তালার বালিয়ায় কপোতাক্ষ নদের ঝুকিপূর্ণ বাঁধে ভাঙন আতংকে ৪ গ্রামের মানুষ!

খেশরা (তালা): কপোতাক্ষ নদের তালা উপজেলার বালিয়া গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ যেনতেন ও দায়সারাভাবে তৈরি করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাত এবং ঝড়ের প্রভাবে কপোতাক্ষ নদে অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়া পানির চাপে গত ২৭ মে ওই বাঁধের একাধিক স্থানে ফাঁটল দেখা দেয়। একস্থানে বাঁধ ভেঙে এবং বাঁধের কয়েকটি স্থান উপচে পানি লোকালয়ে আসতে থাকে। নদের পানির কারনে ব্যপক ক্ষয়-ক্ষতি রোধে গ্রামবাসী নিজ উদ্যোগে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করলেও নদীর স্রোতে তা’ টেকসই করা যায়নি। যে কারনে বাঁধের একাধিক স্থানে এখনও ফাটল সহ দূর্বল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় শেষ হলেও কপোতাক্ষ নদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়া পানি এখনও কমেনি। এছাড়া ভরাকটাল (জোয়ার গোন) শুরু হলে নদে তীব্র পানি বৃদ্ধি পাবে। এতেকরে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ পানির চাপে যে কোনও সময় ভেঙ্গে যেয়ে সংলগ্ন ৪টি গ্রাম ও বিল প্লাবিত হয়ে কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হবার আশংকা দেখা দিয়েছে।
ভুক্তভোগী এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন সানা, মো. আজিজুর রহমান গাজী ও জলিল মোড়লসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, এই এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কপোতাক্ষ নদ খনন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মানে ব্যপক গড়িমসি, অনিয়ম এবং দায়সারা কাজ করে। যার কারনে এখানকার মানুষদের ভোগান্তি ও আতংকের মধ্যে থাকতে হচ্ছে।
তাঁরা আরও জানান, কপোতাক্ষ নদের তালা উপজেলার জালালপুর ও খেশরা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী শুভংকরকাটি গ্রামে বিলের চর (মালেকের ঘের) হতে টিআরএম সংযুক্ত খাল দিয়ে তালা-শালিখা সড়কের বালিয়া ব্রীজ পর্যন্ত নদের ধারে যেনতেন বাঁধ নির্মান করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরফলে ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময়ে কপোতাক্ষ নদে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির সাথে ঝড়ের আঘাতে দূর্বল বাঁধ ভেঙে যেতে থাকে এবং কয়েকটি স্থানে বাঁধ উপচে পানি নদ সংলগ্ন বিল ও লোকালয়ে প্রবেশ করতে থাকে। এসময় ব্যপক ক্ষয়-ক্ষতি রোধে এলাকার মানুষ ঝড় উপেক্ষা করে স্বেচ্ছায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাটি ও পলিথিন দিয়ে কোনওভাবে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করে। এরমধ্যে ঝড়ের তান্ডবে বালিয়া কারিকর পাড়ার সালাম গাজীর বাড়ির পাশে কপোতাক্ষ নদের বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। এতে গ্রামের প্রায় ৫শ’ মানুষ পানি বন্ধী হয়ে পড়ে এবং লোনা পানির প্রভাবে গাছপালা ও ফসলের ব্যপক ক্ষতি হওয়া সহ কয়েকটি পুকুর প্লাবিত হয়।
বালিয়া গ্রামের রাশেদুল মোড়ল ও হাবিবুর রহমান গাজী জানান, গ্রামবাসী স্বউদ্যোগে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ কোনও ভাবে ঠিক করলেও তা যথাযথ না। নদের পানির চাপে এই বাঁধের একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। আসন্ন ভরাকটালের (জোয়ার গোন) প্রভাবে নদে আরও পানি বৃদ্ধি পাবে এবং নদের বাঁধ ধ্বসে যাবে। এখনি ওই বাঁধ মেরামত করা না হলে বালিয়া, শ্রীমন্তকাটি, তেঘরিয়া ও শুভংকরকাটি বিলের ৬/৭শ’ বিঘা মৎস্য ঘের ভেঁসে যাবে এবং গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে কোটি টাকার উপরে ক্ষয়-ক্ষতি হবে। এবিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও এখনও কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। একারনে এলাকার শতশত মানুষ বাঁধ ভাঙার আতংকের মধ্যে দিনাতিপাত করছে।
বড়ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি রক্ষায় এলাকার মানুষ-অতিদ্রুত কপোতাক্ষ নদের বালিয়া বাজার থেকে এবং শুভংকরকাটি বিলের চর (মালেকের ঘের) হতে টিআরএম খালের দুপাশ হয়ে বালিয়া ব্রীজ পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মানের দাবী জানিয়েছেন। এছাড়া প্রতি বছরে বাঁধ ভাঙ্গা ক্ষতি থেকে স্থায়ী রক্ষা পেতে নদ খননের পরবর্তী অংশে তেঘরিয়া মৌজার শুরু তেকে ডুমুরিয়া গ্রাম পর্যন্ত সিএস ম্যাপ অনুযায়ী কপোতাক্ষ নদ খননের দাবী জানিয়েছেন।

Please follow and like us:

Check Also

গণঅভ্যুত্থানের মাস পূর্তিতে সাতক্ষীরায় ‘শহীদী মার্চ’  পালিত

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: কেন্দ্রীয় ঘোষণা অনুযায়ী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের এক মাস পূর্তিতে ‘শহীদী মার্চ’ পালিত হয়েছে সাতক্ষীরায়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাতক্ষীরার শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার বিকেলে সাতক্ষীরা শহরের শহীদ আসিফ চত্বরে শহীদী মার্চের কর্মসূচি পালন করে। সমাবেশে সাতক্ষীরার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘‘শহীদ শিক্ষার্থীদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।