যশোরের যশ খেজুুুুরের রস : অভয়নগরে আসছে শীতকে ঘিরে গাছিরা ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছে

বি.এইচ.মাহিনী : ঐতিহাসিকভাবে প্রসিদ্ধ যে, ‘যশোরের যশ খেজুরের রস’। এটি শুধু কথায় নয়, কাজেও। শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। তাই প্রতি বছরের ন্যায় এবারো অভয়নগরের ভৈরব উত্তর জনপদের গাছিরা খেজুরের রস আহরণের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে। সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছেন। শুরু করেছেন খেজুর গাছের প্রাথমিক পরিচর্যাও। যাকে বলা হয় ‘গাছ তোলা’। এক সপ্তাহ পরই আবার গাছে চাছ দিয়ে নলি ও গুজা লাগানো হবে। খেজুর গাছ থেকে রস বের করতে তিনটি স্তর পেরিয়ে ১৫-২০দিন পরেই রস আহরণ শুরু হয়। ভৈরব উত্তরের বিভিন্ন গ্রামে বিশেষত বিল ও রাস্তার পাশে এখন চোখে পড়ছে খেজুর গাছ তোলা ও চাছার দৃশ্য। গাছিরা এখন মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। গতকাল সোমবার উপজেলার সিদ্দিপাশা, শুভরাড়া, বাঘুটিয়া ও শ্রীধরপুরের বিভিন্ন গ্রাম ও কাঁচা সড়কের পাশে খেজুর গাছ কাটার (পরিচর্যা) এমন অসংখ্য দৃশ্য চোখ পড়ে। আর কিছুদিন পরই গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধু বৃক্ষ থেকে সুমধুর রস বের করে গ্রামের ঘরে ঘরে শুরু হবে গুড়, পাটালি তৈরীর উৎসব। অভয়নগর ও এর আশেপাশের গ্রামে গ্রামে খেজুরের রস জ্বালিয়ে পিঠা, পায়েস, মুড়ি মুড়কী ও নানা রকমের মুখরোচক খাবার তৈরীর করার ধুম পড়বে। আর রসে ভেজা কাচি পোড়া পিঠার (চিতই পিঠা) স্বাদই আলাদা। নলেন গুড়, ঝোলা গুড় ও দানা গুড়ের সুমিষ্ট গন্ধেই যেন অর্ধ ভোজন। রসনা তৃপ্তিতে এর জুড়ি নেই। নলেন গুড় পাটালির মধ্যে নারিকেল কোরা, তিল ভাজা মিশালে আরো সুস্বাদু লাগে। আমাদের ঐতিহ্যবাহী গুড়-পাটালির ইতিহাস অনেক প্রাচীন। এখানকার বিখ্যাত এ গুড়-পাটালি ভারত, পাকিস্থান, আমেরিকা, মালেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে যায়। খেজুর গাছ আন্যন্য গাছের মত বপন করে বা সার মাটি দিয়ে তৈরি করা লাগে না। প্রাকৃতিক নিয়মেই মাঠে পড়ে থাকা খেজুরের আঁটি (বীজ) থেকে চারা জন্মায়। সৃষ্টি হয় খেজুরের বাগান। সাধারণত বিলের মাঝের আইলের উপর, কাঁচা রাস্তার পাশে বা উন্মুক্ত জমিতে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই বেড়ে ওঠে খেজুর গাছ। তবে খেজুর গাছ ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় রস, গুড় ও পাটালির উৎপাদন বহুলাংশে কমে যাচ্ছে অভয়নগর ও আশেপাশের এলাকায়। এখন আর আগের মত মাঠ ভরা খেজুর বাগান দেখা যায় না, নেই মাঠে মাঠে রস জ্বালানো বান (চুলো)। যা আছে তা নিতান্তই কম। নলেন গুড়, পাটালি পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে গাছিরা গাছ পরিস্কার বা তোলা চাচা করার জন্য গাছি দা, দড়ি তৈরী সহ ভাড় (মাটির ঠিলে) ক্রয় ও রস জ্বালানো জায়গা ঠিক করা সহ বিভিন্ন কাজে রয়েছে ব্যতিব্যস্ত। তবে সংশ্লিষ্টরা জানান গাছ কাটা, রস জ্বালানো ও গুড়-পাটালি তৈরীর উপকরণের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় গুড়-পাটালির দাম বেশী হবে।

Please follow and like us:

Check Also

সাতক্ষীরায় বছরে ২৫০ কোটি টাকার গাছের চারা উৎপাদন

মাটি ও আবহাওয়ার কারণে সব ধরনের গাছের চারা উৎপাদন হয় সাতক্ষীরায়। এসব চারার মধ্যে রয়েছে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।