শত মানুষ জীবিকা খোঁজে বেতনা নদীর জলে

এসএম শহীদুল ইসলাম: সাতক্ষীরার বেতনা নদীতে মাছুড়েদের মাছ ধরার হিড়িক পড়েছে। ছিপ বড়শি দিয়ে নদীতে মাছ ধরছেন মাছুড়েরা। বেতনা নদীর দুই তীরে সারিবদ্ধভাবে বসে তারা মাছ শিকার করছেন। বেতনা নদী পলিজমে ভরাট হওয়ার পর তা পুনঃখনন করা হয়। পুনঃখননের পর নদীটি প্রবাহ ফিরে পায়। জোয়ার-ভাটা খেলতে থাকায় মরা নদী যেন আবার প্রাণ ফিরে পায়। নদীতে আবার ভাসতে থাকে পাল তোলা নৌকা। জেলেরা জাল ফেলে মাছ ধরে। সৌখিন মৎস্য শিকারীরা ছিপ বড়শি নিয়ে নদীতে মাছ ধরে সময় কাটাচ্ছেন। এভাবে বেতনা নদীতে মাছ ধরার দৃশ্য বর্ণনা করেন স্থানীয় সংবাদকর্মী শিমুল সানা।

শিমূল সানা বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেতনা নদীর দুই তীরে শতশত সৌখিন মৎস্য শিকারী ছিপ বড়শি নিয়ে মাছ ধরছেন। প্রায় দুই মাস ধরে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন সদরের লাবসা, ধুলিহর-ব্রহ্মরাজপুর, ফিংড়ি, পুরাতন সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েকশত মানুষ। নদীতে রুই, কাতলা, মৃগেল, টেংরা, পারশে, কালবাউশ, গলদা, হরিণা চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাচ্ছেন জেলেরা। ৫-৬ কেজি ওজনের মাছও পাচ্ছেন কেউ কেউ। ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের চেলারডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল জব্বারের উদ্ধৃতি দিয়ে শিমুল সানা জানান, নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যাচ্ছে। আব্দুল জব্বার গত দুই মাস ধরে নিয়মিত মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন।  আব্দুল জব্বারের মতো অনেকেরই জীবিকার মাধ্যম এখন বেতনা নদী। শত মানুষ জীবিকা খোঁজে বেতনা নদীর জলে।

জানা গেছে, ২০২০ সালে একনেকে প্রকল্পটি পাশ হয় এবং ২০২১ সালে কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্প শেষ হবে বিধায় এপ্রিল মাসের মধ্যে বেতনা নদীর খনন কাজ শেষ হবে গত ৩১ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করে জানিয়েছিলেন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব ডঃ শেখ আব্দুর রশিদ। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, প্রকল্পের অধীনে ৩১টি স্লুইস গেটের কাজ করা হচ্ছে। বাকী গেটগুলো অন্য ফান্ড থেকে করা হবে। তিনি বলেছিলেন, খননের সময় বেঁচে থাকা অতিরিক্ত মাটি ওপেন সেলের মাধ্যমে বিক্রয় করা হবে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতাধীন সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার-১, ২, ৬-৮ এবং (এক্সটেনশান) এর নিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বেতনা নদী খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সরকার। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বেতনা নদী খনন প্রকল্পের কাজ করছে রামপাল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ডব্লিউইএল-এডব্লিউআর (জেবি) ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

 মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, চলতি বাংলা বছরের মধ্যে নদী খনন কাজ শেষ হবে। তখন মানুষের মুখে হাসি ফুটবে-ইনশাআল্লাহ। এলাকার মানুষ দায়িত্বশীলতার সাথে সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা পাবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।

এরআগে সাতক্ষীরা ও আশাশুনির বুক চিরে বয়ে যাওয়া বেতনা নদী নাব্যতা সংকটে পড়ে।

যশোরের নাভারনের ভিতর দিয়ে বেতনা নদী প্রবাহিত হয়ে কলারোয়া, সাতক্ষীরা উপজেলার মধ্য দিয়ে এঁকে বেঁকে আশাশুনি উপজেলার মধ্য দিয়ে খোলপেটুয়া নদীতে গিয়ে মিশেছে। পলি জমে নাব্যতা হারায় এক সময়ের প্রমত্তা বেতনা। দাবি ওঠে—বেতনা নদী খননের। বলা হয়, খনন করা না হলে সাতক্ষীরার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে নদীটি।

নদীটি ভরাট হওয়ার কারণে আশাশুনি থেকে সাতক্ষীরা সদরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হতে থাকে। বেতনা নদীর দুই তীরে মাঠের পর মাঠ চাষাবাদের জমি ও মৎস্য ঘের। তবে ঘের মালিকদের অবৈধভাবে নদীর খাস জায়গা দখল নদীকে সংকীর্ণ করে ফেলেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বেতনা নদীর বিবরণে জানা যায়, নদীটির পরিচিতি নম্বর নং ৬৪। বেতনা নদীর দৈর্ঘ্য ১৯১ কিলোমিটার ও গড় প্রস্থ ৫৫ মিটার। কালের বিবর্তনে নদীটি চার ভাগের তিনভাগই ভরাট হয়ে নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যায়।

এছাড়া সাতক্ষীরা সদরের বিভিন্ন পয়েন্টে নদীটি একেবারে শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছিল। শুধু তাই নয়, আশাশুনির অনেক স্থানে ভাটার সময় নদী হেঁটেই পার হতেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ। বেতনা নদী নাব্যতা হারানোর ফলে মৎস্য ঘের, খাল, বিলের থেকেও নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে উঁচু হয়ে গিয়েছিল। সে কারণে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। বর্ষা মৌসুমে সকল খালের গেটের  কপাট বন্ধ করে রাখতে হয়—যাতে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে না পারে।

 নদীর উভয় পাড়ে চর দখল করে গড়ে ওঠে একের পর এক ইটভাটা। সেখানে তৈরি হয় কাঁচা ইট। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ইজারা ছাড়াই যে যার মতো বেড়িবাঁধ দিয়ে দখল করে নিয়েছে নদীর চর। এরফলে পানি নিষ্কাশনের আর কোন পথ খোলা না থাকায় জলাবদ্ধতায় হাবুডুবু খেতে থাকে শহর ও গ্রামের মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে প্লাবন থেকে রক্ষা পেতে ও নদীটি বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান নাগরিক নেতারা।

Check Also

গাজায় গণহত্যা বন্ধে সাতক্ষীরা শিবিরের বিক্ষোভ

মুজাহিদুল ইসলাম: ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা: গাজায় ইজরাইলি গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিক্ষোভ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।