‘আমার পায়ে গুলি লেগেছে, গ্রামে অনেককে হত্যা করা হয়েছে’

ডেস্ক: ১৬ বছরের মোহাম্মদ জুনায়েদকে হাসপাতালের বিছানার সঙ্গে বেঁধে রাখতে হয়েছে। গুলির আঘাত তার শরীরে। ব্যথানাশক মরফিনের কার্যকারিতা কমে এলে যন্ত্রণায় জুনায়েদ বিছানা থেকে লাফিয়ে ওঠে। সেটি বন্ধ করতেই এমন ব্যবস্থা।
জুনায়েদ রোহিঙ্গা কিশোর। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তার। এক দিন আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে জুনায়েদের মাথায় গুলি লাগে।
জুনায়েদের বাবা মোহাম্মদ নবী এএফপিকে বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনারা আমার চোখের সামনে জুনায়েদকে গুলি করে। এরপর থেকেই তীব্র ব্যথায় কাতর সে।’
সীমান্তবর্তী এলাকায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই গুলিতে গুরুতর আহত রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পর থেকে এই হাসপাতালে গুরুতর আহত রোহিঙ্গাদের ভিড় বেড়েছে। সহিংসতা থেকে বাঁচতে সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে আসা গুরুতর আহত অনেক রোহিঙ্গা চিকিৎসা নিচ্ছে এখানে।

হাসপাতালের বিছানায় আর জায়গা হচ্ছে না। মেঝেতে আহত ৭০ রোহিঙ্গাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হাসপাতালে এসে পৌঁছেছে আরও আহত রোহিঙ্গা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মিয়ানমার সীমান্ত থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে। সেখানকার অস্ত্রোপচারবিদ (সার্জন) কামাল উদ্দিন বলেন, ‘চিকিৎসাসেবার সরঞ্জাম সীমিত। দরিদ্র রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার বন্দোবস্ত করার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তারা গুরুতর আহত। তাদের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত।’
জাতিসংঘ বলছে, দুই সপ্তাহ আগে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারের প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।
ফেরা যাক জুনায়েদের বাবার কাছে। মংডু থেকে পালিয়ে আসার সময় জুনায়েদের বাবা নবী ও তাঁর ছয় সন্তান বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে নবী শুনেছেন, তাঁর সন্তানেরা সীমান্ত পার হতে পেরেছে।
নবীর সবচেয়ে ছোট ছেলে বশির উল্লাহ। ১৪ বছরের রোহিঙ্গা কিশোর বশির উল্লাহরও পায়ে গুলি লেগেছে। সীমান্তের কাছে বেসরকারি একটি হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে বশির উল্লাহ এএফপিকে বলে, ‘প্রাণ বাঁচাতে যখন আমরা ছুটছিলাম, তখন তাঁরা (মিয়ানমারের সেনাবাহিনী) নির্বিচারে গুলি ছোড়ে। আমি মাটিতে পড়ে যাই। পায়ে গুলি এসে লাগে। আমি সৌভাগ্যবান। গুলি লাগলেও আমার খুব বেশি রক্তক্ষরণ হয়নি। গ্রামে আরও অনেককে হত্যা করা হয়েছে।’
নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন মিয়ানমার সরকার সহিংসতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সুচি এই সহিংসতার জন্য রোহিঙ্গাদের দায়ী করেছেন।
২২ বছরের রোহিঙ্গা তরুণ হোসেন জহুর বলেন, ‘মাঝরাতে সেনারা আমার গ্রামে ঢোকে। তারা আমাকে ও আমার পরিবারকে বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে। সেনারা আমাদের মারধর করে এবং অত্যাচার চালায়। একপর্যায়ে আমি পালানোর চেষ্টা করি। কিন্তু এক সেনা আমার দিকে বোমা ছোড়ে। বোমা বিস্ফোরণে আমার হাতের কিছু অংশ উড়ে যায়।’
আঘাত সত্ত্বেও জহুর হেঁটে সীমান্ত পার হন। তিনি এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জহুর বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী আমাদের সঙ্গে কুকুরের মতো আচরণ করে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সেখানে বসবাস করছে। তারপরও সেনারা রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করতে চায়।’

Check Also

এবার গাজার যোদ্ধাদের নেতৃত্ব দেবেন যিনি

ফিলিস্তিনের গাজার স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক শাখার ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন খালেদ মেশাল। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।