আজ ১৪ই এপ্রিল সোমবার। পহেলা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। বাংলা বছরের প্রথম দিনকে দেশের মানুষ বরণ করবে নানা আয়োজনে নতুন উন্মাদনায়। এজন্য জাতীয় পর্যায়ে নানা কর্মসূচী পালন করা হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে সরকারী-বেসরকারী ও সাংস্কৃতিক সামাজিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। প্রতিবছরের মতো এবারো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শোভাযাত্রা বের করা হবে। তবে এবার আর মঙ্গল শোভাযাত্রা না, আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হবে।

এবছর এমন একটা পরিবেশে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হচ্ছে; যখন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে স্বৈরাচারের কালো থাবা নাই। মুক্ত সংস্কৃতির নামে চাপিয়ে দেওয়া অনুষঙ্গ নাই। দেশের মানুষ একটা মুক্ত পরিবেশে নববর্ষের আনন্দ উপভোগের সুযোগ পাচ্ছে। তবে বাংলা নববর্ষের আয়োজনকে বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্রের কমতি ছিল না। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও স্বৈরাচার হাসিনার মুখোশকে রাতের আঁধারে পুড়িয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এবারের পহেলা বৈশাখ হবে সার্বজনীন। থাকছে বেশ কিছু নতুন মাত্রা। নববর্ষের শোভাযাত্রায় বাঙালি ছাড়াও ২৭ জাতিগোষ্ঠী অংশগ্রহণ করবে। শোভাযাত্রায় কৃষক একটি বড় থিম হিসেবে থাকবে। এ ছাড়া ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে শান্তির বার্তা। পুরো আয়োজন ঘিরে থাকবে কঠোর নিরাপত্তা।

এদিন বিকেলে কনসার্ট, ইসরাইলের গণহত্যার প্রতিবাদে গান আর রাতে অনুষ্ঠিত হবে ড্রোন শো। সঙ্গে আরও নানান দেশীয় আয়োজন। এবার নববর্ষের অনুষ্ঠান সন্ধ্যার মধ্যেই শেষ করার কোনো বিধিনিষেধ থাকবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি নিয়ে সন্ধ্যার পরও অনুষ্ঠান চলমান রাখা যাবে। গতকাল রোববার ছিল চৈত্রসংক্রান্তি। এ উৎসব ঘিরে এবার প্রথম সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

নববর্ষ উদযাপন নিয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, বাংলা নববর্ষে চারুকলার শোভাযাত্রায় বাঙালি ছাড়াও ২৭টি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ অংশগ্রহণ করে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরবে। ওইদিন বিকেলে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া চীনা দূতাবাসের অর্থায়নে বিকেলে ড্রোন শো হবে। যেখানে ২৪-এর জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আয়োজন থাকবে।

পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রায় ফিলিস্তিন নিয়ে গান গাওয়া হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ২০০ গিটারিস্ট নিয়ে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের গণহত্যার প্রতিবাদে গান পরিবেশন করবে রকস্টার ব্যান্ড বামবা। পাশাপাশি ফিলিস্তিনী পতাকা ও তাদের প্রতি সমর্থনমূলক গান পরিবেশিত হবে। ঢাকার আশপাশে যত মিউজিশিয়ান আছেন, যারা গিটার বাজাতে পারেন, তাদের অনুরোধ করব আপনারা গিটারটা নিয়ে র‌্যালিতে চলে আসেন এবং সঙ্গে ফিলিস্তিনের একটা পতাকা রাখবেন।

শোভাযাত্রার বড় অংশ জুড়ে বাংলার লোকসংস্কৃতি ফুটিয়ে তোলা হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘নববর্ষের শোভাযাত্রা মধ্যবিত্তদের চালু করা। তবে এর সঙ্গে ফসল সম্পর্কিত ছিল। যেকোনোভাবে হোক আমাদের শোভাযাত্রায় এগুলো স্থান পায়নি। নববর্ষের এবারের শোভাযাত্রার থিম হবে কৃষক, যা বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষকদের প্রতি সম্মান জানাতে চিহ্নিত করা হবে। এটি কৃষকের অবদান ও তাদের সংগ্রামকে স্বীকৃতি প্রদান করবে।

সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা এ বিষয়ে আরও বলেন, এটি আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির অংশ হিসেবে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসবে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছাবে। এবারের বাংলা নববর্ষের শোভাযাত্রা আগের সববারের চেয়ে ভিন্ন হতে যাচ্ছে। এসব আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি করা এবং একতার পরিবেশ সৃষ্টি করা। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিভাজনের রাজনীতির কারণে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভেতরে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কালচারাল হিলিং ও কালচারাল ইনক্লুসিভনেসের মাধ্যমে তা দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

নববর্ষ দিনের অন্যান্য অনুষ্ঠান সম্পর্কে সংস্কৃতি উপদেষ্টা জানান, প্রতিবারের মতো এবারও ছায়ানটের অনুষ্ঠান হচ্ছে। তবে স্থান বদলে সুরের ধারার অনুষ্ঠানটি এবার রবীন্দ্র সরোবরে হবে। সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সুরের ধারা এবার বাংলা গানের বাইরেও ভিন্ন আয়োজন রাখবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আয়োজন করা হবে বৈশাখী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট ১৯৮৯ সাল থেকে পয়লা বৈশাখে শোভাযাত্রা করে আসছে। শুরুতে নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। পরবর্তীতে এর নাম বদল করে রাখা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এইবার সেই শোভাযাত্রা আগের নামে ফিরলো।