সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গায় মদের দোকানে ঝুকে পড়েছে যুবসমাজ ও শিক্ষার্থীরা

ক্রাইমবাতা রিপোটঃ মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ও ক্রসফায়ার আতঙ্কে অনেক মাদক ব্যবসায়ী গা ঢাকা দিলেও দেশি মদের দোকান খোলা রয়েছে। ফলে মাদকসেবীরা এখন দেশি মদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে বলে জানান অভিভাবকরা। এছাড়াও স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীরা দেশি মদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা বাজারের দেশি মদের দোকানের মালিক নিয়ম নীতি না মেনে দেশি মদের ব্যবসা করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অতিরিক্ত দামে মদ বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

স্থানীয় সুশীল সামজের ব্যক্তিরা অভিযোগ করে বলেন, সরকারের নিয়ম-নীতি না মেনে প্রকাশ্যে স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীদের ও সব ধরণের মানুষের কাছে মদ বিক্রি করা হচ্ছে। এতে বিপথগামী হয়ে পড়ছে আগামীর ভবিষ্যত তরুণ প্রজন্ম। ধংস হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ যুব-সমাজ। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, জেলায় সরকার অনুমোদিত তিনটি দেশি মদের দোকান রয়েছে। দোকানগুলো হচ্ছে শহরের সাতক্ষীরা বড় বাজারে একটি, কালিগঞ্জ বাজারে একটি ও সদর উপজেলা ঝাউডাঙ্গা বাজারে একটি। এরমধ্যে কলারোয়া উপজেলা ও সদর উপজেলার মধ্যবর্তী ঝাউডাঙ্গা বাজারের দেশি মদের দোকানটি রাজেস শ্যাম ও রাধেশ্যাম নামে বেশি পরিচিত। ঝাউডাঙ্গা বাজারের দেশি মদের দোকানটি রাজেস শ্যাম ও রাধেশ্যাম যৌথভাবে পরিচালনা করেন।

জানা যায়, ঝাউডাঙ্গা বাজারে দেশি মদের দোকানটি সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নির্দিষ্ট সময়ের পরও সব সময় দোকান খোলা রেখে সব ধরণের মানুষের কাছে মদ বিক্রি করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, শুক্রবার দোকান সম্পূর্ণ বন্ধ থাকার নিয়ম থাকলেও সেটি না মেনে অবৈধভাবে শুক্রবারে মদের দোকান খুলে রমরমা মদের ব্যবসা করা হয়।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, ঝাউডাঙ্গা মদের দোকান সকাল ৮টা থেকে একটানা রাত ১১টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখা হয়। এছাড়াও নিষিদ্ধ পলিথিনে প্যাকেট করে মদ বিক্রি করা হয়। ফলে মাদকসেবীরা পলিথিনে প্যাকেট করে মদ কিনে বন্ধুদের জন্য নিয়ে যায়। এছাড়া মদের দোকানের যৌথ মালিক রাজেস শ্যাম ও রাধেশ্যামের বিরুদ্ধে মদে পানি মেশানো, ভেজাল মদ বিক্রয়সহ অনিয়মের অভিযোগ স্থানীয় মহলের। তবে ঝাউডাঙ্গা বাজারের দেশি মদের দোকানটি বর্তমান রাজেস শ্যাম পরিচালনা করছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় বাজারের নামপ্রকাশ অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ব্যবসায়ীরা মদ পান না করলেও অনেক ব্যবসায়ীর নাম ঠিকানা মদের দোকানের রেজিস্ট্রারে লিখে রাখেন। তারা নাকি মদের দোকান থেকে নিয়মিত মদ পান করেন। স্থানীয় সাধারণ ব্যবসায়ীরা দাবি করে বলেন, মদের দোকানে রেজিস্ট্রারে লেখা অধিকাংশই ব্যক্তি মদ পান করেন না। রাজেস শ্যাম ও রাধেশ্যাম স্থানীয় সাধারণ ব্যবসায়ীদের নাম ব্যবহার করে তিনি অন্য মানুষের ও স্কুল কলেজ গামী শিক্ষার্থীদের কাছে মদ বিক্রি করেন। আর অফিসাররা আসলে এধরনের নাম দেখিয়ে দেয় তারা। তিনি আরো বলেন, ঝাউডাঙ্গা বাজারের ৩নং গলি নামে পরিচিত এই মদের দোকানে বর্তমানে স্কুল-কলেজের ছাত্রসহ বিভিন্ন বয়সী শ্রেণি-পেশার কয়েক শত মানুষ প্রতিদিন মদ পান করতে আসে। এরমধ্যে শিক্ষার্থী ও যুবকরা প্যাকেটে করে মদ (নিষিদ্ধ পলিথিনে) নিয়ে যায়। এছাড়া অনেকে দোকানে বসে চায়ের কাপে (এক কাপ) মদ ১০০-১৫০ টাকায় মদ পান করে চলে যায়। সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এই মদের দোকানে যুবক ও শিক্ষার্থীদের আসা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। তবে সন্ধ্যার পর বিভিন্ন বয়সী মানুষের পদচারণায় ঝাউডাঙ্গা বাজারের ৩নং গলিতে দিন রাত মদের আসর জমজমাট হয়ে ওঠে। এসময় দোকানে কোন সরকারি সেলস্ ম্যান ও কর্মচারী না থাকায় মদের দোকানের মালিক বহিরাগত লোকজন দিয়ে মদ বিক্রি করে থাকে। স্থানীয় সচেতন মহল ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা এব্যাপারে দোকান মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বলেন, মদের দোকান মালিক ১ হাজার লিটার মদের সাথে ৫শ’ লিটার পানি মিশিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। স্থানীয় অভিভাক ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা এসব অনিয়মের ঘটনা উল্লেখ করে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অবহিত করে একাধিকবার অভিযোগ করলেও আজ পর্যন্ত দোকান মালিকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। সংশ্লিষ্টদের দাবি, এসব মদের দোকানে কঠোর নজরদারি না করলে বিপথগামী হয়ে পড়বে যুবসমাজ ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে ঝাউডাঙ্গা মদের দোকোনের মালিকের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অবিলম্বে তদন্তপূর্বক দোকান মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার সচেতন মহল

Please follow and like us:

Check Also

সাতক্ষীরা বিসিক মোড়ে সার্জেন্ট অনিমেষের বিরুদ্ধে সাংবাদিকের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ

শেখ আল জাবীর: (নগরঘাটা ইউনিয়ন প্রতিনিধি) সাতক্ষীরা খুলনা মহাসড়কের বিনেরপোতা বিসিক শিল্প নগরী এলাকায় ট্রাফিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।