ক্রাইমবার্তা রিপোট:বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের প্রথম পরীক্ষা। আমরা আশা করেছিলাম, অন্ততপক্ষে তিনি যে নিরপেক্ষ একজন ব্যক্তি একটা প্রতিষ্ঠানে বসেছেন, তিনি তা দেখাবেন, প্রমাণিত করবেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় তিনি নিরপে নন। তিনি আওয়ামী লীগের হয়েই কাজ করেছেন, সেখানে নিরপেক্ষতার কোনো প্রমাণ রাখেন নাই। কাজেই এই নির্বাচন কমিশনার আর হাসিনা-এরা থাকলে দেশে কখনো সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। কুসিক নির্বাচনে দলের প্রার্থী যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়েছে দাবি করে আগামীতে নির্বাচনী যুদ্ধের জন্য দলকে প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলেন খালেদা জিয়া।
কুমিল্লার নবনির্বাচিত সিটি মেয়র মো: মনিরুল হক সাক্কু গত রাতে সাক্ষাৎ করতে এলে বিএনপি চেয়ারপারসন এসব কথা বলেন। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠান হয়। দলের প্রার্থী সাক্কু ও তার সহধর্মিণী আফরোজা ইয়াসমীন টিকলী বিজয়ের জন্য দলের চেয়ারপারসনের হাতে পুষ্পস্তবক তুলে দেন। তিনি এই বিজয়ের জন্য কুমিল্লার নাগরিকসহ ভোটার ও দলের নেতাকর্মীদের অভিনন্দনও জানান।
গত ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ধানের শীষের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন।
বেগম খালেদা জিয়া সরকারের সমালোচনা করে বলেন, এরা দেশকে ধবংস করে দিয়ে বিদায় নেবে। দেশকে ধ্বংস করার আগেই তাদের বিদায় করার জন্য নিজেদের তৈরি করতে হবে। প্রত্যেক জেলায় জেলায় যদি আমাদের সৈনিকেরা এমনভাবে তৈরি হয়, যে যুদ্ধ সে জিতে এসেছে, তাহলে ইনশাল্লাহ বাকি যুদ্ধেও আমরা বিজয়ী হতে পারব এবং আমরা সফল হবো। সাক্কু যুদ্ধ করে জিতেছে। এই বিজয়ে শুধু আনন্দিত হলে চলবে না, পরবর্তীর জন্য তৈরি হতে হবে। আগামী দিনে যে যুদ্ধ করবেন, তাতে দলকে প্রস্তুত করতে হবে। আমাদের সেজন্য তৈরি হতে হবে।
ধানের শীষের প্রার্থী সাক্কু যুদ্ধ করে জিতেছে মন্তব্য করে সেখানে গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সুষ্ঠু ভোট হলে সাক্কু ১১ হাজার নয়, ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিততো। কাজেই সেখানে সাক্কু যুদ্ধ করে জিতেছে। যেখানে তারা দেখছে যে, একদমই আর কিছু করার উপায় নেই, সেখানে ব্যবধানটা কমিয়ে এটা করেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়, তারপরই হলো বিএনপিকে। বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে, তাহলে তো জনগণ ধানের শীষের পক্ষ ভোটটা দেবে। সে জন্য যেকোনো প্রকারে হোক বিএনপির লোকজনকে নানারকমের মামলা-মোকাদ্দমা দিয়ে, নানাভাবে হয়রানি করে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায়। এখানে তিনি মতা থেকে একচুলও সরতে চান না। মতায় থাকলেও তিনি মতার যে অস্ত্রগুলো আছে- প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী, তার গুণ্ডাবাহিনী, ছাত্রলীগ-যুবলীগ এসবকে ব্যবহার করতে পারবে না। সেজন্য সে সেখান থেকে সরতে চান না। তিনি চান মতায় থেকে নির্বাচন করবেন। কিন্তু মতায় থেকে নির্বাচনে কী হতে পারে, দেশের মানুষের তা ধারণা হয়েছে।
বর্তমান সরকারের কোনো বৈধতা নেই মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার জনগণের ভোটে নয়, তারা অনির্বাচিত, তারা অবৈধ সরকার। তাদের কোনো কাজ করার মতা নেই। কাজেই বুঝতে হবে, আগামী দিনে দেশে গণতন্ত্র আনতে হবে। সেভাবে দলকে তৈরি করতে হবে।
দলের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এবার নবীনদেরকে নিয়ে এসেছি। জেলা কমিটি আপনারা করবেন, সেখানে নবীনদের মূল্যায়ন করবেন, যাতে জেলা কমিটি শক্তিশালী হয়। সাক্কুর সহধর্মিণীর বক্তব্যের প্রশংসা করে কুমিল্লা মহানগর ও জেলা কমিটি সাক্কুর স্ত্রীসহ নবীনদের নিয়ে করার জন্য দলের চেয়ারপারসন পরামর্শ দেন।
নির্বাচনী ভোটকেন্দ্রে এজেন্টদের প্রশিণের ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, লোকজনকে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে ওদের সাথে পারা যাবে না। আমাদের এগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। এটাও খেয়াল রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ কী ষড়যন্ত্র করছে, কৌশল করছে, সেগুলো আমাদেরকে নজর রাখতে হবে, খবর রাখতে হবে। যাতে তার কাউন্টার আমরা করতে পারি, তার চিন্তা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। সেই সাথে যারা দলের বিরুদ্ধে কাজ করবে ও বেঈমানী করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, নবনির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, তার সহধর্মিণী আফরোজা ইয়াসমীন টিকলী, দেিণর সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াসীন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আনোয়ারুল আজীম, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মোস্তাক মিয়া, আবদুল আউয়াল খান, গফুর ভূঁইয়া, মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া, সাহিদুর রহমান তামান্না, কাইয়ুম হক রিংকুসহ কুমিল্লার নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
খালেদার সাথে মালয়েশীয় পার্লামেন্ট প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেছে মালয়েশীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধিদল। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠান হয়। মালয়েশীয় পার্লামেন্টে পিপলস জাস্টিস পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট নূরুল ইজ্জাহ আনোয়ারের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন- শামসুল ইস্কান্দার মোহাম্মদ একিন, মালয়েশিয়া পার্লামেন্টে বিরোধী প্রধান হুইপ দাতো জোহারি আবদুল এবং পিপলস জাস্টিস পার্টির সুপ্রিম কাউন্সিলের নেতা ড. পি মো: নূর মানুতি।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন উপস্থিত ছিলেন।