তেল ওপরে উঠে এলে নামিয়ে ফেলুন। গরম গরম পরিবেশন করুন।
সবজি ভাজি পোলাও
গোশত পোলাও সবারই ভালো লাগে। কিন্তু প্রতিদিন একই স্বাদে পোলাও না খেয়ে ভিন্নতা আনলে মন্দ হয় না। অতিরিক্ত তেল চর্বিতে যাদের সমস্যা আছে তারা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে রান্না পোলাও বেছে নিতে পারেন। রুচির সঙ্গে স্বাস্থ্য রক্ষায় তাজা সবজি দিয়ে রান্না পোলাও খেতে অসাধারণ। নিজেদের খাওয়ার সঙ্গে অতিথি আপ্যায়নেও সবজি পোলাওয়ের তুলনা হয় না। আসুন আজ শিখে নেয়া যাক, সবজি পোলাওয়ের সহজ রেসিপি।
পিঁয়াজ কুচি আধা কাপ, আদা বাঁটা ১ চা চামচ, রসুন বাঁটা আধা চা চামচ, এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, কাঁচামরিচ পরিমাণমতো, তেজ পাতা ৪টি, চিনি ১ চা চামচ, লবণ স্বাদমতো, মাখন ১ টেবিল চামচ, ঘি আধা কাপ, বাঁধাকপি কাটা ১ কাপ, গাজর কাটা ১ কাপ, পেঁয়াজ লম্বা করে কাটা ১ কাপ, টমেটো কুচি ১ কাপ, কেপসিকাম টুকরো ২ কাপ, কুমড়া কাটা ২ কাপ, বাসমতী চাল ৪ কাপ, সিদ্ধ পানি দুই লিটার, আধা কাপ শুকনো ফল, নারকেল দুধ আধা কাপ।
এবার মাঝারি তাপে একটি কুকারে ঘি গরম করে নিতে হবে। এতে আদা ও রসুন বাঁটা দিয়ে ১ মিনিট ভেজে নিতে হবে। তার ভেতর অন্যান্য মসলা দিয়ে ভালোভাবে ভাজুন। মসলা হালকা বাদামি হলে সব সবজি, সবুজ কাঁচামরিচ দিয়ে কয়েক মিনিটের জন্য আবারও ভাজুন। এরপর চাল দিয়ে ২ মিনিট ভাজতে হবে। সেদ্ধ পানি, নারিকেল দুধ, টমাটো আর মাখন দিয়ে নাড়ুন। তারপর সব শুকনো ফল, লবণ, চিনি দিয়ে ঢাকনা বন্ধ করে কম তাপে ১০ মিনিট ধরে রান্না করুন। ব্যস হয়ে গেল তাজা সব সবজি দিয়ে গরম গরম পোলাও।
সেমাই জর্দা
সেমাই আমাদের চিরচেনা খাবার। এই সেমাই বিভিন্নভাবে রান্না করা যায়। খুব তাড়াতাড়ি রান্না করা যায়, তাই বিকালের নাশতায় অথবা অতিথি আপ্যায়নে এর জুড়ি নাই। আসুন, জেনে নিই জর্দা সেমাই রান্নার প্রণালী।
উপকরণ : সেমাই ২৫০ গ্রাম
চিনি ২ কাপ
ঘি আধা কাপ
চালকুমড়ার মোরব্বা কুচি ১ টেবিল-চামচ
এলাচ ৪টি
দারুচিনি ৪ টুকরা
কিশমিশ ও বাদাম কুচি ১ টেবিল-চামচ
প্রণালি : প্রথমে সসপ্যানে ২ টেবিল-চামচ ঘি দিয়ে সেমাই মৃদু আঁচে ভালো করে ভেজে তুলে রাখতে হবে। ২ কাপ চিনিতে আধা কাপ পানি দিয়ে জ্বাল দিয়ে সিরা তৈরি করতে হবে। সসপ্যানে ঘি দিয়ে তাতে দারুচিনি, এলাচ ও সেমাই দিয়ে চুলায় বসিয়ে চিনির সিরা দিয়ে একটু নাড়াচাড়া করতে হবে এবং পাঁচ মিনিট ঢেকে মৃদু আঁচে দমে রাখতে হবে। ঘি ওপরে উঠে এলে কাঁটা-চামচ দিয়ে একটু নেড়ে সেমাই আলগা করে দিতে হবে। সব শেষে মোরব্বা, কিশমিশ ও বাদাম ছড়িয়ে দিয়ে পরিবেশন করা যায় সেমাইয়ের জর্দা।
রেসিপি : আসমা খাতুন।

Check Also

সাতক্ষীরায় একুশে টিভির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে হাসপাতালে রোগীদের মাঝে খাবার বিতরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা।। একুশে টেলিভিশনের ২৫তম’ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও রজতজয়ন্তী উপলক্ষে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে শতাধিক রোগীর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।