বাবা মা-ভাইবোনের রক্তাক্ত লাশের পাশে শিশুটির কাদা দেখে সকলে কাদছিল

ক্রাইমবাতা রিপোটঃকলারোয়াঃ     সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ‘ফোর মার্ডার’ ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে মাত্র পাঁচ মাস বয়েসের শিশু মারিয়া খাতুন। শিশুটি বর্তমানে স্থানীয় হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা মেম্বার নাসিমা খাতুনের জিম্মায় রয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, মায়ের বুকের দুধের জন্য শিশুটির কান্না থামানো যাচ্ছে না। শিশুটির আর্তনাদ স্থানীয়দেরও কাঁদাচ্ছে। শিশুটি আজ বৃহস্পতিবার সকালে তার বাবা, মা, ভাই, বোনের রক্তাক্ত লাশের পাশে যখন কান্নাকাটি করছিল, তখন শত শত মানুষ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। তারাও কেঁদেছেন অঝোরে। মায়ের বুকের দুধের জন্য সেই ভোর থেকে চিৎকার করে কান্না করছে শিশুটি।

মেম্বার নাসিমা খাতুন বলেন, ‘জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তফা কামাল শিশুটির যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছেন। তবে শিশুটি তার স্বজনদের কাছেই থাকবে। আর শিশুটির দেখভালের দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।’

এর আগে বুধবার গভীর রাতে কলারোয়া উপজেলায় খলসি গ্রামে ঘরে ঢুকে শাহিনুর রহমান-সাবিনা খাতুন দম্পতি ও তাদের ছেলে সিয়াম হোসেন মাহি (১০) এবং মেয়ে তাসনিমকে (৮) গলা কেটে হত্যা করে দুবৃর্ত্তরা। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে নিহতদের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ঘটনার সময় মা সাবিনা খাতুন ও বাবা শাহিনুর রহমানের পাশে ঘুমিয়ে ছিল তাদের ছোট মেয়ে মারিয়া খাতুন।

নিহত শাহিনুরের ছোট ভাই রায়হানুল ইসলাম জানান, তার বড় ভাই তিন ছেলে মেয়ে থাকেন। বুধবার রাতে মা ছিলেন এক আত্মীয়ের বাড়িতে। আর তিনি নিজে (রায়হানুল) ছিলেন পাশের বাড়িতে, তার ঘরে।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে বড় ভাইয়ের ঘর থেকে তার মেয়ে মারিয়ার কাঁন্নার শব্দ শুনতে পান। অনেকক্ষণ ধরে  শিশুটি কান্না করতে থাকায় তিনি ঘরের সামনে গিয়ে ভাইকে ডাকতে থাকেন। কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে বারান্দার গেটের সামনে দিয়ে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে দেখতে পান ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকানো। পরে গেটের তালা ভেঙ্গে ঘরের দরজা খুলে দেখেন ভেতরে ভাই-ভাবির নিথর দেহ পড়ে আছে। অন্য ঘরের দরজা খুলে ভাইপো সিয়াম ও ভাইজি তাসনিমের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। পাঁচ মাসের শিশু মারিয়া তখন কাঁদছিল।

রায়হানুল আরও জানান, তাদের সঙ্গে জমা-জমি নিয়ে পাশের কিছু লোকের বিরোধ রয়েছে। কিন্তু কারা এ ঘটনা ঘটালো তা তিনি জানেন না।

কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) হারান পাল জানান, নিজের ঘরের মধ্যে শাহিনুর রহমান, তার স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে শাহিনুরের পা বাঁধা ছিল এবং তাদের চিলেকোঠার দরজা খোলা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে- ছাদের চিলেকোঠার দরজা দিয়ে হত্যাকারীরা ঘরে প্রবেশ করে। ঘটনার রহস্য উন্মোচনে পুলিশ কাজ শুরু করেছে বলে জানান তিনি।

Please follow and like us:

Check Also

সাতক্ষীরায় প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৬ বাস্তবায়ন বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিনিধি : প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৬ বাস্তবায়ন বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।