পপুলার ভোটে লাখ লাখ অবৈধ ভোট পড়েছে: দাবি ট্রাম্পের

ডোনাল্ড ট্রাম্পসর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড টাম্প বিজয়ী হলেও সাধারণ ভোটারদের রায়ে ট্রাম্পের চেয়ে ২০ লক্ষাধিক ভোট বেশি পেয়েছেন হিলারি ক্লিনটন। এমনটাই উঠে এসেছে নির্বাচনি ফলাফলে। তবে এটা মানতে নারাজ ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দাবি, ৮ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাধারণ নাগরিকদের ভোটে অর্থাৎ পপুলার ভোটেও তিনি জয়ী হয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষায়, আপনি যদি অবৈধভাবে ভোট দেওয়া লাখ লাখ মানুষকে বাদ দেন তাহলে পপুলার ভোটেও আমিই জয়ী হয়েছি।নিজের এমন দাবির পক্ষে অবশ্য কোনও তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেননি ট্রাম্প বা তার দল রিপাবলিকান পার্টি।

পপুলার ভোটে পিছিয়ে থাকলেও নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ইলেক্টোরাল কলেজের সমর্থন নিশ্চিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গ্রিন পার্টির প্রার্থীর পক্ষ থেকে উইসকনসিনে ভোট পুনর্গণনার পক্ষে হিলারির সমর্থনের পর পপুলার ভোট নিয়ে নিজের এমন অবস্থানের কথা জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ইলেক্টোরাল কলেজ আনুষ্ঠানিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে ভূমিকা পালন করে। ৫৩৮ জন ইলেক্টরের সমন্বয়ে ইলেক্টোরাল কলেজ গঠিত। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে প্রার্থীকে এর মধ্যে অন্তত ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পেতে হয়। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল ভোট নিশ্চিত করেছেন।

টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ইলেক্টোরাল কলেজে ভূমিধস জয়ের পাশাপাশি আমি পপুলার ভোটেও জয়ী হয়েছি; অবৈধভাবে ভোট দেওয়া লাখ লাখ মানুষকে যদি বাদ দেওয়া হয় তাহলে পপুলার ভোটেও আমিই বিজয়ী হয়েছি।

আরেক টুইটে ট্রাম্প লিখেছেন, ইলেক্টোরাল কলেজের চেয়ে কথিত পপুলার ভোট পাওয়া আমার জন্য আরও সহজ। এর জন্য আমাকে তিন বা চারটি রাজ্য সফর করতে হবে; যেখানে এর আগে আমি ১৫টি রাজ্য ঘুরে বেরিয়েছি। আমি আরও সহজে এবং প্রাণবন্তভাবে বিজয়ী হবো।

ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ভার্জিনিয়া, নিউ হ্যাম্পশায়ার ও ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে ‘গুরুতর ভোটার জালিয়াতি’ ছিল। এ তিন রাজ্যের সবগুলোতেই হিলারি ক্লিনটন জয়ী হয়েছেন। সংবাদমাধ্যমকে দোষারোপ করে ট্রাম্প দাবি করেন, এসব অঙ্গরাজ্যে ভোট জালিয়াতির ইস্যুতে সংবাদমাধ্যমগুলো কথা বলছে না।

রবিবার ট্রাম্প বলেন, তার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন ইতোমধ্যে নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিয়েছেন।

উইসকনসিনে সামান্য ব্যবধানে হিলারির বিরুদ্ধে জয় পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সপ্তাহে গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইন সেখানে ভোট পুনর্গগণার উদ্যোগ নেন। মিশিগান এবং পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যেও ভোট পুনর্গগণা চান জিল স্টেইন।

শনিবার উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে ভোট পুনর্গণনায় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনি শিবির যোগ দেবে বলে তাদের আইনজীবী মার্ক এলিয়াস নিশ্চিত করেছেন। এরপরই ট্রাম্প মন্তব্য করেন, ‘জিল স্টেইন ভোট পুনর্গণনার নামে আসলে নিজের কোষাগার মজবুত করছেন। কারণ এর জন্য তিনি সমর্থকদের কাছ থেকে অনুদান নিচ্ছেন।’

ভোট পুনর্গণনার নামে গ্রিন পার্টি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলেও অভিযোগ করেন ট্রাম্প। জিল স্টেইনের প্রতি নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ ও কলুষিত না করে তাকে সম্মান দেখানো উচিত।’

নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আগে, এমনকি নির্বাচনের দিনও ট্রাম্প নির্বাচনকে সাজানো বলে মন্তব্য করেছিলেন। নির্বাচনের ফলাফল না মেনে নেওয়ারও ইংতিত দিয়েছিলেন। তবে এবার তার জয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ট্রাম্প তীব্র সমালোচনা করেছেন।

তিনি বলেন, “জনগণ তাদের মতামত দিয়েছেন, আর নির্বাচন শেষ হয়েছে। নির্বাচনের রাতেই হিলারি ফোন করে আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে হার মেনে নেন। তখন হিলারি বলেছিলেন, ‘আমাদের এই ফলাফল মেনে নিতে হবে এবং সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’

শনিবার এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘গ্রিন পার্টির অসম্ভব ভোট পুনর্গণনার ষড়যন্ত্রে যোগ দিয়েছে বাজেভাবে পরাজিত এবং নীতিহীন ডেমোক্র্যাটরা।’

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ ওঠা তিন অঙ্গরাজ্যের মধ্যে প্রথম দফায় উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে ভোট পুনর্গণনার আবেদন জানানো হয়েছে। শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইন উইসকনসিনের নির্বাচন কমিশনে আবেদনটি জমা দেন। কারচুপির অভিযোগ ওঠা অপর দুই অঙ্গরাজ্য মিশিগান ও পেনসিলভ্যানিয়ায়ও শিগগিরই ভোট পুনর্গণনার আবেদন করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। জিল স্টেইনের দাবি, মার্কিন ভোটিং সিস্টেম হ্যাক করে ওই কারচুপি করা হয়।

হিলারি শিবিরের আইনজীবী মার্ক এলিয়াস বলেছেন, ‘ভোট পক্রিয়ায় কোনও ধরনের কারচুপি হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য হিলারি শিবির ও বাইরের বিশেষজ্ঞরা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। নির্বাচনে কারচুপির উদ্দেশে মেশিনের ক্ষতি করা হয়েছে, এমন কোনও প্রমাণ আমরা পাইনি। তবে যে সাড়ে ছয় কোটি মার্কিনি হিলারি ক্লিনটনের সমর্থনে ভোট দিয়েছেন, তাদের অনুরোধের কারণে সত্যিই স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোট গণনা হয়েছে কি না, তা জানার জন্য ভোট পুনর্গণনায় অংশগ্রহণের বাধ্যবাধকতা আমাদের রয়েছে।’

উইসকনসিনে হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে খুবই কম ব্যবধানের জয় পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে পুনর্গণনায় উইসকনসিনের ফলাফল পাল্টে গেলেই যে হিলারি জিতে যাবেন তা নয়। এর জন্য মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ার ফলাফলের ওপরও নির্ভর করবে। উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া ও মিশিগানে ইলেক্টোরাল ভোট ছিল যথাক্রমে ১০, ১৬ ও ২০।  পেনসিলভানিয়ায় ভোট পুনর্গণনার আবেদনের সময়সীমা সোমবার আর মিশিগানের সময়সীমা বুধবার পর্যন্ত।

৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল পরিবর্তন করে হিলারিকে প্রেসিডেন্ট হতে হলে উইসকনসিন, মিশিগান ও পেনসিলভানিয়া – এই তিন রাজ্যের ফলই তার পক্ষে যেতে হবে।

উল্লেখ্য, কারচুপির অভিযোগ ওঠা তিনটি অঙ্গরাজ্যে ভোট পুনর্গণনার আবেদনের খরচ মেটানোর জন্য জিল স্টেইন অনলাইনে ফান্ড খুলেছেন সেখানে ৫৩ লাখ ডলার অর্থ সগ্রহ হয়েছে। এ পর্যন্ত যে অর্থ সংগৃহীত হয়েছে তা দিয়ে উইসকনসিন আর পেনসিলভানিয়ার ব্যয় মেটানো যাবে। তবে মিশিগানে আবেদনের জন্য আরও টাকার প্রয়োজন পড়বে। স্টেইনের ওই তহবিল সংগ্রহের পেইজে বলা হয়েছে, তিন অঙ্গরাজ্যে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রায় ৬০-৭০ লাখ ডলার খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, পলিটিকো।

/এমপি/

Please follow and like us:

Check Also

আরও ৬ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ

অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান বিক্ষোভ আরও দানা বাঁধছে। যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।